সুখপাখির ঠিকানা

সুখ আসলে কী—অনেকেই জীবনভর খুঁজে এর ঠিকানা পায় না। আবার কেউ না চাইতেই তার ঘরে সুখ এসে ধরা দেয়। তবে সুখ সব মানুষেরই পরম আকাঙ্ক্ষার বিষয়। আর তাই সবাই সুখী হতে চায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বলেছেন, তাঁরা সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে সুখপাখি খুব সহজ জিনিস নয়। অনেকের কাছেই সুখের খোঁজ করাটা অক্লান্ত যাত্রার মতো। যতই আপনি সুখের সন্ধান করতে থাকবেন, সুখ আপনাকে ছেড়ে ততই পালাবে।

সুখের বিপরীতে তখন আপনার কাছে একাকিত্ব, মানসিক চাপ আর ব্যক্তিগত ব্যর্থতা এসে জমা হতে থাকবে। তাই সুখের বিষয়টিকে ভিতু পাখির সঙ্গে তুলনা করা যায়। যতই আপনি তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, সে ততই উড়ে পালিয়ে যাবে।

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিষয়ের মাধ্যমে অনেকের জন্মদিন বা নতুন বছরের মতো বিশেষ মুহূর্তগুলো নিয়ে মানসিক অস্থিরতা ও হতাশার বিষয়টিকে সহজে ব্যাখ্যা করা যায়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দীর্ঘ মেয়াদে ভালো থাকার ক্ষেত্রে গভীর ফলাফলের বিষয়টি দেখা গেছে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের গবেষক আইরিস মাশ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দশক ধরে প্রকাশিত ভালো থাকাবিষয়ক নানা বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তিনি। অনেক বইয়ে সুখকে অস্তিত্বের অপরিহার্য শর্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যখন এসব বই পড়া হয়, তখন সুখ কীভাবে আপনার জন্য ভালো করে, সে বিষয়ে জানতে পারেন। এর বাইরে নিজেকে কীভাবে সুখী করবেন, সে বিষয়ে বলা হয়ে থাকে। এতে নিজেকে সুখী করে তোলা কর্তব্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু তাতে কি মানুষের মধ্যে আরও হতাশা বাড়ছে?

গবেষকেরা বলেন, মানুষ নিজের সুখের আশায় বা সুখের স্তরে পৌঁছানোর জন্য একটি উঁচু মান ধরে নেয় এবং মনে করে, তারা সব সময় সুখী হবে। কিন্তু এর বিপরীতে তারা আরও বেশি হতাশ হয়। ধরে নেওয়া সুখের মানের কাছাকাছি তারা পৌঁছাতে না পারলে নিজের কাছে পরাজিত বলে ধরে নেয়।

গবেষক মাশ বলেন, অনেক গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা নেতিবাচক অনুভূতির সঙ্গে লড়াইয়ের পরিবর্তে এর প্রতি গ্রহণযোগ্য মনোভাব দেখান, তাঁরা দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের জীবনে সন্তুষ্টি দেখাতে পারেন। আপনি যখন সুখের জন্য লড়াই করতে থাকেন, তখন আপনি নিজেই বিচারকের আসনে থেকে জীবনের নেতিবাচক অনুভূতিগুলো অগ্রহণযোগ্য করে তোলেন। ওই অনুভূতিগুলোর জন্য নিজেকে খারাপ মান দিয়ে সুখের জন্য অগ্রহণযোগ্য বলে রায় দেন।

গবেষক মাশ বলেন, সুখী হতে জীবনের সুখ ও দুঃখের প্রতি নির্বিকার মনোভাব দেখানো উচিত। নেতিবাচক অনুভূতিগুলো পুরোপুরি মুছে ফেলার পরিবর্তে সেগুলোকে ছুটে চলা ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করাই শ্রেয়। অন্যদের প্রতি দয়া দেখানো, কৃতজ্ঞতাবোধ আপনার ভালো লাগার অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দেবে। তবে খুব বেশি প্রত্যাশা করা, দ্রুত সুখের শিখরে পৌঁছে যাওয়ার জন্য নিজের অনুভূতিকে সব সময় প্রশ্নে জর্জরিত করা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, সুখ হলো ভিতু প্রাণী। যখন এর পিছু ধাওয়া বন্ধ করবেন, তখনই এটা নিজে থেকেই আপনার কাছে ধরা দেবে।