চমকে ভরা ফ্যাশন আসর

ল্যাকমে ফ্যাশন উইক মাঘের শীেত জানান দিল গরমের ফ্যাশনে কী আসছে? ছবি: সংগৃহীত
ল্যাকমে ফ্যাশন উইক মাঘের শীেত জানান দিল গরমের ফ্যাশনে কী আসছে? ছবি: সংগৃহীত

উত্তুরে কনকনে হাওয়া এখনো বইছে। শীতের আলসেমি কাটেনি। কিন্তু গরমের তোড়জোড় এখনই শুরু হয়ে গেছে ফ্যাশন-দুনিয়ায়। এবার গরমে কোন পোশাক বেছে নেবেন ফ্যাশনপ্রেমীরা? গরমে বিয়ে বা কোনো উৎসবের পোশাক কী হতে পারে? গরমের ছুটিতেই-বা কী ধরনের পোশাক পরা হবে?
সবকিছুর সন্ধান পাওয়া গেল মুম্বাইতে ‘ল্যাকমে ফ্যাশন উইক সামার–রিসোর্ট ২০১৯’ আয়োজনে। মুম্বাইয়ের জিও গার্ডেনে ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি বসেছিল এবারের ল্যাকমে ফ্যাশন উৎসব। পাঁচ দিনের এই আসরে জন্ম নিয়েছে ফ্যাশনের কিছু নতুন ধারা। আবার ফিরে এসেছে কিছু সনাতনি ধারা। এবারও ল্যাকমের আসর সমানভাবে মাতালেন গ্রামীণ শিল্পীরা।

আয়োজনের শেষ শোেত মঞ্চে হাঁটেন অভিনেত্রী কারিনা কাপুর
আয়োজনের শেষ শোেত মঞ্চে হাঁটেন অভিনেত্রী কারিনা কাপুর


গুলদস্তা
ল্যাকমে ফ্যাশন উৎসবের প্রথম দিনের রাতে যেন সত্যি সত্যি ভূস্বর্গ নেমে এসেছিল জিও গার্ডেনে। প্রখ্যাত ডিজাইনার রোহিত বলের ‘গুলদস্তা’ আয়োজনে কাশ্মীরের রংবাহারি ফুল থেকে শিকারা—সবকিছু উঠে এসেছিল। তাঁর আবেগভরা এই কাশ্মীরি সফরে সুতি, সিল্ক ব্লেন্ড, চান্দেরি, সিল্ক অরগেঞ্জা, সিল্ক এবং ভেলভেটের ওপর সোনালি সুতো দিয়ে জারদৌসি কাজ, লাল এবং সবুজ সুতো দিয়ে কাশ্মীরি কাজ ছিল দেখার মতো। রোহিত বালকে এই কাজে সহায়তা করেছে ‘ঊষা সেলাই’।

ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে
প্রখ্যাত ডিজাইনার অনিতা ডোংরের আয়োজন ছিল একটু ব্যতিক্রমী। মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলের বাগিচায় তিনি করেছিলেন এই অভিনব শোয়ের আয়োজন। অনিতার ডিজাইন করা সব পোশাকেই ছিল ফুলের ছোঁয়া। প্যাঁচপেঁচে গরমে বিয়ে বা কোনো পার্টির জন্য তাঁর করা পার্টি পোশাকগুলো আদর্শ। পুরুষদের জন্য তার সম্ভারে ছিল সুতি সিল্কের কুর্তা-পায়জামার সঙ্গে ওয়েস্ট কোট, প্রিন্স কোট।
এদিকে ডিজাইনার অনুশ্রী রেড্ডির ‘আদিরা’র সম্ভারেও ছিল ফুলের বাহার। ফুলেল জারদৌসি কাজের এমব্রয়ডারি তাঁর পোশাকে অভিনবত্ব আনে। অনুশ্রীর আয়োজনে বিশেষত্ব ছিল প্যাস্টেল শেডের খেলা। বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা অনুশ্রীর ডিজাইন করা সোনালি কাজের লেহেঙ্গা পরে র‌্যাম্প আলো করে হাঁটেন।

