হার মেনেছে রূপকথাও

পাশ্চাত্যধারায় বর–কনের সাজে নিক জোনাস ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ছবি: সংগৃহীত
পাশ্চাত্যধারায় বর–কনের সাজে নিক জোনাস ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ছবি: সংগৃহীত

‘রূপকথার মতো বিয়ে’—এটা বললে ভুল হবে। কারণ বিয়েটা ছিল রূপকথার চেয়ে রঙিন আর রাজসিক। সেই বিয়ের রেশ আজ ১০–১২ দিন পর এসেও কাটছে না। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও নিক জোনাসের বিয়েকে ঘিরে এখনো কত গল্প, কত কথা চলছে তো চলছেই। আজ কথা হোক বিয়ের সাজ, পোশাক আর গয়না নিয়ে।

রাজকুমার-রাজকন্যার বিয়ে
খ্রিষ্টরীতিতে নিক জোনাস ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বিয়ে হয় ১ ডিসেম্বর। সেদিন পিসি পরেন বিশ্বখ্যাত ডিজাইনার রাল্ফ লরেনের নকশা করা সাদা গাউন। আর সেই গাউনের ঝালর ছিল ৭৫ ফুট লম্বা। রূপকথা রাজকন্যারা যেমন ভুবন কাঁপিয়ে, ঝালর উড়িয়ে আসে বিয়ের আসরে, প্রিয়াঙ্কারটাও ঠিক তেমনই ছিল। রাল্ফ লরেন শুধু প্রিয়াঙ্কা ও নিক জোনাসের জন্য রীতিমতো ইতিহাস সৃষ্টি করে নকশা করেছেন এ বিয়ের পোশাক। বিশ্বখ্যাত এই ডিজাইনারের নকশা করা এটা তৃতীয় বিয়ের গাউন। এর আগে শুধু নিজের মেয়ে ও ছেলের বউয়ের জন্যই বিয়ের পোশাক নকশা করেছিলেন রাল্ফ লরেন। আর পিসি-নিকের জন্য কেন ইতিহাস গড়বেন না রাল্ফ, তাঁর নকশা পরা পোশাক গায়েই তো প্রথমবার চোখাচোখি হয়েছিল এই নবদম্পতির।
খ্রিষ্টরীতির এ বিয়ের পোশাকের আরও অনেক খুঁটিনাটি অবাক করা তথ্য এখন ভাসছে ইন্টারনেটে। নিক জোনাসের স্যুটের বুকের কাছে রাল্ফ লরেন নাকি উর্দুতে সেঁটে দিয়েছেন ‘মাই জান’ লেখা কোট। আর প্রিয়াঙ্কার গাউনে লেখা ছিল নিক জোনাসের নাম, প্রিয়াঙ্কার বাবা ও মায়ের নাম, সংস্কৃত ভাষার কিছু শব্দ, ‘ফ্যামিলি’, ‘লাভ’। পুরো গাউন বানাতে সময় লেগেছে এক হাজার ৮২৬ ঘণ্টা। লাগানো হয়েছে ২৩ লাখ ৮০ হাজার মুক্তা। প্রিয়াঙ্কা যে লম্বা ঝালরওয়ালা গাউনটি পরেছেন, তাঁর ভেতরের একটি অংশ নেওয়া হয়েছে নিকের মায়ের বিয়ের গাউন থেকে।

মেহেদির অনুষ্ঠানে প্রিয়াংকা ও নিক
মেহেদির অনুষ্ঠানে প্রিয়াংকা ও নিক

মেহেদির রঙিন লেহেঙ্গা
প্রিয়াঙ্কা ও নিকের বিয়ের উৎসবের প্রথম ছবিটি প্রকাশ পায় ১ ডিসেম্বর। সেই থেকে শুরু হয় হইচই। প্রথম দিন নিকইয়াঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁদের মেহেদি অনুষ্ঠানের ছবি। এতে দেখা যায়, প্রিয়াঙ্কার পরনে আবু জানি সন্দ্বীপ খোসলার নকশা করা লেহেঙ্গা। এই লেহেঙ্গার আছে বিশেষত্ব। লেহেঙ্গার ঘের বাড়ানোর জন্য এতে ৪৮টি কলি যোগ করা হয়েছে। রাজস্থানের বিশেষায়িত এই লেহেঙ্গার নাম তাই কলিদার। রঙের কোনো কমতি ছিল না মেহেদি অনুষ্ঠানের পোশাকে, সাজে আর গয়না। আর ওদিকে নিক। তাঁকেও উপমহাদেশীয় পাঞ্জাবি-চুড়িদারে মানিয়েছিল বেশ।

