তত্ত্ব যাবে বিয়েবাড়ি

গায়ে হলুদের ডালায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ধারনা। ছবি: নকশা
গায়ে হলুদের ডালায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ধারনা। ছবি: নকশা

বিয়ের আনন্দময় আনুষ্ঠানিকতার মূল পর্ব যেন শুরু হয় বর-কনেকে হলুদে রাঙিয়ে। সাধারণত বিয়ের নির্দিষ্ট তারিখ থেকে দিন দুই আগে প্রথমে কনের বাড়ি ও তারপর বরের বাড়িতে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। আর এই অনুষ্ঠানের প্রধান একটি অনুষঙ্গ হলো হলুদের ডালা। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যে তত্ত্ব পাঠানো হয়, তা এই ডালায় সাজিয়ে দেওয়া হয়। আজকাল কোন বাড়ির ডালায় কতটা নতুনত্ব আনা হলো, সেই নিয়ে চলে বিস্তর আলোচনাও। তাই নতুন নতুন ধারণা দেখা যায় এই ডালা সাজাতে। অনেকে তো দায়িত্ব ছেড়ে দেয় বিভিন্ন ডিজাইনারদের হাতে। তবে চাইলে বাড়িতেও সাধারণ ডালায় আনতে পারেন চলতি ধারার ছোঁয়া।

নানান আকারের নানান প্রকারের
বিয়ের মৌসুম শেষের পথে। তবে বাজার ঘুরলে সারা বছরই মেলে নানান নকশার ও নানান আকারের হলুদের ডালা। এলিফ্যান্ট রোডের বিয়েশাদি দোকানের প্রধান নির্বাহী শরীফ বলেন, কয়েক বছর আগেও শুধু বাঁশ-বেতের ডালার প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন বিভিন্ন রঙিন কাগজ ও কাপড়ে মোড়া ডালা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া লেইস ফিতা জড়ানো ডালাও বেশ জনপ্রিয়।
ডিজাইনের সঙ্গে সঙ্গে ডালার আকার নির্বাচনের ব্যাপারও কিন্তু বিবেচনা করতে হবে। খুব বেশি বড় ডালা না নিয়ে ছোট ডালা পছন্দ করেন অনেকে।
সাধারণত ১০ ইঞ্চি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৬ ইঞ্চি আকারের ডালা কিনতে পাওয়া যায়। আর চার কোনা ছাড়াও গোল, আট কোনা, ওভাল, হৃদয় আকারের হলুদের ডালা আছে। আবার ভিন্ন ভিন্ন ডালা ছাড়াও ৩টি ডালা নিয়ে একটি সেটও পাওয়া যায়।

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

ব্রাইডাল ক্রিয়েশনের পরিচালক আবিদা সুলতানা বলেন, হলুদের ডালায় এখন এসেছে অনেক পরিবর্তন। বর্তমানে নকশা বা খোদাই করা কাঠের ডালাগুলো বেশ ব্যবহার করা হয়। তবে তার সঙ্গে বিভিন্ন কৃত্রিম ফুল, পাতা, মুক্তা ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে। অনেকে আবার রঙিন কাগজের ফুল, পাখি, ময়ূর ডালায় ব্যবহার করে থাকেন। আবার ডালার আকারেও এসেছে ভিন্নতা। এখন তাক বা আলনার মতো করেও তৈরি করা হয় ডালা এবং প্রত্যেকটি তাক ভিন্ন ভিন্ন করে সাজানো হয়। মিষ্টি বা বিভিন্ন পিঠার জন্য কাচের বাক্সে কৃত্রিম ফুল বা রঙিন কাপড় মুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে এখন খুব চকচকে ডালার জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমে গেছে এবং রঙের ক্ষেত্রে সোনালি রুপালির সঙ্গে পোলাপি, বেগুনি, নীলসহ নানান রঙের ব্যবহার বেড়েছে অনেক।

চাহিদামতো
অনেকে তো ফরমাশ দিয়ে ডালা তৈরি করে নেন। রীতিমতো ইন্টারনেট ঘেঁটে নতুন নকশা বের করেও ডালা বানাতে দেখা যায়।
হ্যাপি ইভেন্টসের স্বত্বাধিকারী সাফিয়া সাথী বললেন, কাঠের ডালার পাশাপাশি সোলার ডালাও এখন অনেকে পছন্দ করেন। বর-কনের বিশেষ পোশাক দেওয়ার জন্য এই ধরনের ডালা ব্যবহার হয়। এ ছাড়াও নতনত্ব আনতে কাঠের গুঁড়ির ডালা, হোগলাপাতার ডালা, বাঁশ, বেতের ডালা, মাটির তৈরি ডালা ব্যবহার করা যায়। তবে ডালাগুলোকে একটু রঙিন করতে কৃত্রিম ফুল, কাপড়ের ফুল, পাতা, ময়ূরের পালক, সোলার বল, পমপম বল, নানান রঙের আলপনা করে একেবারেই আলাদা রূপ দেওয়া যায়।’
বিভিন্ন উপহার সামগ্রীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডালা ব্যবহার করা হয়। যেমন পানসুপারি, চুড়ির ডালা, বিয়ের পোশাকের ডালা, উপহারের ডালা, গয়নার ডালা, মিষ্টির ডালা বা বয়াম, পিঠার ডালা ইত্যাদি আলাদা উপকরণে তৈরি করা হয়।

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

নিজেরাই করি
যাঁরা বাড়িতেই তৈরি করতে চান হলুদের ডালা তঁদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়েছেন হ্যাপি ইভেন্টসের স্বত্বাধিকারী সাফিয়া সাথী।
* বাজারে যেসব বেতের বা বাঁশের ডালা পাওয়া যায়, তা শুধু বা রঙিন কাপড় দিয়ে মুড়ে নিলে ভালো লাগবে।
* একটু বেশি রঙিন করতে চুনরি বা বাটিক কাপড় ব্যবহার করা যায়। এতে করে দেশীয় একটা ব্যাপারও থাকবে।
* ডালা সাজাতে কাতান, সিল্ক কাপড়ের ব্যবহার নতুনত্ব ও আভিজাত্য আনতে পারে।
* ড্রাই ফ্লাওয়ার, কাপড়ের ফুল বা কৃত্রিম ফুল, পাতা, লেস, রিবন ব্যবহার করা যায় ডালার চারপাশে বা দুপাশে।
* পান ডালা, ফলের ডালা, মাছ ডালায় আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী কিছু উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন বর-কনের পুতুল, ছনের ঘর ইত্যাদি।
* মিষ্টির ডালা হিসেবে বেতের ডালা, মাটির হাঁড়ি ভালো লাগবে।
* মাটির হাঁড়িতে নকশা করে নেওয়া যেতে পারে রংতুলিতে।

যেখানে পাবেন ও দাম
ঢাকায় বিয়ের হলুদের ডালা কুলার সব থেকে বেশি দোকান এলিফ্যান্ট রোড, কাঁটাবন ও চকবাজারে। এ ছাড়াও বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন মল্লিকা, জেনেটিক প্লাজাতেও পাবেন ডালা। বাজারের সাধারণ ডালাগুলো ২০০ থেকে ৮০০ টাকা ও কুলা ১০০ থেকে শুরু করে প্রায় ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। আর ডিজাইন করা ভিন্নধর্মী ছোট ডালা ৪০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত আর বড় ডালা ৪০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত।