ঘুমেই কি সৌন্দর্য

প্রশান্তির ঘুম সৌন্দর্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ছবি: নকশা
প্রশান্তির ঘুম সৌন্দর্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ছবি: নকশা

‘কুম্ভকর্ণের ঘুম’—বাগধারায় পড়ে এসেছি ছোটবেলা থেকে। তবে তেমন ঘুম কি আমরা ঘুমাই? ছোট্ট শিশুকে ঘুম পাড়াতে নানু-দাদুর গল্প সব সময়ই কার্যকর। আবার সকালে স্কুলে সময়মতো পৌঁছতে হবে, কিংবা এক্ষুনি না ঘুমালে বকুনি খেতে হবে—এমন নানা কথায় শিশুরা ঘুমিয়ে পড়ে খানিক ইতিউতি তাকিয়ে। বাদ সাধে বড়রাই!

ঘুম আসে না। কিন্তু চোখে জমাট ক্লান্তি। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস কিংবা অফিসের কাজের তাড়া থাকা সত্ত্বেও ঘুমাতে দেরি করা। সুযোগ থাকলে বেলা পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমানো—এ বুঝি তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যস্ত থাকা, হোক ভিডিও স্ট্রিমিং কিংবা এ রকম কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াও ‘রাতজাগা পাখি’ হয়ে থাকার উদাহরণ নিতান্ত কম নয়। কাকতালীয় হলেও এই প্রতিবেদন লেখা শুরুর সময়টাও রাত তিনটা! যদিও সেটি পেশাগত কারণেই।

কী হয় রাত জাগলে? কিংবা ঘুম কম হলে? ঘুমচক্রে এদিক-ওদিক হলে কি সৌন্দর্যের ক্ষতি হয়? জানতে চাই বিশেষজ্ঞদের কাছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক হরষিত কুমার পাল বলেন, ‘ত্বকের রং যেমনই হোক, স্বাস্থ্যকর ত্বকই সৌন্দর্যের মূল চাবিকাঠি। সুস্থ ত্বকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক ঘুম। অবশ্য ঘুমই একমাত্র বিষয় নয়। সামগ্রিকভাবে সুস্থ জীবনধারায় থাকার চর্চা করলে ঘুমও ভালো হবে, আর এসব বিষয়ের সমন্বয়েই ত্বক থাকবে সুন্দর।’

রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, ‘স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো ঘুমের ওপর নির্ভর করে। ভালো ঘুম না হলে এসব প্রক্রিয়া বাধা পায়। প্রাণবন্ত সৌন্দর্যের জন্য ভেতর থেকে সুস্থ থাকা আবশ্যক।’

ঘুমহীন সময়ে
ঘুমের সময় শরীরের ক্ষয়পূরণ প্রক্রিয়া চলে। রোজকার কাজকর্মে শরীরের যেসব ঘাটতি তৈরি হয়, সেগুলো পূরণের গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো ঘুমের সময়টা। প্রাপ্তবয়স্কদের গড়ে দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে ঘুম প্রয়োজন। এ তো গেল প্রয়োজনের কথা। প্রয়োজনটা পূরণ না হলে? ঘুমের অভাবে চোখের নিচে কালচে ভাব দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের অভাব হলে সহজেই ত্বকে বলিরেখা ও অন্যান্য দাগ দেখা দিতে পারে, বয়সের ছাপ পড়তে পারে আগেভাগেই। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে চেহারায় আলুথালু ভাব চলে আসতে পারে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ব্যক্তিত্ব পড়তে পারে সংকটের মুখে। অভিজ্ঞতা তাই বলে। রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রোগটা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় চলে যেতে পারে।

ভালো ঘুম চাই
ঘুমের জন্য রাতের সময়টাই শ্রেষ্ঠ। সুষম খাদ্যাভ্যাস আর নিয়মিত ব্যায়ামের চর্চা করা হলে এগুলোর স্বাস্থ্যকর প্রভাব পড়ে ত্বকের ওপর, আবার এ দুটি বিষয় ভালো ঘুমের জন্যও জরুরি। ব্যায়াম করতে পারেন সকালে বা বিকেলে। রাতেও ব্যায়াম করা যায়। তবে একেবারে ভরা পেটে ব্যায়াম করবেন না। মানসিক চাপ কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন ভালো ঘুমের জন্য। ঘুম আর মানসিক প্রশান্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত দুটি বিষয়। অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকলে সেগুলোর চিকিৎসা করান। ভেবে দেখুন, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার রোগী কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদেই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখুন, বিশ্রাম মানেই কিন্তু ঘুম নয়। ঘুমের বদলে শুয়ে বা বসে টেলিভিশন, কম্পিউটার বা মুঠোফোনের পর্দায় চোখ রাখলে চোখ আর মস্তিষ্ক কোনোটাই কিন্তু বিশ্রাম পায় না, বরং পেল বাড়তি কিছু চাপ।

ঘুমের আগে মুখ ধুয়ে নিন। চাইলে গোসলও করে নিতে পারেন। ত্বকে জলপাই তেল বা অন্য ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন, ঘুমের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বেশ খানিকটা সময় ত্বক আর্দ্রতা পেতে থাকবে। নাইট ক্রিমও ব্যবহার করা যায়। ঘুমের আগে মাথার ত্বক মালিশ করা যায়। এতে প্রশান্তি অনুভব করতে পারেন। তেল দিয়ে বা তেল ছাড়াই হতে পারে এ মালিশ। চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নিয়ে হালকা করে বেঁধে ঘুমান। গোসল করলে চুল আঁচড়ানোর আগে শুকিয়ে নিতে হবে।