বিয়ের আরও একটি গাউন
১ ডিসেম্বর খ্রিষ্টরীতিতে বিয়ের পর প্রিয়াঙ্কা ও নিক জোনাস সেদিন রাতে জমকালো দাওয়াতের আয়োজন করেন। সেখানে রাল্ফ লরেনেরই নকশা করা আরেকটি সাদা গাউন পরেন প্রিয়াঙ্কা। আর নিক পরেন ডাবল ব্রেস্টেড টাক্সেডো। মূল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার জন্য রাল্ফ প্রিয়াঙ্কাকে ফুলহাতা ও গলা উঁচু গাউন নকশা করে দিয়েছিলেন। রাতের দাওয়াতের জন্য রাল্ফ খুব হালকা নকশার স্ট্র্যাপ লেস গাউন নকশা করেন। সেই গাউনের কাঁধ বেয়ে দেখা যায় হীরা বসানো কয়েক লহর ঝুল নেমে গেছে প্রিয়াঙ্কার।

ভারতীয় রীতির বিয়ের দুজনেই পরেছিলেন ডিজাইনার সব্যসাচীর পোশাক
ভারতীয় রীতির বিয়ের দুজনেই পরেছিলেন ডিজাইনার সব্যসাচীর পোশাক

সংগীতসন্ধ্যায় শাড়ি-শেরওয়ানি
প্রিয়াঙ্কা-নিকের বিয়ের সংগীতসন্ধ্যা কোনো তারকাবহুল কনসার্টের চেয়ে কম ছিল না। তাঁদের দুই পরিবারে তো আর তারকার কমতি নেই। সব এক হলে সেটা একটা ‘অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানের চেয়েও জমকালো হয়ে ওঠার কথা। তা-ই হয়েছে। তবে তাই বলে বর আর বউয়ের ওপর থেকে নজর সরেনি কারও। মেহেদির মতো সংগীত উৎসবেও তাঁরা পরেছিলেন আবু জানি সন্দ্বীপ খোসলার নকশা করা পোশাক। রাতের আয়োজন হওয়ায় প্রিয়াঙ্কা বেছে নেন পাথরের কাজ করা ছাইরঙা শাড়ি। আর গলায় ছিল ভারী হীরার গয়না। বর নিকও পরেছিলেন আবু জানি সন্দ্বীপ খোসলার নকশা করা নীলরঙা শেরওয়ানি। তাতে ছিল নীল রঙের সুতা দিয়েই ঘন কাজ করা।

লাল-সোনালির মিশে যাওয়া
২ ডিসেম্বর প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও নিক জোনাসের হিন্দুরীতির বিয়ে হয়। সেদিন প্রিয়াঙ্কা একেবারে পশ্চিমা রাজকন্যার সাজ থেকে বেরিয়ে উপমহাদেশীয় রাজ–রানির রূপ ধারণ করেন। ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির নকশা করা লেহেঙ্গা পরেন সাবেক এ বিশ্বসুন্দরী। লেহেঙ্গাটি বানাতে ১১০ জন শিল্পীর তিন হাজার ৭২০ ঘণ্টা লেগেছে। আর তাঁর ভিনদেশি তারকা বড় নিক জোনাস একই ডিজাইনারের নকশা করা সোনালি শেরওয়ানি পরেন। প্রিয়াঙ্কা এদিনও লম্বা ঝালরওয়ালা লাল ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ঢোকেন বিয়ের মণ্ডপে। ওড়না ওঠাতেই দেখা যায় ভারী গয়নায় ঢাকা প্রিয়াঙ্কার গলা, কান ও সিঁথি। হিন্দুরীতির বিয়েতে প্রিয়াঙ্কা পরেছিলেন শপার্ড নেকলেস। যাতে বসানো ছিল ১৮৪ দশমিক ৫ ক্যারেটের পিয়ার-শেপড হীরা। আর কপালে ছিল ১৬ ক্যারেটের টিকলি।