বলিরেখা যেন না পড়ে

বলিরেখা এড়াতে আগে থেকেই ত্বকের যত্ন নিতে হবে। মডেল: অমৃতা, ছবি: নকশা
বলিরেখা এড়াতে আগে থেকেই ত্বকের যত্ন নিতে হবে। মডেল: অমৃতা, ছবি: নকশা

সময়ের সঙ্গে কত কিছুই তো বদলায়। সময় এগোয়, বয়স বাড়ে। শরীর ও মনে ঘটে নানান পরিবর্তন। ছেলেমানুষি কাজ, আবেগ আর সেই বয়সের চিন্তাধারার কথা মনে পড়লে হয়তো একলাই হাসেন আপনি। সব ফেলে এসে আজ হয়তো আপনি মানসিকতায় ‘বড়’ হয়ে উঠেছেন। পরিবার, কর্মক্ষেত্র—সব জায়গাতেই ‘বড়’ হয়ে ওঠা আপনার কথাকে দেওয়া হয় আলাদা গুরুত্ব। অভিজ্ঞতার দাম দেয় সবাই। এত পরিবর্তনের মধ্যে ত্বকও বদলে যায়। বয়সের ছাপ পড়ে চেহারায়। ‘বুড়িয়ে’ যাওয়ার সংকেত আসে।

এ তো গেল এক পরিস্থিতি। এতটা সময় মেপে সবার জীবনে সবকিছু ঘটবে, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? কারও হয়তো বেশি বয়সের আগেই চেহারায় দেখা দেয় বলিরেখা। তারুণ্যের বলিষ্ঠতার মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ‘বুড়িয়ে’ যাওয়া ত্বক হয়তো কারও আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে। হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন কেউ কেউ। চেহারাটাই সব নয়—জানা আছে সবারই।

সোনালী’স এইচডি মেকআপ স্টুডিও ও স্যালনের স্বত্বাধিকারী রূপবিশেষজ্ঞ সোনালী ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘ত্বক আর্দ্রতা হারালে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে বলিরেখা দেখা দেয়। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করে। বয়সজনিত কারণ ছাড়াও নানান কারণে ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। বলিরেখা হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।’

বলিরেখা প্রতিরোধে

l প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

l প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন ভিটামিন এ (গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি), ভিটামিন সি (পেঁপে, কমলালেবু, ব্রকলি, গাজর, বাঁধাকপি ইত্যাদি) এবং ভিটামিন ই (পেস্তাবাদাম, জলপাই আচার, চীনাবাদাম, কাঠবাদাম ইত্যাদি) সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।

l ত্বক শুষ্ক হতে দেবেন না। রোদে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। ধুলাবালি, ময়লা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন।

l মুখে বা গলার ত্বকে চাপ লাগে, এমনভাবে বালিশ নেবেন না; দীর্ঘদিন ভুল ভঙ্গিতে শোয়ার ফলে ত্বকে চাপ পড়তে থাকে, ফলে একসময় বলিরেখা দেখা যায়।

l যতই বিরক্ত হোন, চোখমুখ কুঁচকে থাকবেন না। এ ধরনের মুখভঙ্গি ত্বকে বলিরেখার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

l ২৫ বছর বয়স থেকেই বলিরেখা প্রতিরোধী ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। প্রতিদিন দুবার এ ধরনের ক্রিম ব্যবহার করুন। ভালো ব্র্যান্ডের মানসম্মত প্রসাধনী ব্যবহার করুন। চাইলে প্রতিমাসে স্যালনে গিয়ে থার্মো হারবাল ফেসিয়াল করাতে পারেন।

বলিরেখা কমাতে

বলিরেখা হয়েই যদি যায়, তবে তা কীভাবে কমানো যেতে পারে, এ ব্যাপারেও বলেছেন সোনালী ফেরদৌসী মজুমদার—

l এক্সট্রা ভারজিন অলিভ অয়েল সামান্য পরিমাণে নিয়ে একটি তুলার বলের সাহায্যে তা ত্বকে লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে।

l ডিমের সাদা অংশ ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। প্রাকৃতিকভাবেই সূক্ষ্ম দাগগুলো কমে আসবে।

l লেবুর রস হালকা করে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস খুব বেশিক্ষণ ত্বকের সংস্পর্শে রাখা ঠিক নয়। এই রস বেশি পরিমাণে লাগানো উচিত নয়।

l অ্যালোভেরার রস ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট বা শুকিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন।

l দুটি পাকা কলা দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আধঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।

l গাজর সেদ্ধ করে নেওয়ার পর খানিকটা মধু মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। এরপর সেটা ত্বকে লাগিয়ে আধঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে।

l বাটিতে ৫-৬ টুকরা আনারস মাখিয়ে নিন। ত্বকে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকাতে কিছুটা বেশি সময় লেগে গেলেও অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে যাওয়ার পর ধুয়ে ফেলুন।

বলিরেখা দেখা দিলে এ প্যাকগুলোর যেকোনোটি সপ্তাহে এক বা দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন। আর বলিরেখা প্রতিরোধের জন্য যা কিছু করণীয়, সেসব জানার বা মানার আগেই বলিরেখা হয়ে গেলে এগুলোর প্রতিটি মেনে চলতে চেষ্টা করুন। ত্বক থাকবে সতেজ ও সজীব।