লুকানো দাগ?

কাপড়, ঘড়ি বা স্যান্ডেলের ফিতার আড়ালে থাকে ত্বকের যে অংশ, সেটাই ত্বকের আসল রং। মডেল: আনান, ছবি: সুমন ইউসুফ
কাপড়, ঘড়ি বা স্যান্ডেলের ফিতার আড়ালে থাকে ত্বকের যে অংশ, সেটাই ত্বকের আসল রং। মডেল: আনান, ছবি: সুমন ইউসুফ

অনেকেই ফ্যাশনের সঙ্গে অনুষঙ্গ বদলান প্রতিনিয়ত। কেউ আবার কিছু অনুষঙ্গ প্রতিদিন ব্যবহার করেন। দরকার বলেই প্রতিদিন ঘড়ি পরছেন। একসময় হাতে সেই ঘড়ির দাগও পড়ে যায়। আংটির কথাই ধরুন। যারা নিয়মিত পরেন, আঙুলের ওই অংশটুকুর রং কিছুটা ভিন্ন হয়ে যায়। এটা কোনো সমস্যা না। তবে অনেকেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন না। তাঁদের জন্যই রইল সমাধান।

সব সময় একই ধাঁচের নকশার স্যান্ডেল পরতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন আপনি। সেই স্যান্ডেলের ফিতা বা সামনের অংশটা বরাবর একটা সাদাটে দাগ হয়ে যায়। হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানালেন, এ ধরনের দাগ হয় মূলত ত্বক রোদে পুড়ে যাওয়ার কারণে। যে অংশটা ঢাকা থাকে, সে অংশের দাগটাই ত্বকের আসল রং। খোলা অংশ রোদে পুড়ে রংটা গাঢ় হয়ে যায় বলে রঙের পার্থক্যটা বেশি বোঝা যায়। ঘড়ি বা স্যান্ডেলের ফিতা বরাবর এমন দাগ তো হতেই পারে, হতে পারে জামা বা ব্লাউজের হাতা বরাবর ত্বকেও। কাপড়, ঘড়ি বা স্যান্ডেলের ফিতার আড়ালে থাকে ত্বকের যে অংশ, তা রোদে কম পোড়ে বলে সাদাটে মনে হয়। সাদাটে দাগটা আসলে ‘দাগ’ নয়, ‘দাগ’ হলো গাঢ় অংশটা।

প্যাক বেছে নিন

এমন ‘দাগ’ দূর করতে রাহিমা সুলতানার পরামর্শ জেনে নিন-

l দুধ ও মধুর প্যাক লাগাতে পারেন প্রতিদিন। মধুতে অ্যালার্জি থাকলে শুধু দুধ ব্যবহার করতে পারেন। দুধে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে, যা ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

l ফ্রিজে বরফ বানানোর ছাঁচে শসার রস রেখে কিউব তৈরি করা যায়। শসার রসের এই কিউব প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।

l টমেটোর রসের সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে ব্যবহার করা যায় প্রতিদিন। মধুতে অ্যালার্জি থাকলে তা বাদ দিয়ে শুধু টমেটোর রস ব্যবহার করুন।

l ২ টেবিল চামচ টক দই ও ২ টেবিল চামচ শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন।

 l এক কাপের সিকি ভাগ পরিমাণ দুধ, জাফরানের ৪-৫টি রেণু ও ১ চা-চামচ ওট মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করতে পারেন। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন।

l তৈলাক্ত ত্বকের জন্য টক দই, টমেটোর রস ও ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে প্যাক বানানো যায়। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন।

l টমেটোর রস ও মসুর ডাল বাটা বা গুঁড়ার সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে মধুতে অ্যালার্জি থাকলে তা উপকরণের তালিকা থেকে বাদ দিন।

l কাঁচা হলুদ ও দুধের সর মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করতে পারেন। দুধের সর না থাকলে দুধ ব্যবহার করা যায়। হলুদ যদি আপনার ত্বকে মানিয়ে যায়, কেবল সে ক্ষেত্রেই এই প্যাক ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত পোড়া ভাব অর্থাৎ, ত্বকের সাদাটে অংশের সঙ্গে গাঢ় অংশের পার্থক্য খুব বেশি হলে প্যাকে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস যোগ করে নিতে পারেন।

যত্ন নেওয়ার নিয়ম

যত্ন নিতে যেটিই বেছে নিন না কেন, তা ওই স্থানের পুরো ত্বকেই ব্যবহার করতে হবে। অনেকে মনে করেন, সাদা অংশটাতে প্যাক লাগানোই যথেষ্ট। এ ধারণা একেবারেই ভুল। বরং সাদাটে এবং কালচে দুই অংশেই সমানভাবে প্যাক ব্যবহার করতে হবে। শুধু শসার রস বা টমেটোর রস ব্যবহার করলে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। বাকি প্যাকগুলো লাগানোর পর অন্তত থাকতে হবে ২০ মিনিট অপেক্ষায়। তবে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের বেশি প্যাক রাখবেন না। স্ক্রাব তৈরি করলে তা শুধু ঘষে ত্বক পরিষ্কার করে নিয়েই ধুয়ে ফেলুন। তবে কোনো প্যাক ব্যবহার করামাত্রই ফল পাবেন, এমনটা ধরে নেওয়া যাবে না। নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে, ন্যূনতম এক মাস।

বেরোনোর আগে, ঘুমানোর আগে

বাইরে যাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন রাহিমা সুলতানা। শরীরের যেসব অংশ রোদের সংস্পর্শে আসবে, সেসব অংশে সানস্ক্রিন সামগ্রী লাগিয়ে নিন এরপর। কারণ ত্বকে সরাসরি সানস্ক্রিন প্রয়োগ না করাই ভালো। সানস্ক্রিন ব্যবহারের ন্যূনতম ২০ মিনিট পর বাইরে যান। রাতে ঘুমানোর আগেও ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হলে এ ধরনের দাগ ত্বকে একটু কম বোঝা যায়।