পাঠকের প্রশ্ন: মন

পাঠকের কাছ থেকে সন্তান পালন, মনোজগৎ ও ব্যক্তিজীবনের সমস্যা নিয়ে পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে নানা রকমের প্রশ্ন এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম নির্বাচিত দুটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

* আমি একটি মেয়েকে ভালোবাসি। আমাদের সম্পর্ক প্রায় তিন বছর হলেও ভালোবাসার মানুষকে যে কথা বলে মনের তৃপ্তি দিতে হয়, সে তা পারে না। আমরা প্রতিদিন মাত্র ১৫-২০ মিনিট কথা বলতে পারি। আর দেখা হচ্ছে না প্রায় আট–নয় মাস। কিছুদিন ধরে আমার মনে হচ্ছে, সে আমাকে ভালোবাসে না। এই অবস্থায় আমার কী করা উচিত?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

# তোমাদের সম্পর্কটি তিন বছর ধরে চলছে এবং প্রতিদিন তোমরা কিছু সময় কথা বলছ জেনে মনে হচ্ছে, সম্পর্কটির মধ্যে ইতিবাচক দিক নিশ্চয়ই রয়েছে। তবে ফোন করার ক্ষেত্রে কার আগ্রহ বেশি রয়েছে, সীমিত সময় কথা বলার বা দেখা না হওয়ার পেছনে কারণগুলো কী, তা জানতে পারিনি। মেয়েটি কি তোমার সঙ্গে এখন আর দেখা করতে চাইছে না? তুমি লিখেছ, তার কথার ধরন তোমাকে তৃপ্ত করছে না। তুমি কি তার সঙ্গে সহমর্মিতা দেখাচ্ছ? ওর মনকে স্পর্শ করে এমন কিছু কথা বলছ, নাকি সম্পর্কের অবনতির জন্য ওকেই দায়ী করছ। একটি সম্পর্কে তো দুটো মানুষকেই একইভাবে অবদান রাখতে হয়। পরস্পরের খুব ভালো বন্ধুও হতে হয়। ওর দিক থেকে যদি আবেগের প্রকাশ কমে গিয়ে থাকে, তাহলে তুমি তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারো, সে এই সম্পর্কটি এখন কীভাবে দেখছে। ওকে কোনো রকম দোষারোপ না করে তুমি যা ভাবছ এবং অনুভব করছ, তা ওকে বুঝতে সাহায্য করো। দেখা করে তোমরা খোলাখুলি আলোচনা করে দুজনেই বুঝতে চেষ্টা করো একজন অন্যজনকে আগের মতোই ভালোবাসছ কি না বা সম্পর্কের গুণগত মানটিতে কোনো পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হচ্ছে কি না। সেটি হয়ে থাকলে তোমাদের কী করণীয়, তা নিয়ে খুব সততা ও বস্তুনিষ্ঠভাবে দুজনেই নিজস্ব মতামত প্রকাশ করে ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করো।

*আমি আসলে মানসিক দিক দিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমার বিয়ে হয়েছে আজ থেকে ৯ বছর আগে। আমার স্বামী আর আমি দুজনেই সরকারি চাকরিজীবী। আমার এক ছেলে আর এক মেয়ে। সমস্যা হলো বিয়ের দুদিন পর জানতে পারি, আমার স্বামীর সঙ্গে আমার বিয়ের আগে অনেক বছর ধরে একটি ভিন্নধর্মালম্বী মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক চলছে। সেই মহিলা বিবাহিত আর তাঁর দুই বাচ্চা। আমার বিয়ের পরও ওদের সম্পর্কটা ওরা চালিয়ে গেছে। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে খুব অশান্তি হতো। সম্প্রতি আমি মহিলার সঙ্গে কথা বলেছি এবং তিনি সব স্বীকার করেছেন। কিন্তু আমার স্বামীকে আমি এখন বিশ্বাস করতে পারছি না। কারণ, আমি ওর মোবাইলে দেখেছি, এখনো দুজনের মধ্যে প্রতিদিন কথা হয়। যার কারণে আমার স্বামী ঘরে আমার ওপর খুব মানসিক অত্যাচার চালাচ্ছে। বলে রাখি, বিয়ের অনেক আগে এক ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। ছেলেটা আমাকে খুব ভালোবাসত। আমার পরিবার ওকে মেনে নেয়নি। যার কারণে আমিও আর এগোইনি। এখন আমার স্বামী আমার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ব্যাপারটা জেনে গেছে। কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করুন, এখন ওই ছেলের সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। তবু এটা আমার স্বামী বিশ্বাস করতে চাইছে না। ওই ছেলেটা বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। কিন্তু তবু আমার স্বামী ওকে নিয়ে আমাকে সন্দেহ করে চলেছে। এই নিয়ে সব সময় খুব মানসিক চাপে থাকি। এখন আমার মা–বাবা আমার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। ওদের সামনে ও আমাকে যা নয় তাই বলে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করছে। ফলে তাঁরা খুব হীনম্মন্যতায় ভুগছেন।
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

