আপনার কি প্রতিশ্রুতিভীতি আছে?

প্রতিশ্রুতিভীতি থাকলে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। মডেল: রাজন ও তুজ্জি। ছবি: অধুনা
প্রতিশ্রুতিভীতি থাকলে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। মডেল: রাজন ও তুজ্জি। ছবি: অধুনা

সম্পর্কে জড়াতে গিয়েও আপনি পিছিয়ে আসছেন। ভালো চাকরির প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দিচ্ছেন বারবার। কেন? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে হয়তো ভাবছেন—আমি বোধ হয় একটু বেশিই খুঁতখুঁতে। কেউ ভাবতে পারেন, হয়তো সঠিক সময়টা এখনো আসেনি। কেউ দেন কপালের দোষ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসলে প্রতিশ্রুতি রক্ষার ভীতি আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যাকে বলছেন ‘কমিটমেন্ট ফোবিয়া’।

কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এই ভয় থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। কিন্তু তার আগে বুঝতে হবে, আপনি এই সমস্যায় আক্রান্ত কি না। কীভাবে বুঝবেন?

কর্মক্ষেত্রে
প্রতিশ্রুতিভীতি যাঁদের আছে, তাঁরা সাধারণত কাজের ক্ষেত্রে একটু বেশি স্বাধীনতা চান। ৯টা-৫টা চাকরিতে নিজেকে বেঁধে ফেলতে ভয় পান। যেখানে দায়িত্ব কম, কাজের চাপ কম এমন কর্মক্ষেত্র তাঁরা পছন্দ করেন।

প্রত্যাশার চাপ থেকে অনেক সময় প্রতিশ্রুতিভীতির জন্ম হয়। আপনি ভাবছেন, সবাই আমার কাছ থেকে যতখানি প্রত্যাশা করছে, আমি ততটা দিতে পারব না। সেই ভয়ে আগেই নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন, দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। বড় কাজে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বেলায় আপনার আপত্তি। ছোট ছোট দায়িত্ব পালন করে পালাতে পারলেই বরং বাঁচেন! এমন মানসিকতা যদি থাকে, তার মানে আপনি দায়ের ভয়ে ভীত।

বন্ধুত্বে
যদি প্রতিশ্রুতিভীতি থাকে, তাহলে সম্ভবত আপনার বন্ধুর সংখ্যা অনেক; কিন্তু সেই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় কদাচিৎ। কাজ ও প্রেমের সম্পর্কের বেলায় আপনি যেমন প্রত্যাশার চাপ এড়াতে চান, বন্ধুত্বের বেলায়ও তা-ই। সবাই একসঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছে, কোনো একটা অনুষ্ঠানে সব বন্ধু একত্র হচ্ছে, শেষ মুহূর্তে কোনো একটা অজুহাত দিয়ে আপনি হয়তো নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলেন। এমন নয় যে বন্ধুদের আপনি ভালোবাসেন না, সম্পর্কের ব্যাপারে আপনি উদাসীন—তাও নয়। বন্ধুদের কাছে আপনার উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে—এখানেই আপনার ভয়!

আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের দিকে তাকান। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই কি ‘সিঙ্গেল’? যাঁরা দায় নিতে ভয় পান, তাঁদের নিজেদের মধ্যে সাধারণত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বন্ধুদের বৈবাহিক বা প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখলে আপনার কি এক ধরনের সুখানুভূতি হয়? এর মানেই যে আপনি পরশ্রীকাতর, তা নয়। খুব সূক্ষ্মভাবে হয়তো আপনার মনে হচ্ছে, এমনটাই তো হওয়ার কথা! ভাগ্যিস...ওর জায়গায় আমি নেই!

বাড়িতে

সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা প্রতিশ্রুতিভীতদের খুব চেনা সমস্যা। ফ্ল্যাট কেনার চেয়ে ভাড়া বাসায় থাকায় কি আপনার পছন্দ? বিয়ে করে পরিবারে একটা নতুন সদস্য যোগ করতে আপনি দ্বিধায় ভুগছেন? ঈদ বা পূজা, জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীর মতো অনুষ্ঠানে উপহার কেনার বেলায় আপনি কি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গড়িমসি করেন? ভোরে ঘুম থেকে ওঠা বা ডায়েটের পরিকল্পনা মেনে চলার মতো নিজের কাছেই করা ছোট ছোট প্রতিশ্রুতি রাখতে কি আপনার কষ্ট হয়? আপনি কাউকে ‘না’ বলতে পারেন না, পথ খোলা রাখতে চান? এসব প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে আপনার মধ্যে প্রতিশ্রুতিভীতি থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও জানতে চাইলে পড়তে পারেন স্টিভেন কার্টার ও জুলিয়া সকলের লেখা বই—আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য হিডেন ফিয়ারস স্যাবোটেজিং ইয়োর রিলেশনশিপস

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে লিখেছেন মো. সাইফুল্লাহ