দেশ ঘোরায় আসমার সেঞ্চুরি

আজারবাইজান
আজারবাইজান

শততম দেশে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে কয়েক দিন আগে দেশে ফিরেছেন কাজী আসমা আজমেরী। এই নারী পরিব্রাজকের লক্ষ্য ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে ১০০টি দেশ ভ্রমণ করা। গত ২৯ অক্টোবর তুর্কমেনিস্তানে পৌঁছে সেই লক্ষ্য ছুঁয়েছেন তিনি।
কাজী আসমা আজমেরীর স্বপ্নপূরণের দলিল হয়ে থাকল ছুটির দিনে। কারণ, গত ৫ মে ‘আসমা ঘুরেছেন ৮৯ দেশ’ শিরোনামে তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ছুটির দিনেতে। তখন ফিরে এসেছিলেন ঢাকায়। এরপর ফিলিপাইন ভ্রমণের মাধ্যমে লক্ষ্যপূরণের সে যাত্রার শুরু করেছিলেন আজমেরী।

মঙ্গোলিয়ায়
মঙ্গোলিয়ায়

ফিলিপাইন থেকে মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কানাডা, বেলারুশ, জর্জিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান হয়ে তুর্কমেনিস্তান পৌঁছে শত দেশ ভ্রমণের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি।
দেশ ঘোরায় সেঞ্চুরি করার উচ্ছ্বাস এখনো তাঁর কণ্ঠে। ১০ ডিসেম্বর কথায় কথায় শোনালেন ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। তারই একটি ট্রান্স মঙ্গোলিয়ান ট্রেন ভ্রমণ। এ যাত্রায় চীনের বেইজিং থেকে বেলারুশে পৌঁছেছেন। পাড়ি দিয়েছেন ২০ হাজার কিলোমিটার পথ। বললেন, ‘আবারও সে পথে যেতে চাই।’
খুলনার মেয়ে কাজী আসমা আজমেরীর পরিব্রাজক জীবনের শুরু ২০০৮ সালে। তবে মনে মনে একা ঘোরার ইচ্ছেপাখিটা সযতনে পুষতেন ছোটবেলা থেকেই। দেশের বিভিন্ন জায়গা চষে বেড়িয়েছেন। একসময় পড়াশোনা শেষ করে চাকরি শুরু করেন। ইচ্ছেপূরণের শুরু তখনই।
আসমা বলছিলেন, ‘ছোটবেলায় ইবনে বতুতার রোমাঞ্চকর ভ্রমণকাহিনি পড়ে কল্পনায় নিজেকে তাঁর জায়গায় ভাবতাম। কিন্তু চাইলেই তো বেরিয়ে পড়া যায় না। তাই অপেক্ষায় ছিলাম নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার। যখনই তা হলাম, তখনই নিজের স্বপ্নপূরণের যাত্রায় পা বাড়ালাম।’ তবে তারও আগে থাইল্যান্ডে গেছেন একবার, ২০০৭ সালের সে ভ্রমণে পরিবারের সঙ্গে ছিলেন বলে তাঁর একা ভ্রমণতালিকায় জায়গা দিতে চান না।

চীনের মহাপ্রাচীরে দাঁড়িয়ে কাজী আসমা আজমেরী
চীনের মহাপ্রাচীরে দাঁড়িয়ে কাজী আসমা আজমেরী

পুরোদস্তুর পর্যটকজীবনের শুরু ২০০৯ সালে। সে বছর দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, নেপাল, ভুটানসহ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় পা রাখেন। ২০১০ সালে ঘোরেন মিসর, মরক্কো, তুরস্ক, চীন, ফ্রান্স, ব্রুনেই, বেলজিয়ামসহ ১১টি দেশ। এভাবেই শুরু। সর্বশেষ ২০১৭ সালে গেছেন কিউবায়। সবচেয়ে বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন ২০১৬ সালে। সেবার ঘুরে বেড়িয়েছেন আরব ও ইউরোপের ১৯টি দেশ।
আসমা সব দেশেই ঘুরেছেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে। তাঁর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুর্কমেনিস্তানের জাতীয় টেলিভিশন প্রচার করেছে। সেখানে বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং তুর্কমেনিস্তানের সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলেন আসমা। তিনি বললেন, ‘১০০ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক আমার একার জয় নয়। এটি পুরো বাংলাদেশের জয়, বাংলাদেশি নারীদের জয়। ভিনদেশে কেউ যখন আমার নাম মনে রাখতে না পেরে “হাই বাংলাদেশ” নামেই ডাকে। এই ডাক যে আমি কত উপভোগ করি, তা তো বোঝাতে পারব না।’
কাজী আসমা আজমেরী কাজ করেছেন নিউজিল্যান্ড রেড ক্রসে। সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে।

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্স বাসিলিকা চার্চের সামনে
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্স বাসিলিকা চার্চের সামনে

ভ্রমণের সময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট হওয়ার কারণে অনেক সময় ভিসা জটিলতায় পড়তে হয়। আজমেরী বলেন, ‘আমি ভ্রমণের সময় ভিনদেশি মানুষদের বলি, বাংলাদেশিরা যেমন কাজের উদ্দেশে তোমাদের দেশে আসে, তেমনি ভ্রমণের জন্যও।’
খুলনায় জন্ম কাজী আসমা আজমেরীর। কাজী গোলাম কিবরিয়া ও কাজী সাহিদা আহমেদের দুই সন্তানের মধ্যে আজমেরী বড়। তিনি বড় ইকবালনগর গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপণনে বিবিএ ডিগ্রি নেন। একই বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেন এমবিএ ।
ভবিষ্যতের কথা বলেন আজমেরী, ‘আপাতত কোথাও যাচ্ছি না। টানা ভ্রমণ করেছি, বিশ্রাম নিতে চাই কিছুদিন। তা ছাড়া ভ্রমণ করতে তো কিছু পুঁজির প্রয়োজন আছে। তাই এখন সামনের দিনের জন্য সঞ্চয়ও তো করতে হবে। তখন বেরোব নতুন কোনো দেশের নতুন কোনো পথে।’

দেশীয় হোটেলের পুরস্কার জয়
ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রাভেল অ্যান্ড হসপিটালিটি অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ পেয়েছে ঢাকার হোটেল গ্রেস ২১ স্মার্ট হোটেল। বাংলাদেশের ‘বেস্ট বুটিক হোটেল অব দ্য ইয়ার ২০১৮’ পেয়েছে নিকুঞ্জের এই তারকা হোটেল। বাংলাদেশ থেকে আরও চারটি হোটেলকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে স্কাই সিটি হোটেল ঢাকা, এক্সিলেন্স ইন সার্ভিস ক্যাটাগরিতে হোটেল নুর জাহান গ্রান্ড, অ্যাফোর্ডেবল হোটেল হিসেবে হলিডে এক্সপ্রেস ও স্টাইলিশ হোটেল হিসেবে পুরস্কার জিতেছে হোটেল সুপ্রিম। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের সেরা হোটেল ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেয় ট্রাভেল অ্যান্ড হসপিটালিটি অ্যাওয়ার্ড ওয়েবসাইট।