শিশুর জন্য বিছানা...

রঙিন বিছানায় হাসিখুশি শিশু। ছবি: নকশা
রঙিন বিছানায় হাসিখুশি শিশু। ছবি: নকশা

বেবি কটে শিশু হাসছে-খেলছে, কখনো আবার কাঁদছে। আমাদের দেশে এ রকম দৃশ্য এখনো কমই দেখা যায়। তবে প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে এখন অনেক মা-বাবা বেবি কট কিনছেন সন্তানের জন্য। অনেকের মনে এখনো শঙ্কা কাজ করে। তবে বেবি কটের ইতিবাচক দিকও আছে। পাশ্চাত্যে শিশুর ঘরে বেবি কট অনেকটাই আবশ্যক বস্তু। কেনার সময় কিছু বিষয় ভাবনায় রাখতে হবে। তাহলেই অনেকখানি নিশ্চিন্ত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব মোতানাব্বী জানালেন, নবজাতকদের মায়ের বুকে ও মায়ের কোলে বেশি সময় রাখাটাই সব দিক থেকে উত্তম। খুব কম ওজনের শিশুদের আবার সরাসরি মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রাখতে বলা হয়। সাধারণত বেবি কটে শিশুকে তখনই রাখা হয়, যখন মা শারীরিক বা মানসিকভাবে খুব বেশি অসুস্থ থাকেন। অর্থাৎ, বেবি কট একটি আপত্কালীন ব্যবস্থা।
ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা ফেরদৌস জানালেন এমনটাই। মায়ের সঙ্গে থাকলেই শিশুর বিকাশ হয় সঠিকভাবে। তাই বেবি কটে প্রয়োজন ছাড়া শিশুকে রাখা ঠিক নয়। আর যেটুকু সময় রাখা হবে, তখনো শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা গেল বেবি কট কেনার সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে—

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

যেমন হলে ভালো
তুলার ম্যাট্রেস ব্যবহার করতে পারেন। তবে তা যেন খুব নরম না হয়। খানিকটা দৃঢ় গঠনের ম্যাট্রেস ব্যবহার করা ভালো। ম্যাট্রেসের আকার এমন হওয়া উচিত, যা কটের মধ্যে ঠিকঠাক বসে যায়। নইলে ফাঁকা অংশে শিশুর আঙুল-হাত-পা আটকে যেতে পারে। রেক্সিন–জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে চাইলেও এর ওপরে সুতি কাপড় বিছিয়ে দিতে হবে। বাড়তি যে কাপড়ের ওপর শিশুকে শোয়াচ্ছেন, সেটি যেন টানটানভাবে আটকে থাকে। নইলে এই কাপড়েই শিশুর নাক-মুখ অবরুদ্ধ করে দিতে পারে।
বেবি কটের রেলিংয়ের ফাঁকা অংশ যেন খুব বেশি ফাঁকা না হয়। শিশু পড়ে যেতে পারে। শিশুর মাথা ঢুকে যাওয়ার মতো ফাঁকাও যেন না থাকে। অনেক সময় খালি চোখে দেখে বোঝা যায় না ফাঁকা অংশে মাথা ঢুকতে পারে। রেলিংয়ের প্রতিটি গরাদের মধ্যে ফাঁকা থাকা উচিত ৬.৫ সেন্টিমিটার বা এরও কম। রেলিংয়ের গরাদগুলো যেন আড়াআড়ি না হয়ে লম্বালম্বি হয়। নইলে শিশু রেলিং বাইতে শুরু করতে পারে।

কোথায় রাখি
খোলা জানালা বা দরজার কাছে বেবি কট রাখবেন না। প্রয়োজনে ফ্যান ব্যবহার করুন। তবে সরাসরি ফ্যানের নিচেও বেবি কট রাখবেন না। শিশুর শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই খুব কমে যেতে পারে, যা শিশুর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এর তাপমাত্রাও খুব একটা কমিয়ে রাখা যাবে না। অর্থাৎ কক্ষের তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার নিচে নামানো যাবে না। বৈদ্যুতিক তার, সুইচ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরে রাখুন শিশুর কট। যে দেয়ালে ছবি, আয়না বা অন্যান্য সামগ্রী রাখা আছে, সেটির থেকে দূরে রাখুন বেবি কট। দেয়াল থেকে কিছু পড়ে গিয়ে শিশু আঘাত পেতে পারে।