# মানুষ অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিবাহিত জীবনটি শুরু করে। বিয়ের মাত্র দুদিনের মাথায় তুমি অনেক বড় একটি ধাক্কা খেলে। একটি সম্পর্কে বিশ্বাস হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। অথচ সেটি ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল যখন জানতে পারলে, তুমি প্রতারিত হয়েছ। বিয়ের আগে অনেকেই ভালোবাসার সম্পর্কে থাকে, কিন্তু বিয়ের পরও সম্পর্কটি চালিয়ে যাওয়া বা নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানো অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। তুমি প্রতারণা, অবিশ্বাস, অবহেলা, অশ্রদ্ধা ও মানসিক নির্যাতনের মধ্যে দীর্ঘ নয় বছর এই সম্পর্কটি যে কারণে চালিয়ে গেছ, তার একটি ব্যাখ্যা হয়তো তোমার কাছে আছে। তবে এত বড় একটি সময় এটির ভেতরে থাকা খুবই ক্লান্তিকর ও অবসাদময় হওয়ার কথা। তুমি স্বামীকে হয়তো ভালোবাস বলে আশায় বুক বেঁধে দুটো সন্তানকেও পৃথিবীতে নিয়ে এসেছ। তবে ওরা কিন্তু বাবা-মায়ের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের বহিঃপ্রকাশ দেখে বড় হচ্ছে না। উপরন্তু তারা একটি চলমান সংঘাতময় সম্পর্ক দেখতে পাচ্ছে। এতে করে ওদের মনে প্রবল ভীতির সৃষ্টি হচ্ছে, যেটির প্রভাব তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশকে অত্যন্তÿক্ষতিগ্রস্ত করার কথা। তুমি তো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং শিক্ষিত একটি মানুষ, তারপরও কী ভেবে নিজেকে এই অবমাননাকর পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলেছ, তা খুব ভালো করে ভেবে দেখো। তোমার স্বামী কি নিজের অপরাধবোধ কমাবার জন্য তোমাকে একটি বিবাহপূর্ব সম্পর্ক নিয়ে নির্যাতন করছেন কি না জানি না। ব্যাপারটি নিয়ে তাঁকে আর কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের ক্লান্তি বাড়তে দিয়ো না। নিজেকে আন্তরিকভাবে ভালোবেসে, শ্রদ্ধা করে এবং পরিপূর্ণভাবে নিজের যত্ন নিয়ে পথ চলতে চেষ্টা করো। পাশের মানুষটি তোমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেই ক্ষমতাটি তাঁকে না দিয়ে তুমিই নিজের আবেগের নিয়ন্ত্রক হওয়ার চেষ্টা করো। অর্থাৎ কিসে তুমি কষ্ট পাবে বা খুশি হবে, সেই সিদ্ধান্ত যেন তোমারই হয়, সেই লক্ষ্যে মানসিক শক্তিটি বাড়াতে থাকো। আশা রাখছি নিজের কোনো ক্ষতি করবে না। কারণ, তোমার জীবন অনেক মূল্যবান। যদি খুব বেশি কষ্ট হয়, তাহলে ০৯৬১২২২২৩৩৩ এই টেলিসেবা নম্বরটিতে ফোন করে কাউন্সেলিং সেবা নিজে পারো। যেসব সংস্থায় কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপির সুযোগ আছে, সেসব জায়গায় গিয়ে তুমি কীভাবে মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারো, সেটির জন্য সরাসরি সেবা গ্রহণ করতে পারো।

ঘোষণা
পাঠকের প্রশ্ন বিশেষজ্ঞের উত্তর
জীবনযাপনে নানা বিষয়ে নানা রকম প্রশ্ন জাগে মনে। অনেক সমস্যাও তৈরি হয়, যা সবার কাছে বলা যায়। স্বাস্থ্য, মন, সম্পর্ক, সন্তানপালন, খাদ্যাভ্যাস, ডায়েট, আইন–অধিকার—এসব বিষয়ে যেকোনো প্রশ্ন পাঠাতে পারেন প্র অধুনা–র কাছে। ‘পাঠকের প্রশ্ন’ বিভাগে আপনার প্রশ্নের উত্তর বা সমস্যার সমাধান দেবেন খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞরা। পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।

ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA