সিরামিকের রঙিন ভুবন

ছবি:  নকশা
ছবি: নকশা

কাদা মাটিকে নানাভাবে তৈরি করে নেওয়া যায়। কাদামাটি দিয়ে বানানো যায় নানা তৈজস, জিনিসপত্র। সেগুলো হয়ে ওঠে নান্দনিক, শৈল্পিক। আর মাটির ছোঁয়া, সে তো বাড়তি পাওনা। আগুনে পুড়েই তৈরি হয় মাটির জিনিসপত্র। এর একটা ধারা হলো সিরামিক। এখন দেশে তৈরি হচ্ছে সিরামিকের নান্দনিক সব তৈজসপত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে পড়াশোনা শেষে ১৫ বছর আগে রেহানা আক্তার গড়ে তুলেছেন সিরামিকসের প্রতিষ্ঠান ক্লে ইমেজ। মিরপুরে তাঁর কারখানা। উজ্জ্বল রঙে, দেশীয় ঢংয়ে রোজ এখানে তৈরি হয় খাবার টেবিলে সাজানোর তৈজসপত্র থালা, বাটি, মগ, গ্লাস, হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই, কাপ-পিরিচ, জগ এবং অন্দর সজ্জার জিনিসপত্র। গত সপ্তাহে সেই কারখানায় গিয়ে দেখা গেল, তৈজসপত্রে চলছে নান্দনিক নকশা আঁকার কাজ। অনেকটা যেন বাড়ির উঠোনে লোকজ আঁকা আলপনা। বাসনপত্রের গায়ে আঁকা নকশার রঙের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা এবং উজ্জ্বল রঙের বাহার। যত্ন এবং হাতের ছোঁয়ায় বানানো এসব পণ্যের দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে প্রচুর চাহিদা।

সিরামিকের তৈজসপত্রে রঙিন রঙ। কৃতজ্ঞতা: ক্লে ইমেজ। ছবি:  নকশা
সিরামিকের তৈজসপত্রে রঙিন রঙ। কৃতজ্ঞতা: ক্লে ইমেজ। ছবি: নকশা

রেহানা আক্তার বলেন, সিরামিকসের তৈজসপত্র বানাতে প্রয়োজন হয় বিশেষ একধরনের কাদার। তিনি সেটা সংগ্রহ করেন বিভিন্ন সিরামিকস কারখানা থেকে। কারখানাগুলোর ব্যবহার শেষে ফেলে দেওয়া পরিত্যক্ত কাদা সংগ্রহ করে নানা উপায়ে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে সেই কাদার মণ্ড দিয়ে বানান হয় হাঁড়ি, কড়াই, থালা, বাটির কাঠামো। এগুলো বানাতে ব্যবহার করা হয় সিরামিকস রং। এই রঙের আবার রয়েছে দুটো ভাগ অক্সাইড ও স্টেইন। ‘ক্লে ইমেজে’র পণ্য বানাতে এই দুটো রঙেরই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ দুটো রংই পরিবেশবান্ধব।
এরপর পণ্যটির কাঠামোর গায়ে চকচকে ভাব আনতে কিছু দ্রব্যের সমন্বয়ে তৈরি একটি বিশেষ পদার্থের প্রলেপ দিয়ে ধাপে ধাপে পোড়ানো হয়। সিরামিকসের তিনটি মাধ্যমের স্টোন ওয়ার মাধ্যমটি নিয়ে কাজ করেন রেহানা আক্তার। এই মাধ্যম ব্যবহার করে বানানো পণ্যের রং আইভরি বা চাঁপা সাদা রঙের হয়ে থাকে। এগুলো ওজনে একটু ভারী এবং দেখতে একটু মোটা হয়ে থাকে। এগুলো শুরুতে হাতেই তৈরি হয় কুমোরদের কিক হুইলে। পরে পোড়ানো হয়।

ছবি:  নকশা
ছবি: নকশা

সৈয়দা শারমিন আহমেদ শিল্পী নন। কিন্তু চিন্তা–চেতনায় শৈল্পিক। সেটা তাঁর ভাবনার ফল দেখেই বোঝা যায়। দুই-তিন বছর আগে তিনি ভাবছিলেন, রাজধানীতে রেস্তোরাঁ ছাড়া আমাদের কোনো বিনোদন নেই। শিল্প যে একধরনের বিনোদন সেই ভাবনা মাথায় এলে আবু সাঈদ চৌধুরীকে নিয়ে শুরু করলেন সিরামিকের অন্য এক জগৎ। দুজন মিলে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ক্লে স্টেশন’। বনানীর কে ব্লকের ২০ নম্বর রোডের ২৮ নম্বর বাড়িতে শুধু তাঁদের সিরামিকের পণ্যই বিক্রি হয় না; সেখানে যে কেউ গিয়ে নিজ হাতে গড়ে নিতে পারেন নিজের জন্য পণ্য।

ছবি:  নকশা
ছবি: নকশা

ক্লে স্টেশন মূলত একটি পটারি স্টুডিও। পট শিল্পচর্চায় মেধার বিকাশ হয়, এমনটা জেনেই ছোট-বড় সব বয়সীর জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ক্লে স্টেশন। সেখানে আছেন দুজন শিল্পী। তাঁরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন সিরামিকের পণ্য তৈরিতে। জনপ্রতি ৬০০ টাকা খরচ করে যা খুশি তা–ই বানাতে পারেন। সাহায্য করবেন শিল্পী ও তাঁদের সহযোগীরা। চাকার সাহায্যে যেসব পণ্য তৈরি করতে হবে, সেগুলোর জন্য আবার ৮০০ টাকা গুনতে হবে। আর সিরামিকের এসব পণ্য তৈরি হয়ে গেলে পোড়াতে হয়। প্রতিটি পণ্য পোড়াতে ২০০ টাকা খরচ হবে। এরপর তো ওই পণ্য আপনারই।

ছবি:  নকশা
ছবি: নকশা

বুটিকের আদলে আলাদা দোকান রয়েছে ক্লে স্টেশনে। সেখান থেকে তৈরি পণ্য কিনে নিতে পারেন। ৪৫০ থেকে ৫০০০ টাকার পণ্য মিলবে। সৈয়দা শারমিন আহমেদ বলেন, ‘মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করেন তাঁরা। কাপ-পিরিচ, বাসন-কোসন থেকে শুরু করে মগ, শোপিস, এমনকি চায়ের ছাঁকনি পর্যন্ত কেনা যাবে সেখান থেকে। দুজন শিল্পী আর পাঁচজন সহযোগী মিলে এই ক্লে স্টেশনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্লে ইমেজের নান্দনিক জিনিসপত্রের দরদামও হাতের নাগালেই। আকার ও নকশাভেদে এগুলো কিনতে চাইলে দাম পগবে কড়াই, বাটি ২৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৭০০ টাকা। প্লেট ২৫০-১০০০ টাকা এবং মগ ১৫০-৩০০ টাকার মধ্যেই কেনা যাবে।
আড়ংয়ের আছে সিরামিক পণ্যের বড় সংগ্রহ। নতুন নতুন ডিজাইনে সব শাখাতেই পাওয়া যায় সিরামিকের তৈজসপত্র আর ঘর সাজানোর পণ্য।
এসবের বাইরে রাজধানীর গুলশান ১–এর ডিসিসি মার্কেট, গুলশান–২ মার্কেট, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে কারুপণ্যের দোকানে পাওয়া যায় সিরামিকের পণ্য।