রক্ষণাবেক্ষণ
বেবি কটের রেলিং বা ধারের নাট-বল্টু, লকিং সিস্টেম এগুলো কার্যকর আছে কি না, তা মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করে দেখুন। ম্যাট্রেস ও এর ওপর বিছানো কাঁথা-কাপড় পরিষ্কার ও শুকনা রাখুন, পরিষ্কার রাখতে অ্যালকোহল দ্রবণ ব্যবহার করতে পারেন।

খেয়াল রাখুন
শিশুকে ডানে কিংবা বামে কাত করে শুইয়ে রাখুন। মাঝেমধ্যেই খেয়াল করুন, শিশু নিজে নিজে চিৎ কিংবা উপুড় হয়ে যাচ্ছে কি না। চিৎ বা উপুড় অবস্থায় শিশুর দম আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রেলিংয়ের সবচেয়ে উঁচু অংশটা থেকে ম্যাট্রেসের দূরত্ব একটু বেশি হওয়াই ভালো (অন্তত ৫০ সেন্টিমিটার)। তাহলে শিশু সহজে পড়ে যাবে না।
বেবি কটের ম্যাট্রেসের ওপর বাড়তি কাঁথা-কাপড় রাখা যাবে না। তোয়ালে, বই, খেলনা কোনো কিছুই রাখা যাবে না। এগুলোর কারণে শিশু আঘাত পেতে পারে। কাপড়–জাতীয় জিনিসে দম আটকে যেতে পারে।
ম্যাট্রেস যেন ছেঁড়া না থাকে বা এতে কোনো উঁচু–নিচু অংশ না থাকে।
রেলিংয়ের দিক নিরেট হলে শিশুর দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যা তার বিকাশের অন্তরায়।

মশারিসহ এমন বেবিকট বাজারেই মিলবে
মশারিসহ এমন বেবিকট বাজারেই মিলবে

বাজার-বার্তা
কিডস প্যারাডাইসের সিনিয়র ম্যানেজার সৈয়দ গোলাম রাশেদ জানালেন, অধিকাংশ মানুষ কাঠের রঙের কাছাকাছি রং বেছে নেন বেবি কটের জন্য। অনেক ক্ষেত্রেই বাসার অন্যান্য আসবাব কিংবা ঘরের রঙের সঙ্গে মিল রেখে বেবি কটের রং বেছে নেওয়া হয়। মশারিসহও পাওয়া যায়, কোনোটি আবার একেবারেই খোলামেলা ধরনের। ইতালীয় ব্র্যান্ড পালির বেবি কট পাবেন কিডস প্যারাডাইসে। কিডস প্যারাডাইসের কিছু কট আলাদাভাবে শিশুকে শোয়ানোর জন্য, আবার কিছু কট মা-বাবার বিছানার সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া যায় প্রয়োজনমতো। কিছু কট প্রয়োজনমতো চেয়ার বা সোফায় রূপান্তর করে নেওয়া যায়। কোনোটি আবার হামাগুড়ি দিতে পারে, এমন শিশুর জন্য নির্দিষ্ট খেলার স্থান (যেখানে সে আবদ্ধ থাকবে) হিসেবেও পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করা যায়।
রাজধানীর নিউমার্কেটের কিছু দোকানে কিংবা পান্থপথের হক এন্টারপ্রাইজেও খোঁজ নিতে পারেন। অনলাইনেও কেনা যায়। নীল বা গোলাপি রঙের কটও বেছে নিতে পারেন। কিছু কটে চাকা থাকে, চাকা প্রয়োজনমতো লক করে নেওয়া যায়। কোনোটির নিচে বাচ্চার প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী (বাড়তি কাপড়, তোয়ালে প্রভৃতি) গুছিয়ে রাখার মতো বক্স থাকে। কিছু কট আছে, যা একই সঙ্গে দোলনা হিসেবে ব্যবহার করা যায়, চাইলে আবার দোলনাটা লক করে একটা স্থির কট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
কাঠ, প্লাইউড, প্লাস্টিক ও স্টিলের কট বাজারে পাওয়া যায়। স্টিল কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায়ও থাকে। ডিজাইন, ম্যাটেরিয়াল ও প্রাপ্ত সুবিধাভেদে দাম পড়বে ২০০০-৪৫০০০ টাকা।