স্বপ্নপূরণে ডিবিএইচের গৃহঋণ

নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন বেশির ভাগ মানুষই দেখেন। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণে সাধ আর সাধ্যকে একই সুতায় গাঁথা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। এই কঠিনেরে সহজ করে দিতে সাহায্য করে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সহজ শর্ত ও কিস্তিতে ফ্ল্যাট, বাড়ি কিংবা জমি কেনার ঋণ দেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ) ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেড। রাজধানীর গুলশানের ২ নম্বরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি প্রধান কার্যালয়ে গৃহঋণ (হোম লোন) নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিবিএইচ কর্মী ও কর্মকর্তারা।
ডিবিএইচের ইভিপি ও হেড অব অপারেশনস নাসিমুল বাতেন জানান, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম থেকেই শুধু হাউজিং লোন নিয়ে কাজ করছে। সরকারের হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ছাড়া ডিবিএইচ একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেটি গৃহঋণ নিয়ে কাজ করছে।

স্বপ্নপূরণের সঙ্গী
ডিবিএইচের মূল কাজ হলো ক্রেতার যতটুকু সামর্থ্য আছে, তার সঙ্গে কিছু টাকা যোগ করে ফ্ল্যাট কিনতে বা বাড়ি বানাতে সাহায্য করা। একটি ফ্ল্যাটের দাম ৫০ লাখ টাকা। তাঁর কাছে আছে ১০ লাখ টাকা। বাকি টাকাটা তাঁকে ঋণ হিসেবে দিয়ে সাহায্য করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির হোম লোনের পরিমাণ হলো ৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। গৃহঋণ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ বলে জানালেন নাসিমুল বাতেন।

গৃহঋণ নেওয়ার আগে যাচাই–বাছাই করে নিন। ছবি: অধুনা
গৃহঋণ নেওয়ার আগে যাচাই–বাছাই করে নিন। ছবি: অধুনা

গৃহঋণ নিতে কী লাগে?
বাড়ি করার জন্য গ্রাহকের একটি জমি থাকতে হবে কিংবা একটি ফ্ল্যাট কিনতে হবে। এ দুই ধরনের গ্রাহককে ডিবিএইচ ঋণ দিয়ে থাকে। মূলত দুটি জিনিস দেখা হয়। ঋণগ্রহীতার ঋণ শোধ করার মতো সামর্থ্য আছে কি না। সে জন্য দেখা হয় তাঁর মাসিক আয় কেমন। চাকরিজীবী হলে তিনি কোথায় চাকরি করছেন। চাকরির কাগজপত্র, বেতনের কাগজ, যে ব্যাংকে বেতন জমা হয়, তার কাগজ এবং গ্রাহকের ছবি জমা দিতে হয়। গ্রাহক যদি ব্যবসায়ী হন, তবে ব্যবসার কাগজপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্সের কাগজ, তিন বছরের সব কাগজপত্র, যে ব্যাংকগুলোতে লেনদেন হয়, তার কাগজপত্র দেখা হয়।
এসবের বাইরে লাগবে জমি বা ফ্ল্যাটের দলিলপত্র। যে ফ্ল্যাট বা জমিতে বাড়ি বানানো হবে, তার কাগজপত্র লাগবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অনুমোদিত স্থাপত্য নকশা, কাগজ, জমির মালিকের সঙ্গে আবাসন নির্মাতার (ডেভেলপার) চুক্তির কাগজপত্র এবং যে ফ্ল্যাট কেনা হবে, সেটির কাগজপত্র।
কাগজপত্রে কোনো গরমিল বা প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না হলে ঋণ পাওয় যায় না। ডিবিএইচ সবকিছু সরেজমিনে গিয়ে পরীক্ষা করে।

কী জমা দিতে হয়?
যদি কোনো ক্রেতা ডেভেলপারের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কেনেন, তবে ডেভেলপার ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। ডেভেলপার, ডিবিএইচ এবং যিনি ফ্ল্যাট কিনছেন, তাঁর চুক্তির মধ্যে বিস্তারিত লেখা থাকে। ওই চুক্তির দলিল ডিবিএইচের কাছে হস্তান্তর করতে হয়।
ঋণগ্রহীতার যদি নিজের জমি থাকে এবং তার বিপরীতে ঋণ নিতে চাইলে, তখন দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়। জমির মালিকের কাগজপত্র ডিবিএইচের কাছে জমা রাখতে হবে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত শুধু জমা রেখেই ঋণ নেওয়া যেত। এখন রেজিস্ট্রি মর্টগেজ করে কাগজপত্র জমা দিতে হবে। যখন ঋণ শোধ হয়ে যাবে, তখন সব কাগজপত্র ফেরত পাওয়া যাবে।

কত দিনের মধ্যে
আবেদন করার পর এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন (অ্যাপ্রুভাল) পেয়ে যেতে পারেন ঋণগ্রহীতা। তবে তাঁর হাতে টাকা দেওয়াটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। কতটুকু কাজ হয়েছে, কবে টাকা লাগবে, কী পরিমাণ টাকা লাগবে—এসবের ওপর নির্ভর করে টাকা পাওয়া। বাড়ি বা ফ্ল্যাট নির্মাণে টাকা লাগে ধাপে ধাপে। ক্রেতার প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে টাকা দেয় ডিবিএইচ। তাদের কারিগরি দল সরেজমিনে দেখে টাকা দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়।
নাসিমুল বাতেন বলেন, ‘আমাদের টাকা দেওয়ার পরিমাণের কোনো সীমা বা লিমিট নেই। ঋণ আবেদনকারীর চাহিদার সবটুকু আমরা দিয়ে থাকি। তবে আবেদনকারী কত টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটটি কিনছেন এবং তাঁর কত টাকা ঋণ লাগবে, তার ওপর নির্ভর করে আমরা টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করি।’
ফ্ল্যাটের মোট দামের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ঋণ দেয় ডিবিএইচ। যাঁদের পরিশোধ করার সামর্থ্য আছে, তাঁদের সবাইকেই গৃহঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অবশ্যই মানতে হবে। ৬ মাস থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদে ঋণ দেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গৃহঋণের ইন্টারেস্টের হার নির্ভর করে। বর্তমানে ১০ শতাংশ ইন্টারেস্টে গৃহঋণ দিচ্ছে ডিবিএইচ। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও গাজীপুর এলাকার বাসিন্দারা এ ঋণ পাবেন।