বিসিএস: শেষ সময়ের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

একটা তথ্য দিয়েই শুরু করি। ৩৭তম বিসিএসে প্রার্থী ছিলেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন। প্রিলিমিনারিতে পাস করেছিলেন ৮ হাজার ৫২৩ জন। ৩৮তম বিসিএসে প্রার্থী ছিলেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন (বেড়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯২)। পাস করেছেন ১৬ হাজার ২৮৬ জন। 

এর অর্থ হচ্ছে, আপনি যদি সামনের ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটিতে পাস করতে পারেন, তাহলে অন্যদের থেকে এক বছর এগিয়ে গেলেন। আর যদি কোনো কারণে ফেল করেন, তাহলে আপনাকে পরের পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আরও একটি বছর। এবার আপনিই ঠিক করুন—এক বছর এগিয়ে যাবেন, না পিছিয়ে পড়বেন। শেষ সময়ের প্রস্তুতি এবং প্রিলিমিনারি পরীক্ষার কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলব বলে আজকের এই লেখা।

১. শেষ সময়ের প্রস্তুতির কিছু দিক
অবশ্যই মডেল টেস্ট দিতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটা বড় অংশ ঝরে পড়ে ভুল দাগানোর কারণে। ২০০টি প্রশ্ন অনেক প্রশ্ন। অনেকেই যেটা করেন, ‘ভুল না দাগানোর’ অভ্যাস আগে থেকে তৈরি করেন না। মনে করেন, হলে গিয়েই একবারে ভুল না দাগিয়ে সব ঠিক দাগিয়ে ফেলবেন, কিন্তু এটা একটা বড় অনুশীলনের বিষয়, আর এ জন্য আপনাকে ‘ভুল না দাগানোর’ অভ্যাসটা এখনই গড়ে তুলতে হবে। আমি যেভাবে এগিয়েছিলাম:

• প্রায় ১০০টি উত্তরপত্র ফটোকপি করে নিয়েছিলাম।
• প্রতিটি উত্তরপত্রের ওপর তারিখ, সঠিক দাগানোর পরিমাণ (সবুজ কালি দিয়ে) আর ভুল দাগানোর পরিমাণ (লাল কালি দিয়ে) লিখে রাখতাম।
• প্রতি ৫ থেকে ৭ দিন পরপর আমি উত্তরপত্রগুলো যাচাই করে দেখতাম, সঠিক দাগানোর পরিমাণ কতটা বাড়ল আর ভুল দাগানোর পরিমাণ কতটা কমল।
এভাবে অভ্যাস তৈরি করার কারণে পরীক্ষার হলে ভুল দাগানোর পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছিলাম।

পরীক্ষার ঠিক আগে আগে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কিছু মডেল টেস্ট আসবে, সেগুলো দেখার চেষ্টা করবেন। আর এখন যেহেতু নতুন বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করার আর সুযোগ নেই, সে ক্ষেত্রে প্রতিদিনের পত্রিকা পড়ার সময়টা এখন অন্য প্রস্তুতির দিকে দিলে ভালো হবে।

২। গাইড বইগুলো বিস্তারিতভাবে এখন না পড়ে মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় যে বিষয়গুলোতে আপনার সমস্যা হচ্ছে, নম্বর কম আসছে, সে জায়গাগুলো বারবার দেখে নিন।

৩। ‘প্রফেসর’স-এর বিশেষ সংখ্যা’ বইটি শেষ সময়ের প্রস্তুতির জন্য খুবই ভালো একটি বই। পারলে এটা কয়েকবার শেষ করুন এবং বিশেষ বিশেষ অংশগুলো দাগিয়ে রাখুন, যেন পরীক্ষার আগের রাতে (এবং সকালে) আপনি সেগুলো দেখে যেতে পারেন।

৪। ম্যাথের কিছু প্রশ্ন সব সময়ই আসে, যেমন বীজগণিতের সূত্রের ওপর ভিত্তি করে কিছু প্রশ্ন আসে, জ্যামিতির কোণের ওপর কিছু প্রশ্ন থাকে, সংখ্যাতত্ত্বের ওপরও বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে—এই বিষয়গুলোর ওপর শেষ সময়ের দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ‘Math Without Calculator’ বইটা দেখতে পারেন।

পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু প্রস্তুতি

* প্রবেশপত্রটি প্রিন্ট করে রাখুন। এ ক্ষেত্রে আমি সব সময় যেটা করতাম, ২-৩টা কপি সঙ্গে রাখতাম। এতে সুবিধা হলো, কোনো করণে এক কপি নষ্ট হলে কিংবা ছিঁড়ে গেলে অন্য কপিটা আপনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে বাঁচাবে। আরেকটা সুবিধা আমি পেয়েছিলাম, ম্যাথের রাফ করার জন্য পেছনের সাদা অংশটি ব্যবহার করেছিলাম (তবে এ ক্ষেত্রে সতর্কতার জন্য অবশ্যই পরিদর্শকের অনুমতি নিয়ে নিতে হবে)।

* ম্যাথে যদি খুব ভালো প্রস্তুতি থাকে, তাহলে একদম শুরুতে উত্তর দেবেন, অন্যথায় আমার মতো শেষেও উত্তর দিতে পারেন। কারণ, সে ক্ষেত্রে মাথা গরম হয়ে গিয়ে পারা উত্তর ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

* নৈতিকতার প্রশ্নগুলো এমন হয় যে এর প্রতিটি অপশনকেই সঠিক উত্তর বলে মনে হয়, তাই এ ক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্কতার সঙ্গে শুধু ১০০ শতাংশ সঠিক উত্তরটিই দাগানো উচিত এবং ১০-এ ৫ পেলেও এ ক্ষেত্রে এটা খুব ভালো নম্বর।

* কিছু প্রশ্ন বাদ দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে পুনরায় দ্রুত সেই প্রশ্নটা খুঁজে পাওয়ার জন্য একটা ছোট দাগ দিয়ে রাখুন প্রশ্নে।

* পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে হলে যাবেন এবং আপনার পাশের (সামনে, পেছনে, ডান ও বামের) মানুষের সঙ্গে অবশ্যই একটা ভালো সম্পর্ক রাখবেন। বিশ্বাস করুন, প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা—এই সব ধাপ পেরিয়ে আপনার পাশের কোনো একজনকে যদি আপনি আপনার সঙ্গে একসঙ্গে দেখতে পারেন, তাহলে সেই মানুষের সঙ্গে বাকি সবার থেকে আলাদা একটা আন্তরিকতা কাজ করবে সারা জীবন।

আমি সব সময়ই এটা বিশ্বাস করি যে ‘মানুষের চেষ্টা যেখানে গিয়ে শেষ হয়, সৃষ্টিকর্তার সাহায্য সেখান থেকে শুরু হয়’। তাই শেষ এই সময়ে অপ্রয়োজনীয় ইন্টারনেটের ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেই দেখুন না একবার। আর একটা ব্যাপার হলো, কারও বলে দেওয়া নিয়মগুলো যে লিখিত কোনো সংবিধান, তা কিন্তু নয়, আপনি নিজ থেকে যে পথটাকে অনুসরণ করে প্রস্তুতি নেবেন, ভবিষ্যতে হয়তো সেই পথটাই অন্য অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। শুভকামনা রইল সবার জন্য।

লেখক: ৩৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট