এ বছর ফিরবে সত্তরের স্টাইল

সরাসরি সবুজ নয়, সবুজেরই নানা শেড বেশি দেখা যাবে ছেলেদের পোশাকে
সরাসরি সবুজ নয়, সবুজেরই নানা শেড বেশি দেখা যাবে ছেলেদের পোশাকে

ফ্যাশনে ছেলেদের পোশাক নিয়ে তো কম নিরীক্ষা হচ্ছে না। প্রতিবছর কিছু না কিছু যুক্ত হচ্ছে। আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে কোথায় কী চলছে, সেটা সহজেই জানা যায়। আন্তর্জাতিকভাবে যেসব ফ্যাশন ব্র্যান্ড বেশি জনপ্রিয়, তারা প্রতিবছর ফ্যাশনের নতুন নতুন ধারা তৈরি করে। সাধারণত আমাদের দেশে সেই ধারা এক বছর পর দেখা যায়। তবে এই দূরত্ব আরও কমে এসেছে। ২০১৯ সালের ফ্যাশন বা স্টাইল নিয়ে তো আরও ছয় মাস আগে থেকেই কাজ চলছে। অনেকের মনই কৌতূহলী, কী আসছে নতুন বছরে?

তাদের জন্য বলে রাখা ভালো, ছেলেদের ফ্যাশনে এ বছরের পুরোটা সময় দাপিয়ে বেড়াবে সত্তর দশকের ফ্যাশন আর স্টাইল। সত্তর দশকে বনেদি পরিবারের পুরুষদের প্রধান আকর্ষণ ছিল তৈরি করে নেওয়া পোশাকে। সেই ‘টেইলারিং’ অর্থাৎ মাপমতো বানিয়ে নেওয়া পোশাক এবার বড় জায়গা দখল করে নেবে ছেলেদের ফ্যাশনে। অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও এই ধারা বেশ বড়সড় আকারে দেখা যাবে। বাংলাদেশের অনেক জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাই ‘টেইলরিং’ অংশ যুক্ত করছে তাদের বুটিকের সঙ্গে।

আমাদের দেশের পোশাকও এখন আন্তর্জাতিক ধারার সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি হয়। আর এই মেলানোর প্রচলনটা বেশি দেখা যায় শীতের সময়। গরমে কিছুটা কম। তবে গরমের সময়েও টি–শার্ট জাতীয় পোশাক মিলিয়ে তৈরি হয়। এখন যেমন আন্তর্জাতিক ফ্যাশনে ছেলেদের সুটে ডাবল ব্রেস্ট প্লেট খুব চলবে। একই সঙ্গে চেকের নকশা এখন ঢুকে গেছে পুরোপুরি। আজকাল নানা ধরনের মোটিফ দেখা যায় ছেলেদের পোশাকে। পোশাকে যেসব মোটিফের সঙ্গে আমাদের দেশের ডিজাইনাররা খুব কম পরিচিত ছিল। কুমির, বিড়াল, প্রজাপতি, বাঘসহ নানা রকম পশুপাখি, ফুল ইত্যাদি। যেটা সাধারণত চীন বা জাপানের মতো দেশে দেখা যেত। অথচ এসব মোটিফ নিয়ে এখন বিশ্বের বড় বড় সব পোশাক প্রতিষ্ঠানই নকশা করছে। এর মূলে একটি অঞ্চল বা দেশের ‘ডমিনেটিং পাওয়ার’ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। যেমন অর্থনৈতিক শক্তি (নিউ মানি) হিসেবে চীনকে এখন সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে অধিকাংশ দেশ। তাই পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো সেই দেশের বাজার দখলে তাদের মোটিফকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে কাজ করছে। ফ্যাশনের ভূগোলে অর্থনীতি ও রাজনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

পোশাকে নানা ধরনের প্রকৃতি ও প্রাণীর নকশার প্রভাব থাকবে বছরজুড়ে। মডেল: রাজ ম্যানিয়া, পোশাক: ওটু, ছবি: নকশা
পোশাকে নানা ধরনের প্রকৃতি ও প্রাণীর নকশার প্রভাব থাকবে বছরজুড়ে। মডেল: রাজ ম্যানিয়া, পোশাক: ওটু, ছবি: নকশা

ছেলেদের পোশাকে রং খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক। গত বছর যেমন বেশি চলেছে সবুজ রং। এবারও সেখানে থেকে খুব বেশি সরেনি। এবার সবুজেরই নানা শেড বেশি দেখা যাবে পোশাকে। এর মধ্যে বটল গ্রিন, অলিভ গ্রিন, সি গ্রিন, লিফ গ্রিন, টার্টেল গ্রিন, লাইম গ্রিন, ডার্ক গ্রিন, ফরেস্ট গ্রিন ইত্যাদি থাকবে। এর বাইরে যে রংই ব্যবহৃত হোক, সেটা সরাসরি না করে, তার একটি শেড বেছে নিয়ে তৈরি হবে।

পাঞ্জাবির সঙ্গে কটির চল এবারও থাকবে
পাঞ্জাবির সঙ্গে কটির চল এবারও থাকবে

বিশ্বের বেশ কিছু ব্র্যান্ড যেমন লম্বা পোশাকের ধারণা নিয়ে এগোচ্ছে, কিছু ব্র্যান্ড আবার এগোচ্ছে খাটো থেকে খাটোর দিকে। আমাদের দেশেও পাঞ্জাবিতে পাশপাশি দুটি ধারা চলছে। একটি লম্বা আর ঢিলেঢালা, আরেকটা হচ্ছে খাটো ও ফিটিং। পাঞ্জাবির সঙ্গে কটির ধারা এবারও থাকবে। শার্টের সঙ্গেও পরা হবে কটি। তবে পাঞ্জাবির প্যাটার্নে থাকবে পরিবর্তন। টি–শার্ট ও শার্টের নকশায় তেমন কোনো পরিবর্তন নেই এ বছর। গত বছরের ধারাতেই পশুপাখির প্রিন্ট চলবে। তবে শার্ট বা টি–শার্টের কাপড় নিয়ে নানা ধরনের নিরীক্ষা চলবে বছরজুড়ে। শীতে কতটা মোটা করা যায় এবং গরমে তা কতটা আরামদায়ক হবে—এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলবে। এর একটি পরিবর্তনও দেখা যাবে পোশাকে।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এবার ছেলেদের ফ্যাশনে বেশি গুরুত্ব পাবে জুতা। আমাদের দেশি চামড়া দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব জুতা। শুধু চামড়ার জুতা নয়, কাপড় বা মখমলের মতো আরও নানা উপকরণে জুতা তৈরি হচ্ছে। মখমলের ওপর জরদৌসি কাজ করে জুতার জমকালো ভাব আনা হচ্ছে। প্যান্টের কাপড় ওয়াশ করে রং হালকা বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। জিনস বা গ্যাবার্ডিনের কাপড়ে হচ্ছে নানা রকম ওয়াশ। নরম আর আরামদায়ক প্যান্ট চলবে পুরো বছর। আরেকটি পরিবর্তন বেশ চোখে পড়বে, সেটা ছেলেদের ব্যাগে। ওয়ালেট বা মানিব্যাগ নয়, এই ব্যাগ মানে হাতব্যাগ। মাঝারি আকারের এই ব্যাগ হাতে ছাড়াও কাঁধ থেকে পেছনে ঝুলিয়ে নেওয়া যাবে।

লেখক: ফ্যাশন পরামর্শক, ওটু