নতুন রূপে ইন্টারকন্টিনেন্টাল

৩৫ বছর পর আবারও চালু হয়েছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা। ছবি: সাজিদ হোসেন
৩৫ বছর পর আবারও চালু হয়েছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা। ছবি: সাজিদ হোসেন

নতুন রূপে ঢাকায় আবারও যাত্রা শুরু করল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শুরুতে সীমিত পরিসরে এ হোটেলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

হোটেলটি ঘুরে দেখা যায়, মূল ভবন বাদে হোটেলটির খোলনলচে বদলে ফেলা হয়েছে। তাতে বদলে গেছে এর নকশা থেকে শুরু করে সাজসজ্জা, থাকার কক্ষ, রেস্তোরাঁ, হলরুমের অবয়ব। এমনকি প্রবেশপথও।

আগে যেখানে হোটেলটির গ্র্যান্ড বলরুম ছিল, সেখানে এখন গড়ে তোলা হয়েছে সুবিশাল এলিমেন্টস রেস্তোরাঁ। এ যেন একের ভেতরে পাঁচ। খোলামেলা সুসজ্জিত এ রেস্তোরাঁ রয়েছে ইতালি, ভারতীয়, কন্টিনেন্টাল, প্যান এশিয়ান ও জাপানি নানা ধরনের খাবারের বিশাল আয়োজন। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এ রেস্তোঁরার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, গ্রাহকের পছন্দের খাবারটি তৈরি হবে গ্রাহকের সামনেই। রান্নাঘর গ্রাহকের সামনে উন্মুক্ত করা হয়েছে।

এলিমেন্টস ছাড়াও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের অভ্যন্তরে রয়েছে ছোট–বড় আরও চারটি রেস্তোরাঁ। এর মধ্যে আছে স্টেক ও সি ফুডের জন্য অ্যামবার রুম নামে বিশেষ একটি রেস্তোরাঁ। এ রেস্তোরাঁ চালু হবে আরও চার–পাঁচ মাস সময় লাগবে। শুধু এ রেস্তোরাঁর জন্যই থাকবে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ রন্ধনশিল্পী। এ ছাড়া রয়েছে সুইমিং পুলাসংলগ্ন অ্যাকুয়াডেক, নিচতলায় ক্যাফে সোশ্যাল এবং ওপাস বার ও রেস্তোরাঁ।

স্থানান্তর হয়ে গেছে হোটেলটির সুইমিংপুলও। নিচতলা থেকে সরিয়ে এটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দোতলায়। যেখানে পুলের নীলজলে শরীর ডুবিয়ে দেখা যাবে খোলা আকাশ ও রমনা পার্কের গাঢ় সবুজ। সুইমিংপুলের পাশে সুপরিসর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে স্পা কর্নার।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপণন ও যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক সাদিকুস সাদিক বলেন, স্পা কর্নারটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ। তবে এটি চালু করতে আরও বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে।

হোটেলটি সম্পূর্ণ নতুনভাবেই তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আসবাবপত্র, নকশা ও সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করা হয়েছে এতে। এ কারণে হোটেলটি ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী—জানালেন সাদিকুস সাদিক। হোটেলের অতিথিকক্ষে সূর্যের তাপ যাতে খুব বেশি প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা রয়েছে। এতে করে শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহার হবে কম। আবার প্রতিটি কক্ষে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে রুম থেকে অতিথি বের হয়ে যাওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে শীতাতপ যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে। আবার অতিথি কক্ষে প্রবেশের পর তার শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে সংগতি রেখে শীতাতপ যন্ত্রটি ঠান্ডা বাতাস ছড়াবে।

এক নজরে

রাজধানীর শাহবাগে প্রায় সাড়ে ৪ একর জমির ওপর অবস্থিত হোটেলটি চালু হয় ১৯৬৬ সালে। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ১৯৮৪ সাল থেকে যুক্ত হয় শেরাটন কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালে শেরাটন চলে যাওয়ার পর সরকারি উদ্যোগে রূপসী বাংলা নামে এটি পরিচালিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে চার বছর সংস্কারকাজ চলে। চলতি মাস থকে চালু হলো ইন্টারকন্টিনেন্টাল। গত সেপ্টেম্বরে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। হোটেলটির প্রতিটি অতিথি কক্ষের আয়তন আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন কক্ষসংখ্যা ২২৬টি। হোটেলটির মূল মালিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের সঙ্গে ২০১২ সালে চুক্তিবদ্ধ হয় ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রুপ। চুক্তি অনুযায়ী, ৩০ বছর এটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল।