শিশু পোশাকে বর্ণমালা

একেকটা বর্ণ যেন একেকটা আবেগ। বাংলা বর্ণমালার গোটা ইতিহাসই আবেগময়। সেই আবেগের প্রকাশ ঘটে পোশাকেও। বিশেষ করে ভাষার দিনের পোশাকে। শিশুদের পোশাকেও থাকে সেদিন একুশের ছোঁয়া।
শব্দ হিসেবে ‘মধ্যাহ্নভোজ’ শিশুর জন্য একটু খটমটে। তবে ‘লাঞ্চ করে নাও’ কথাটির চেয়ে ‘বেলা হয়ে গেল, খেয়ে নাও সোনামণি’ এই কথাটিতেই যে মায়ের মনের অন্তহীন আবেগ সবচেয়ে বিশাল হয়ে ধরা পড়ে সোনামণির হৃদয়ে। একুশের দিন একুশের পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে নেওয়ার পর ‘সবার সঙ্গে আমিও আজ একুশকে ধারণ করলাম’—এই বোধটুকুই যেন ওর কাদামাটির মতো মনটাতে ছাপ ফেলে যায়।

মডেল: আলিজা ও তাথৈ, পোশাক: সাদাকালো, ছবি: খালেদ সরকার
মডেল: আলিজা ও তাথৈ, পোশাক: সাদাকালো, ছবি: খালেদ সরকার

যেমন পোশাক এদিন
ইতিহাসকে কেন্দ্র করে শিশুমনের বিকাশের এমন চিন্তা থেকেই দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বাজারে এনেছে শিশুদের একুশের পোশাক। ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স–এর প্রধান নির্বাহী শাহীন আহমেদ বলেন, ‘ভাষার জন্য এমন আত্মত্যাগ করার ইতিহাস একমাত্র বাঙালি জাতির। একুশে ফেব্রুয়ারিকে একসময় শোকের দিন ধরে নিয়েই পোশাক তৈরি করা হতো। তবে এটি শুধুই শোক নয়; বরং এটি আমাদের অর্জন এবং গৌরবেরও দিন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পর থেকে এই দিনটিকে আমাদের শক্তি হিসেবেই মনে করা হয়। তবে এটি আবার ঠিক উৎসবও নয়। বড়দের চেয়ে শিশুদের জন্যই এ দিনটির গুরুত্ব বেশি। কারণ, ওরাই দেশের ভবিষ্যৎ। ওদের সামনে চেতনাটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় পোশাকের মোটিফ ও ডিজাইনে।’
প্রতিবছরই একুশের কোনো একটি গান বা কবিতাকে ভিত্তি করে পোশাকে নকশা আনে ফ্যাশন হাউস সাদাকালো। এবার ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটিকেই পোশাকের নকশার মূল উপজীব্য রাখা হয়েছে।
ফ্যাশন হাউসগুলো মেয়েশিশুদের জন্য শাড়ি আর সালোয়ার–কামিজ এবং ছেলেশিশুদের জন্য পাঞ্জাবিই তৈরি করে বেশি। তবে ফতুয়া, ফ্রক, শার্ট বা টি-শার্টও তৈরি করা হয়েছে। বর্ণমালাকে ভিত্তি করেই অধিকাংশ পোশাক নকশা করা হয়।

কাপড়ে, নকশায়
ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক ও টাই-ডাইয়ের কাজ আছে পোশাকগুলোতে। সুতি পোশাকই এ দেশের আবহাওয়ায় মানানসই। আবার দামি কাপড়ে পোশাক তৈরি করা হলে এর মূল্যমান অনেকটাই বেড়ে যাবে। একটি দিনের উপলক্ষে যে পোশাকটি কেনা হয়, দামের কথাও বিবেচনায় রাখা হয় বলে জানানো হয় ফ্যাশন হাউসগুলোর পক্ষ থেকে। তবে আড়ংয়ে লিনেনের কিছু পোশাকও রয়েছে।
শাহীন আহমেদ বলেন, একুশের রং একেবারেই নির্দিষ্ট। সাদা, কালো আর লাল—এই তিনটি রং ধরেই পোশাক তৈরি করা হয়। বর্ণমালার গৌরবের ইতিহাসকে তুলে ধরতে প্রতিবছর বর্ণ দিয়েই মোটামুটি অর্ধেকসংখ্যক পোশাক ডিজাইন করে অঞ্জন’স। যার নাম ‘পোশাকে বর্ণমালা’।
তবে শিশুদের জন্য একটু রঙিন পোশাকেও বর্ণমালার ব্যবহার আছে। ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশে সাদা ও কালোর পাশাপাশি লাল, হলুদ, নীল ও সবুজ টি-শার্টে পাবেন বর্ণমালা।
কোনো কোনো পোশাকে আবার আছে ফুল ও শহীদ মিনারের নকশা। আছে ‘সকল শহীদ স্মরণে’ গানের থিমে ‘লেখা’ পোশাক। গান বা স্লোগানের থিমে তৈরি পোশাক পাবেন বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে। কোথাও আছে কামিজের সামনে ছোট্ট একটু কটির মতো অংশ। তাতেই পোশাকটি পেয়েছে ভিন্নতা।

পাঞ্জাবিতে তুলে ধরা হয়েছে একুশের গান আর শাড়িতে বর্ণমালা। মডেল: সায়ান ও  তাথৈ
পাঞ্জাবিতে তুলে ধরা হয়েছে একুশের গান আর শাড়িতে বর্ণমালা। মডেল: সায়ান ও তাথৈ

শিশুর পোশাক কিনতে চাইলে
ফ্যাশন হাউস সাদাকালো, অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, নিপুণ, আড়ং, বাংলার মেলা ও সৃষ্টিতে পাবেন শিশুদের একুশের পোশাক। শিশুর বয়সভেদে পোশাকের মাপটা হয় ভিন্ন। দামেরও হেরফের হয় মাপ ও ডিজাইন অনুযায়ী। সালোয়ার-কামিজের দাম ১০০০-১৮০০ টাকা, মেয়েদের ফতুয়া পাবেন ৬০০-৭০০ টাকায়। কামিজ পাবেন ১১৫০ টাকার মধ্যে। ফ্রকের দাম ৭৫০-১৩৩০ টাকা, শাড়ির দাম ১৪৫০-১৮০০ টাকা। টপ পাবেন ৬০০-৬৫০ টাকায়, টপ ও প্যান্ট বা পালাজ্জোর সেট পড়বে ৫৫০-১০০০ টাকা।
ছেলেদের পাঞ্জাবির দাম ৪০০-১৫৯০ টাকা, ৪-৭ বছর বয়সীদের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামার সেট পাবেন ৭০০-৭৫০ টাকায়। টি-শার্টের দাম ২২০-৩৮০, শার্ট কিনতে পাবেন ৫৮০-৬৫০ টাকায়।