পোশাক বুঝে হ্যাঙ্গার

পোশাক ভাঁজ করে রেখে দিলে তাতে দাগ পড়ে যায়। দীর্ঘদিন ভাঁজে থাকলে তো সেসব অনেক সময় পরার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। তাই পোশাক হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা ভালো। একেক ধরনের পোশাক ঝোলানোর জন্য হ্যাঙ্গারও হয় ভিন্ন ভিন্ন। শাড়ি রাখার হ্যাঙ্গার আর শার্ট ঝোলানোর হ্যাঙ্গার কিন্তু এক নয়।

বাজারে নানা রকম হ্যাঙ্গার দেখে অনেকেই কোনটা কিনবেন, ভাবতে থাকেন। তারপর দেখতে সুন্দর একসেট হ্যাঙ্গার কিনে এনে দেখেন, সেখানে ব্লেজার রাখতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ, ওই হ্যাঙ্গার হয়তো ঘুমানোর পোশাক রাখার উপযুক্ত।

কাপড় ভালো রাখতে

অনেকে শার্ট বা টি–শার্ট রাখার জন্য লম্বা একটা দণ্ডের ওপর বসানো একাধিক হুকযুক্ত হ্যাঙ্গার ব্যবহার করেন, যা দরজার পেছনে বা দেয়ালের একদিকে আটকে রাখা হয়। কিন্তু এসব হ্যাঙ্গারে শার্ট, টি–শার্ট রাখলে পরার পর ঘাড়ের কাছে গোল হয়ে কাপড় ফুলে থাকে। কারণ, অনেক সময় ধরে পোশাকটি ঠিকঠাক সাপোর্ট ছাড়া ঝুলিয়ে রাখায় এই অংশের কাপড় বেড়ে যায়।

তাই প্রতিটি কাপড়ের জন্য ঠিকঠাক হ্যাঙ্গার বেছে নেওয়াটা জরুরি। অনেকে খুব দামি স্যুট রাখা ছাড়া হ্যাঙ্গার তেমন ব্যবহার করেন না। যে পোশাকগুলো একটু কম পরা হয়, সেগুলো ভাঁজ করে না রেখে আলমারি বা ওয়ার্ডরোবে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা যায়। এতে কাপড় ভালো থাকবে।—এমনটাই জানান নিউমার্কেটের খায়ের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. মাহবুব রহমান।

তিনি জানালেন, হ্যাঙ্গার কেনার সময় অবশ্যই লক্ষ রাখবেন, এর ওপরের তল যেন মসৃণ হয়। ইস্পাত (স্টিল) বা প্লাস্টিকের হ্যাঙ্গারের চেয়ে কাঠের হ্যাঙ্গারের স্থায়িত্ব এবং কাপড় যত্নে রাখার ক্ষমতা অনেক বেশি। একেক রকম কাপড় একেকভাবে হ্যাঙ্গারে রাখতে হয়। সব কাপড় একভাবে রাখলে হ্যাঙ্গারে থাকবে না। এতে পড়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফ্যাশন হাউজ লা রিভের বিক্রয় ব্যবস্থাপক সোনিয়া আক্তার জানান, কাপড় সুন্দর রাখতে হ্যাঙ্গারে পোশাক ঝোলানোর নিয়ম পরিবর্তন করতে হবে। সহজ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে আপনি হ্যাঙ্গারে পোশাক ঝোলাতে পারবেন। পোশাকটি প্রথমে লম্বালম্বিভাবে একবার ভাঁজ করুন। ভাঁজ করা অবস্থায় এটি হাতে নিয়ে এর একটি অংশ হ্যাঙ্গারের বারের ওপর রাখতে হবে। আরেকটি অংশ হ্যাঙ্গারের বারের ওপর দিয়ে ভেতরের দিকে ফেলে দিন। এবার অপর অংশটি নিয়ে একইভাবে বারের উপর দিয়ে ফেলে দিন। শাড়ি, শার্ট, প্রয়োজনে প্যান্টও রাখার জন্য শক্ত প্লাস্টিক বা কাঠের হ্যাঙ্গার ব্যবহার করুন। শাড়ি ভাঁজ করে, পশমি ও রেশমি কাপড় খোলা অবস্থায় ঝুলিয়ে, স্যুট ঝুলিয়ে, শার্ট খোলা অবস্থায় ঝুলিয়ে এবং প্যান্ট লম্বালম্বিভাবে এক ভাঁজ করে ঝুলিয়ে হ্যাঙ্গারে রাখলে ভালো থাকে।

বাহারি ডিজাইন

কাপড় ঝোলানোর জন্য বাজারে বাহারি ডিজাইনের হ্যাঙ্গার পাওয়া যায়। প্লাস্টিক, স্টিল আর কাঠের হ্যাঙ্গার যেমন রয়েছে, তেমনি এ দুটি উপকরণের মিশ্রণেও হ্যাঙ্গার তৈরি করা হয়। ফুল ও লতাপাতার দেয়ালের আদলে হ্যাঙ্গার তৈরি করে নান্দনিকতা প্রকাশ করা যায়। বিভিন্ন কার্টুন চরিত্র, গাড়ি, তারাসহ নানা উপকরণে করা হয় শিশুদের উপযোগী হ্যাঙ্গার। টাই ঝোলানোর জন্য একটা লম্বা ফ্রেমের দুই দিকে ছোট ছোট বার দেওয়া হ্যাঙ্গার ব্যবহার করতে পারেন। তেমনিভাবে স্কার্ফ, ওড়না বা মাফলার ঝোলানোর জন্য গোল গোল ফ্রেম, এবং স্যুটের হ্যাঙ্গার হওয়া চাই কাঁধের দিকটা মোটা।

কাপড় ঝোলানোর পাশাপাশি হ্যাঙ্গারের আরও ব্যবহার রয়েছে। ক্যালেন্ডার, শোপিস ও রান্নার উপকরণ রাখার জন্যও আছে হ্যাঙ্গার। মশারি টানাতেও আজকাল এক ধরনের হ্যাঙ্গার ব্যবহার করতে দেখা যায়। নানা আকৃতির হ্যাঙ্গারে ঝোলানো হচ্ছে গাছ।

যেমন দাম

ডিজাইন ও মানের ওপর হ্যাঙ্গারের দাম নির্ভর করে। প্রতি পিস প্লাস্টিকের হ্যাঙ্গার দাম ৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ স্টিলের হ্যাঙ্গার ১৫ থেকে ১২০ টাকা। নকশাদার স্টিলের হ্যাঙ্গার পাবেন ৩৫ থেকে ১৮০ টাকায়। এ ছাড়া বিভিন্ন নকশার কি-হ্যাঙ্গার পাবেন ১০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে।

যেখানে পাবেন

আড়ং, যাত্রাসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজে নানা নকশার হ্যাঙ্গার পাওয়া যায়। নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে, আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, মৌচাক মার্কেট, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, পুরান ঢাকাসহ দেশের সব মার্কেটেই হ্যাঙ্গার পাওয়া যায়।