মাটির গন্ধ
ল্যাকমের আয়োজনে এবারও পাওয়া গেল সেই সোঁদা মাটির গন্ধ। নামীদামি ডিজাইনারের পাশে তাঁদেরও শিল্পকলা বারবার সবাইকে অবাক করেছে। অনিতা ডোংরে এবং রেমন্ড এই মঞ্চে পরিচয় করালেন আসামের গ্রামের কিছু শিল্পী এবং তাঁদের শিল্পকলাকে। এসব গ্রামীণ শিল্পীর আয়োজনে ছিল ইরা, মুগা সিল্ক, তসর এবং মটকার ওপর ব্লক প্রিন্টিং এবং এমব্রয়ডারি। অনিতার প্রিয় ‘গোট্টা পট্টি’ কাজও এই আয়োজনে ছিল। এ ছাড়া নাগাল্যান্ড, মণিপুরের শিল্পীদের নানা সৃষ্টি এই মঞ্চে উঠে আসে।

প্লাস্টিকের পুনর্জন্ম
প্লাস্টিকেরও পুনর্জন্ম, ভাবা যায়। প্রযুক্তি তা করে দেখিয়েছে। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল ফ্যাব্রিক হয়ে নতুন রূপে ফিরে এল ডিজাইনার নরেন্দ্র কুমারের ‘এথলেজার ওয়ার’ সম্ভারে। জিমে, বেড়াতে, খেলার মাঠে, যেকোনো সময়ে এ ধরনের পোশাক পরা যাবে। নরেন্দ্র কুমারের কাছে বয়স বা আকার কোনো কিছুই ফ্যাশনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তাই সব বয়স, সব আকারের ফ্যাশনপ্রেমীর জন্য তাঁর আয়োজনে ছিল শর্টস, টি–শার্ট, ট্র্যাকস্যুট, বক্সিংস্যুট, বিকিনি, বার্থরোব, হুডতোলা জ্যাকেট, প্যাডেল পুশার, স্ল্যাকস, ট্র্যাক জাম্প স্যুট। নরেন্দ্র কুমার তাঁর ‘এথলেজার ওয়ার’-এর মূল্য সবার নাগালের মধ্যে রেখেছেন। নরেন্দ্র কুমারের শোয়ের শোস্টপার ছিলেন সানিয়া মালহোত্রা।

শেষ রজনী
পাঁচ দিনের ফ্যাশন উৎসবের ইতি টানলেন শান্তনু ও নিখিল। বিশাল এই আয়োজনের শেষ রজনী ঝলমলে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই রাতের মূল আকর্ষণ ছিলেন বলিউডের গ্ল্যামার কুইন এবং ল্যাকমে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর কারিনা কাপুর খান। ডিজাইনার শান্তনু ও নিখিলের নকশা করা পোশাক পরে তিনি এই রাতকে আরও মোহময়ী করে তোলেন। কারিনা সমাপনী রাতে পরেছিলেন কালো কাঁধ খোলা স্লিট গাউন। শান্তনু ও নিখিলের তৈরি কালো, লাল এবং লাল-কালো কম্বিনেশনের গাউন পরে মডেলরা এই রাতে র‌্যাম্পে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন। ‘ল্যাকমে ফ্যাশন উইক সামার–রিসোর্ট ২০১৯’-এর প্রেজেন্টিং স্পনসর ছিল আইএমজি রিলায়েন্স ও নেক্সা। কো-স্পনসর ছিল বোট, কোরক্যাল, রিবক, আর–এলান, দা রিয়েল কাট, গ্র্যাডো, ক্যাপ্রিসি, ল্যাকমে স্যালন, ঊষা সেলাই, আইএনআইএফডিসহ আরও অনেকে।