টিপ দেই কপালে

টিপের নকশায় নতুনত্ব। মডেল: কাশফিয়া, টিপ: সারানা, শাড়ি ও ব্লাউজ: বিবিয়ানা, সাজ: বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ, ছবি: সুমন ইউসুফ
টিপের নকশায় নতুনত্ব। মডেল: কাশফিয়া, টিপ: সারানা, শাড়ি ও ব্লাউজ: বিবিয়ানা, সাজ: বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ, ছবি: সুমন ইউসুফ

একমাথা ঢেউ খেলানো চুলের মাঝবরাবর সিঁথি। পেছনে টেনে বাঁধা খোঁপা। নকশিপাড়ের শাড়ি, ফ্রিল দেওয়া ব্লাউজ, চোখে কাজল আর কপালের মধ্যিখানে একটা একরঙা গোল টিপ। ব্যস, আভিজাত্য নিয়ে বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লাবণ্য কিংবা সুচরিতা। সে সময়ের রবীন্দ্রকন্যাদের সাজের ধারায় আজ পরিবর্তন এলেও টিপের মহিমা একালের জনপ্রিয়। বাঙালি কন্যাদের কপালে টিপ আজও ভাস্বর যেকোনো উত্সব-অনুষ্ঠানে শাড়ি, কামিজ কিংবা টপ-জিনসের প্যান্টেও।

ঘাসফড়িঙের ছোঁয়ায়
ঘাসফড়িঙের ছোঁয়ায়

বাঙালি নারীর শাশ্বতরূপে টিপের কদর চিরকালের। দুই ভ্রুর মাঝখানে ছোট কিংবা বড় একটা টিপেই যেন খুলে যায় সৌন্দর্যের বাহার। ‘বাঙালির বারো মাসের তেরো উত্সবে টিপ না হলে সাজে পূর্ণতা আসে না। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে একটা টিপ তাই পরতেই হয়। টিপ বাঙালিয়ানার একটা অংশ হিসেবে নারী-শাড়ির সঙ্গে সবটা জুড়ে থাকে, তাই টিপ না পরলে ভালোই লাগে না। মনে হয় কী যেন নেই, কী যেন নেই।’ বলছিলেন ছায়ানটের রবীন্দ্রসংগীতের শিক্ষার্থী তাপসী বর্মা।

অনলাইন দোকান সারানার স্বত্বাধিকারী নওরিন আক্তার বলেন, ‘বিবি রাসেলের হাতে আঁকা টিপে খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম প্রথম। সেই উৎসাহে নিজেও টিপকে বানালাম ক্যানভাস। সচরাচর দেখা টিপের গায়ে ধাতব বা রংতুলির নকশা করে নিলে সেটা বিশেষভাবে চোখে পড়বে।’

কর্মজীবী ফারাহ্ দিবা অফিসের কাজে ছোটাছুটির কারণে ফতুয়া জিনসই বেশি পরেন, তাই বলে টিপ পরতে কখনো ভোলেন না। হুটহাট বাইরে বেরোতে কোনোরকমে গায়ে পোশাক পরে ঠিকই আয়নার সামনে হাজির হন পছন্দসই একটা পরার জন্য। দুই আঙুল দিয়ে ধরে যখন কপালের মাঝখানে টিপটা বসান, তখন তার মনটা খুশি খুশি হয়ে ওঠে। চেহারায় বেশ নান্দনিক লাগে এবং আয়নায় নিজেকে দেখতে বেশ ভালো লাগে। তবে তিনি কেবল একরঙা টিপই পরেন না, হাতে আঁকা টিপও তাঁর বেশ পছন্দ।

বসন্তরঙা টিপ
বসন্তরঙা টিপ

সাজের ধরনধারণ মেনে টিপেও এসেছে নানান রকম নকশা। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কালো, মেরুন-আরও কত রং রোজ ফুটে উঠছে কপালের মাঝখানে। আধুনিক সময়ের হাত ধরে তাই এই টিপেও এসেছে নতুনত্ব। টিপের একরত্তি গায়ে ফুটে উঠেছে নানান নকশা। আলপনা, জ্যামিতিক নকশার বাইরেও একটু ভিন্ন নকশায় আঁকা হচ্ছে মাছ, ফুল, কল্কে, ফড়িং, হাতি, লতাপাতা, পাখির অবয়ব। আবার জরি, পুঁতি, পাথরের কাজের টিপও নতুন আঙ্গিকে ফিরে আসছে সাজের অনুষঙ্গে। সেকালের মখমলের গোল টিপের আকারেও এসেছে ভিন্নতা কোনোটা লম্বাটে, চৌকোনা, ত্রিকোন, ওভাল, ওপরে গোল নিচের অংশে চিকন যেন পানির ফোঁটা পড়ছে এমন। টিপের ওপর ধাতবের নকশা করা পশুপাখিও দেখা যাচ্ছে। তরুণীদের কাছে এ ধরনের টিপের একটা বাড়তি কদর রয়েছে।

কপালের ধরন আর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় এমন আকার বেছে খোলা চুল বা বাঁধা শাড়ি কিংবা জিনস-একটা টিপেই উত্সব উপলক্ষের বাইরেও বেশ মানিয়ে যায় মায়াময় মুখখানি।