আমি হব সকালবেলার পাখি

ভোরের সতেজ বাতাসে সুস্থ থাকতে হাঁটতে পারেন। মডেল: আনান, ছবি: সুমন ইউসুফ
ভোরের সতেজ বাতাসে সুস্থ থাকতে হাঁটতে পারেন। মডেল: আনান, ছবি: সুমন ইউসুফ
সকালে ওঠার কিছু বস্তুগত, শারীরিক ও মানসিক সুবিধা আছে। একটু ব্যায়াম করে সারা দিনের জন্য মন ও শরীর সতেজ করে তোলা যায়। এক কাপ চা হাতে সকালটা উপভোগ করা যায়, ব্যক্তিগত লেখালেখি করা যায়। নানাভাবেই সকালের সময়টাকে কাজে লাগানো যায়। লিখেছেন অভিনেতা ইরেশ যাকের

প্রথমেই বলে রাখি যে কবিতাটা আমার কখনোই খুব পছন্দের ছিল না। একটা বাচ্চা ভোর সকালে উঠে হাউকাউ করছে। মা ঘুমাতে বললে সে উল্টো মাকে বকা দিচ্ছে। মনে হতো দিই দুইটা কান মলা। এর অবশ্য আরেকটা কারণ ছিল। সকালে ওঠার ব্যাপারে আমি কখনোই খুব উদগ্রীব ছিলাম না। নিজের পছন্দের বিষয় তো আছেই, তার বাইরেও আমার বিভিন্ন পেশাগত কাজের ধরন এমন যে সকালে ওঠা খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যের হয় না। শুটিং সাধারণত রাত করেই শেষ হয়। সকালে এক–দুই ঘণ্টা বাড়তি ঘুম খুবই লোভনীয় হয়ে ওঠে। ব্যবসায়িক জীবনেও কাজের ধরন এমন যে কর্মদিবস শুরু হয় একটু দেরি করে। শেষ হয় আরও দেরিতে। তবে সকালের সময়টা আমার ভালো লাগে। যে ঋতুই হোক না কেন সকালটা সব সময় হয় সুন্দর। আগে আগে ঘুম থেকে উঠতে না পারলে পুরো বিষয়টাই মিস হয়ে যায়। এ জন্যই আমি ইদানীং সকালে একটু আগে আগে ওঠার অভ্যাস করার চেষ্টা করছি।

সকালে ওঠার কিছু বস্তুগত, শারীরিক ও মানসিক সুবিধা আছে। প্রথমত, কর্মদিবস শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠলে আরাম করে সকালের নাশতা করা যায়। সঙ্গে এক কাপ চা হলে তো কথাই নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে যে সকালের নাশতা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আহার। তাড়াহুড়া করে নাশতা খেয়ে অফিসে বা কাজে দৌড় দেওয়ার চেয়ে আরাম করে পুষ্টিকর নাশতা খাওয়া একটা সুস্থ–সুখী জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়। কর্মশক্তি পাওয়া যায়। বাকি দিনটায় হাবিজাবি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে।

ভোরে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চায়ে চুমুক এনে দেবে ফুরফুরে ভাব। মডেল: তানহা, ছবি: অধুনা
ভোরে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চায়ে চুমুক এনে দেবে ফুরফুরে ভাব। মডেল: তানহা, ছবি: অধুনা

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে ব্যায়ামের ব্যাপারটাও নিশ্চিত করা যায়। অনেক সময় দেখা যায় যে দিনের কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় নানাবিধ পারিবারিক অথবা সামাজিক ব্যস্ততা চলে আসে। তখন আর ব্যায়াম করার সময় থাকে না। সকালবেলা সাধারণত কোনো ধরনের বাইরের কাজ থাকে না। ব্যায়ামটা সেরে ফেলা যায়। এতে সারা দিন মন ও শরীর সতেজ থাকে। রাতে ব্যায়াম করা হবে কি হবে না—এ বিষয়ে টেনশন থাকে না। দিনটা ভালো যায়।

