বিপজ্জনক স্পর্শ শিশুর জন্য

‘সত্যমেব জয়তে’ অনুষ্ঠােন িশশুদের সঙ্গে আমির খান
‘সত্যমেব জয়তে’ অনুষ্ঠােন িশশুদের সঙ্গে আমির খান
>

শিশুকে স্পর্শ করা আবার দোষের কী? এমন প্রশ্ন আপনার মনে আসতেই পারে। কিন্তু স্পর্শেরও ভালো–মন্দ আছে। শিশু কী করে বুঝবে ভালো স্পর্শ আর মন্দ স্পর্শের প্রভেদ? বেশ কয়েক বছর আগে বলিউড তারকা আমির খান এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে এই নিয়ে কথা বলেন, কর্মশালা করেন। বিষয়টি সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আবার তা তুলে ধরা।

বলিউডে আমির খান পরিচিত ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ হিসেবে। ২০১২ সালে টেলিভিশনে প্রথমবারের মতো এক টক শোর উপস্থাপক হিসেবে অভিষেক হয় তাঁর। তাতেও তিনি সফল। আমিরের ‘সত্যমেব জয়তে’ নামের এই অনুষ্ঠানটি পায় বিপুল জনপ্রিয়তা, সমাজ সংস্কারেও রাখে বড় প্রভাব। সত্যমেব জয়তে প্রচারিত হয় স্টার ওয়ার্ল্ড, দূরদর্শনসহ একাধিক চ্যানেল ও ভাষায়। অনুষ্ঠানটির প্রতিটি পর্বে তুলে ধরা হয় ভারতের একটি নির্দিষ্ট সমস্যা। এ পর্যন্ত নারী ভ্রূণ হত্যা, স্বাস্থ্যসেবা, যৌতুক, ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতা, মাদকসহ আরও বেশ কিছু সামাজিক সমস্যা নিয়ে ২৫টি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথম সিজনের দ্বিতীয় পর্বটি ছিল শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি নিয়ে। ২০১২ সালের ১৩ মের ওই পর্বে একদম শেষ ভাগে শিশুদের সঙ্গে একটি ছোট কর্মশালা করেন আমির। সেখানে তিনি শিশুদের শেখান, কী করে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করা যায়, সাবধান হতে হয়। বড়দের করণীয় সম্পর্কেও বলেন তিনি। এখানে সেই অংশটির লিখিত রূপ দেওয়া হলো।

আমাদের শরীরে তিনটি স্থান আছে, যা খুব বিপজ্জনক। যেসব স্থানে অন্য কাউকে হাত লাগাতে বা স্পর্শ করতে দেওয়া যাবে না। কোন সে তিন জায়গা? প্রথম জায়গাটি বুক, দ্বিতীয়টি দুই পায়ের মাঝখানে এবং তৃতীয়টি পেছনে। এখানে একটা জরুরি কথা আছে, মা–বাবা আমাদের যত্ন নেওয়ার সময় এসব স্থানে কখনো কখনো স্পর্শ করতে পারেন। কখনো কখনো চিকিৎসকও স্পর্শ করতে পারেন। তবে মা–বাবা সঙ্গে থাকলে তবেই চিকিৎসক স্পর্শ করতে পারেন, নয়তো সেটাও পারেন না।

আর কেউ যদি বিপজ্জনক স্থানে খারাপভাবে স্পর্শ করে তাহলে সবার প্রথমে জোরে ‘না’ বলে চিৎকার করতে হবে। দ্বিতীয়ত আমরা সেখান থেকে সরে যাব। কোন জায়গায় যাব আমরা? সেটা ঘর হতে পারে। এমন জায়গায় যেতে হবে, যেখানে আমরা নিরাপদ। কখনো কখনো আমরা ঘরে না–ও থাকতে পারি, স্কুলে থাকতে পারি। স্কুলের টয়লেটেও কখনো এ রকম হলে দৌড়ে শিক্ষকের কাছে, শ্রেণিকক্ষে চলে যেতে হবে। প্রিন্সিপালের অফিসে যেতে হবে। তৃতীয়ত মা–বাবাকে সব খুলে বলতে হবে। হতে পারে সে সময় মা–বাবা কাছে নেই, সে ক্ষেত্রে দাদা–দাদি বা শিক্ষকের কাছে সব খুলে বলতে হবে। বড়দের মধ্যে এমন কাউকে বলতে হবে, যার ওপর আমাদের ভরসা আছে, যিনি আমাদের সুরক্ষা দেবেন।

তোমাদের জীবনে এমন একজনের নাম বলো, যার ওপর তোমরা ভরসা করো, বিশ্বাস করো, সব কথা খুলে বলতে পারো; যে তোমার ‘বডিগার্ড’। এমন কারও কথা মনে মনে ভেবে দেখো। তারপর আজকে বাসায় গিয়ে সেই মানুষটিকে বলো, আমি তোমার ওপর ভরসা করি, বিশ্বাস করি। তাই তুমি আমার বডিগার্ড। আমার জীবনে কখনো কিছু হলে আমি তোমাকে বলব।

আত্মীয়স্বজনদের কেউ কেউ আদর করে আমাদের জড়িয়ে ধরতে পারে; এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে তোমাদের যদি কখনো মনে হয়, এই মানুষটি কেন আমার শরীরের বিপজ্জনক স্থানে স্পর্শ করছে, সেটা যে কারও বেলায় হতে পারে; তোমার যদি ভালো না লাগে তাহলে প্রথমেই চিৎকার করে উঠবে। দ্বিতীয়ত নিরাপদ জায়গায় চলে যাবে। তারপর তোমার বডিগার্ডকে সব খুলে বলবে।

বড়দের উদ্দেশ্যে

এই কর্মশালা আমাদের সন্তানদের সঙ্গে প্রতি ছয় মাস পর পর করতে হবে। এই কর্মশালার মানে এই নয় যে, সন্তানের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের কাছে আর থাকছে না। এই কর্মশালার মাধ্যমে শিশুরা সাবধান হবে; তবে ওদের সুরক্ষার দায়িত্ব সব সময় আমাদের হাতেই থাকবে।

হিন্দি থেকে অনুবাদ: মাহফুজ রহমান
সূত্র: সত্যমেব জয়তে অনুষ্ঠানের ভিডিও