আনোয়ারের চায়ের চমক

কলাবাগানে পদচারী সেতুর নিচে নিজের দোকানে চা বানাচ্ছেন আনোয়ার। ছবি: শাকিলা হক
কলাবাগানে পদচারী সেতুর নিচে নিজের দোকানে চা বানাচ্ছেন আনোয়ার। ছবি: শাকিলা হক

আনোয়ারের ছোট্ট দোকানটার নাম ছিল ‘সিঁড়ির নিচে বিড়ির দোকান’। ঢাকার কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে পদচারী সেতুর নিচে বেশ কয়েক বছর সিগারেট, বিড়ি বিক্রি করেছেন তিনি। এক সময় বুঝতে পারেন-এটা ঠিক হচ্ছে না। জীবনের তাগিদে এই ব্যবসায় থাকলেও বিড়ি সিগারেট বিক্রিতে মন সায় দিচ্ছিল না। মনের ইচ্ছাতেই এক সময় পাল্টে ফেললেন ব্যবসা।

আনোয়ারের নতুন দোকানের অবশ্য এখনো কোনো নাম নেই। তবে সেই পদচারী সেতুর নিচেই হয়েছে ছোট্ট চায়ের স্টলটার ঠিকানা। এর নাম বলা যেতে পারে ‘সিঁড়ির নিচে চায়ের দোকান’। কত কিছু দিয়ে যে চা বানান তিনি। কাগজি লেবু, পাতি লেবু, মাল্টা, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, আদা—এমনকি গাজর-টমেটোও ব্যবহার করা হয় চায়ে। দুধ চা বা রং চা—সব চায়ের এক দাম দশ টাকা।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০ টা। ১২ ঘণ্টা ধরে চলে অবিরাম চা বানানো। দিন শেষে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার মতো আয় হয় আনোয়ারের। এর মধ্যে খরচ বাবদ চলে যায় দুই-তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ, মাসে থাকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এতেই খুশি আনোয়ার। বেশ চলে যাচ্ছে বাবা মা আর বউ নিয়ে গড়ে ওঠা সংসার। চায়ের এই ব্যবসায় এখন তাঁর মনে শান্তি, আগের চেয়ে লাভও বেশি। জানালেন, মানুষের শারীরিক ক্ষতি হয় জেনেই বিড়ির ব্যবসা ছেড়েছেন। নিজেও খান না আর। লেবু, মাল্টা পুদিনা পাতা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো মনে করেন, এ জন্যই চায়ে এগুলো দেন। বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের চেষ্টা করেন। কথা বলতে বলতেই অবিরাম চা বানিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর শীতের সকালে কেটলির ধোঁয়ায় বেশ ওমে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতারা।

ক্রেতাদের কাছে আনোয়ারের মাল্টা লেবুর চায়ের কদর বেশ। ছবি: শাকিলা হক
ক্রেতাদের কাছে আনোয়ারের মাল্টা লেবুর চায়ের কদর বেশ। ছবি: শাকিলা হক

দুই বছর হয়েছে এই চায়ের ব্যবসা শুরু করেছেন আনোয়ার। নিজের জমানো সামান্য কিছু অর্থই ছিল পুঁজি। প্রতিদিন আড়াই শ থেকে তিন শ কাস্টমার আসেন চা খেতে। বেশ কয়েকজন আছেন বাধা কাস্টমার। প্রতিদিনই তাঁরা চা খেতে আসেন। এ ছাড়া অনেকেই ভিন্ন ধরনের চায়ের কথা শুনে আসেন তাঁর স্টলে। খুব রমরমা না হলেও দম ফেলার ফুরসত কম পান আনোয়ার। একা হাতেই ব্যবসা চালাচ্ছেন। বর্ষা ও শীতকালে কাস্টমার হয় বেশি। গরমকালে মানুষ চা খান কম, জানালেন তিনি।

দোকানে সিগারেট রাখলে বিক্রি বাড়ে। তবে ওই ব্যবসায় আর যেতে চান না আনোয়ার। চা আয় হচ্ছে তাতেই সন্তুষ্টির হাসি তাঁর মুখে। ইচ্ছে আছে এখান থেকেই বড় দোকান দেওয়ার। পরিশ্রম করছেন, অভাব আসবে না জীবনে এমনটাই আশা করেন তিনি।

কথা বলতে বলতেই দেখা গেল দুই নারী এসেছেন চা খেতে। বললেন, আনোয়ারের মাল্টা, পুদিনা, আদা ও লেবু মেশানো অসাধারণ চা শীতকালে প্রাণ জুড়ায়। বেশ পরিষ্কার পরিছন্নভাবে চা পরিবেশন হয়। ওয়ান টাইম গ্লাসে দেওয়া হয় তাই বেশ নিশ্চিতেই খান চা।

সন্ধ্যাবেলা তাঁর চায়ের দোকান ঘিরে বেশ আড্ডা বসে। ছেলে বুড়ো সবাই আসেন এখানে। সবার নানা ধরনের গল্পে অভিজ্ঞতার ঝুড়ি বাড়তে থাকে আনোয়ারের।