ঝড়ের মধ্যে ঘর গোছানো কঠিন। দিনের কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার পর আসলে ঠান্ডা মাথায় জীবন নিয়ে বা পেশাগত কোনো পরিকল্পনা করা কঠিন। দিনের কাজ শুরু হওয়ার কিছু আগে যদি ঘুম থেকে ওঠা যায়, তাহলে দিনের কাজ এবং পরবর্তী কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তা–পরিকল্পনা করার সময় ও অবসর পাওয়া যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সারা দিনের কাজ করতে পারলে কর্মতৃপ্তি এবং কর্মদক্ষতা অনেকটাই বেড়ে যায়।

পেশাগত কাজের বাইরে অনেক ব্যক্তিগত কাজ থাকে, যেটা সকালে অন্য ব্যস্ততা শুরু হওয়ার আগে করে ফেলা যায়। লেখালেখি, সেটা কোনো চিঠি হোক বা অন্য কোনো লেখা হোক, সকালে সবচেয়ে শান্তিতে করা যায়। এ লেখাটাই ধরেন। আমি কয়েক দিন লিখব লিখব করে লেখার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আজকে সকালে উঠে ধাম করে লিখে ফেললাম। এ রকম আরও অনেক লেখার কাজ সকালে সেরে ফেলতে পারছি, যা হয়তো দিনের অন্য কোনো সময় করা সম্ভব হতো না।

সকালে চারপাশ চুপচাপ থাকে, শব্দ কম থাকে। যে বাসায় বাচ্চা আছে, সেখানে বাচ্চারা ঘুমিয়ে থাকে। আশপাশের রাস্তাঘাটে আওয়াজ থাকে না। টেলিভিশন চলে না। একধরনের শান্তি পাওয়া যায়। কোনো পরিকল্পনা বা চিন্তা না করলে এই শান্তিটা কিছুক্ষণ উপভোগ করতে পারাটাও নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। সকালে ওঠার বিষয়টা জীবনের বাকি সবকিছুর মতো অনুশীলনের ব্যাপার। আমরা যদি ভাবি যে প্রথম দিন সকালে উঠেই সবকিছু করে ফেলব, তাহলে হয়তো ভুল হবে। প্রথমত, সকাল সকাল ওঠার অভ্যাস না থাকলে প্রথম কিছুদিন হয়তো ঘুম থেকে উঠে বিরক্ত লাগবে। ব্যায়াম করতে ইচ্ছা করবে না। সকালের সূর্য সুন্দর লাগবে না। নাশতায় রুচি আসবে না। আমারও শুরুর দিকে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু পরপর কয়েক দিন সংকল্পবদ্ধ হয়ে সকালে ওঠার পর সব লাভ আমি উপভোগ করেছি। তবে এটাও সত্যি যে শুধু সকালে ওঠার অভ্যাস হলেই যে ব্যায়াম শুরু হয়ে যাবে তা নয়। সকালে উঠে যেই কাজগুলো করা সহজ সেগুলো করারও অনুশীলন করতে হবে। হ্যাঁ, আমি এটা লিখে দিচ্ছি যে যদি সকালে আগে ওঠেন এবং আনুষঙ্গিক কাজগুলো করার অভ্যাস করেন, তাহলে আপনার জীবন হবে অনেক বেশি সুস্থ এবং শান্তির।

শেষে একটা কথা না বললেই নয়। সকালে উঠবেন খুব ভালো কথা। কিন্তু সকালবেলার পাখির মতো বেশি কিচিরমিচির না করাই ভালো। আপনার বাসার সবাই আপনার মতো সকালে না–ও উঠতে পারে। নিজের মতো করে সকালের শান্ত পরিবেশ উপভোগ করুন, কাজ করুন। বেশি আওয়াজ করলে বকা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। ইতিমধ্যে আমার স্ত্রীর কাছে বেশ কয়েকবার বকা খাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। আগে উঠুন ভালো থাকুন। যতটা সম্ভব মৌনতা পালন করুন।

শুভ সকাল সবাইকে।

লেখক: অভিনেতা