খাবার ঠিক রাখতে গন্ধ দূর করতে

লেবু
লেবু

ঘরের কাজে, বিশেষ করে রান্নাবান্না ও খাবার তৈরিতে কিছু বিষয় নিয়ে পড়তে হয় ঝামেলায়। বিশেষ করে যখন খাবার সংরক্ষণের ব্যাপারটা আসে। সঠিক উপায় জানা থাকলে ঘরের কাজ আরও সহজ হতে পারে।
রান্নাবান্না ও খাবার সংক্ষেণের কিছু খুঁটিনাটি সবারই জেনে রাখা ভালো। জানাচ্ছেন রান্নাবিদ ফাতিমা আজিজ-

কোন খাবারে গন্ধ?
ফ্রিজে কাটা পেঁয়াজ বা ফল রাখলে গন্ধ ছড়িয়ে যায়। কাঁঠালের গন্ধ ছড়ায় খুব বেশি। কাঁচা পেঁয়াজের গন্ধ দূর করাও খুব কষ্টকর। আবার রান্না খাবার বাসি হতে থাকলে তা থেকেও গন্ধ হয়, এসব খাবার গরম করার সময়ও গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। একই ফ্রিজে কাঁচা মাছ-মাংস ও অন্যান্য খাবার রাখা হলে কাঁচা খাবারের কারণেই ফ্রিজের অন্য খাবারে গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

গন্ধ হলে উপায়?
কুসুম গরম পানিতে ভিনেগার দিন। এরপর দিতে হবে লেবু (লেবুর টুকরা দেওয়ার চেয়ে লেবুর রস দেওয়া হলেই তা বেশি কার্যকর হয়)। ফ্রিজ বা ওভেন বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ থাকা অবস্থায় এই মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর যন্ত্রটির (ফ্রিজ বা ওভেন) দরজা বন্ধ করবেন না। ভেতরটা ভালোভাবে শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত দরজা লাগানো যাবে না। ভেজাভাবটা থাকতে থাকতেই দরজা লাগিয়ে দিলে দুর্গন্ধ রয়েই যাবে।
আধা লিটার পানিতে ২ চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিয়ে এই মিশ্রণ দিয়েও একই পদ্ধতিতে ফ্রিজ বা ওভেন পরিষ্কার করতে পারেন।
এই দুই ধরনের মিশ্রণের যেকোনোটি দিয়েই দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়া বাটিগুলো পরিষ্কার করে নিতে পারেন একই পদ্ধতিতে। অর্থাৎ ভেজাভাব থাকা অবস্থায় বাটির মুখ আটকানো যাবে না।

গন্ধ এড়াতে
* ফ্রিজের দুর্গন্ধ এড়াতে বা কমাতে একটি বাটিতে কয়েকটি রোস্টেড কফি বিন রেখে দিতে পারেন; কিংবা কয়েক টুকরা লেবু। অথবা খানিকটা খাবার সোডা রেখে দিলেও চলবে। তবে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পরপরই এসবের কোনোটা রাখার প্রয়োজন হয় না। যেসব খাবারে গন্ধ হয়ে থাকে, সেগুলোর সঙ্গেই ফ্রিজের একদিকে এসবের যেকোনোটি রাখতে পারেন।

* ফ্রিজে খাবার রাখতে বায়ুরোধী বা এয়ারটাইট বক্স, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের তৈরি প্যাকেট কিংবা ফুড গ্রেড জিপ লক ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের বক্স ইলেকট্রিক ওভেনেও দেওয়া যায়, তবে তা মাইক্রোওয়েভে দেওয়া যায় না।

* নিয়মিত পরিষ্কার করুন ব্যবহার্য সামগ্রী। মাইক্রোওয়েভ ওভেন বেশি ব্যবহার হলে প্রতিদিনই পরিষ্কার করা উচিত। একটু কম ব্যবহার করলে আবার সপ্তাহে দুই-তিন দিন ব্যবহার করলেই চলে। ইলেকট্রিক ওভেন হয়তো কম ব্যবহৃত, সে ক্ষেত্রে এটি ২ সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করলেই হয়; অথবা যখন ব্যবহার করলেন, তারপরই পরিষ্কার করে ফেললেন। প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি ১০ দিনে একবার ফ্রিজ পরিষ্কার করা ভালো। ডিপফ্রিজ প্রতি মাসে একবার পরিষ্কার করলেও চলে।

খাবার জ্বাল দেব না?
কিছু খাবার বারবার জ্বাল দিতে নেই। আবার সব খাবারে বেশি জ্বাল দিতেও নেই। কোনো খাবার চুলায় দেবার সময় এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যেকোনো সবজি বেশি জ্বালে রান্না করা ঠিক নয়। বেশি জ্বালে সবজির স্বাদ ও রং নষ্ট হয়ে যায়। সবজির রংটা নষ্ট হয়ে গেলে কেউ আর তা খেতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বেশি জ্বালে সবজির পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। প্রয়োজনীয় ভিটামিনগুলো যদি সবজি থেকে না-ই পাওয়া যায়, তাহলে আর জোরাজুরি করে সবজি খেয়ে লাভটাই বা কি!

* শাক বেশি জ্বাল পেলে রং নষ্ট হয়ে যায়, পুষ্টিগুণও নষ্ট হয়। পুঁইশাক, পালংশাক তিতকুটেও হয়ে যায়।
* স্টেক বেশি জ্বালে রান্না করলে শক্ত হয়ে যেতে পারে, যা আর খাবার সময় ছেঁড়া যায় না। স্টেকের স্বাভাবিক কোমল ও নরম ভাবটা রাখতে এতে বেশি জ্বাল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
* কোনো রান্নায় চিংড়ি থাকলে সেটি বেশি জ্বাল দিতে নেই, এটিও শক্ত হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। সর্বোচ্চ তিন-চার মিনিট চিংড়ি চুলায় রাখুন।
* প্রয়োজন ছাড়া দুধও বেশি জ্বাল দেওয়া ঠিক নয়। দুই-একবার ফুটে উঠলেই দুধ নামিয়ে ফেলা উচিত। এর মাধ্যমেই জীবাণুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচা যায়। শুধু কখনো ঘন দুধ বা ক্রিম দরকার হলে তবেই দুধ বেশি জ্বাল দেওয়া উচিত।

গ্রন্থনা: রাফিয়া আলম