‘মুখের এক পাশের নিটোল রেখাটি দেখা যায়,
আর ঘাড়ের উপর কোমল চুলগুলি খোঁপার নীচে।
কোলে তার ছিল বই আর খাতা।
যেখানে আমার নামবার সেখানে নামা হল না।’
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতায় উঠে আসা চুল বাঁধার একটি ‘স্টাইল’। চুল সাজাতে এমন কত না স্টাইল! বছরের প্রথম দিনটি উদ্যাপনের উৎসবে বিশেষ স্টাইলে চুল বাঁধতে ভালোবাসেন কমবেশি সবাই।
বৈশাখী উৎসবে চুলের ধরনধারণ কেমন হতে পারে এবার? জানালেন মিউনি’স ব্রাইডালের রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন।
গতানুগতিকতা ছাপিয়ে
পয়লা বৈশাখে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলার একটা বিষয় থাকে। আবার শাড়ির পাশাপাশি পাশ্চাত্য ধারার পোশাকও বেছে নিতে দেখা যায়। পোশাক যেমনই হোক, খোঁপা বা বেণি যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। গতানুগতিক বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলা খোঁপার চেয়ে একটু সাদাসিধে ধরনের খোঁপাই বেশি মানাবে বলে মনে করেন তানজিমা শারমিন। ‘মেসি বান’ বা খানিক অগোছালো খোঁপা করতে পারেন।
পয়লা বৈশাখে পোশাকটা হয় সুতির, মেকআপ থাকে হালকা ধরনের, এর সঙ্গে হালকা ধাঁচের বাঁধা চুল ভালো দেখায়। চুল পাফ করে বা খুব বেশি স্প্রে ব্যবহার করে চুল না সাজালেই ভালো দেখাবে। সহজেই করা যায়, তবে গতানুগতিক ধারার বাইরে এমন একটি স্টাইল বেছে নিন। স্টাইলটা যেন আপনার চেহারার সঙ্গে মানানসই ও আরামদায়ক হয়। কপাল চওড়া হলে সামনে একটু ‘ব্যাংগস’ রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে একেবারে আঁটসাঁট করে সব চুল টেনে বাঁধলে ভালো দেখায় না।
বাঙালি রূপ আনাটা অত্যাবশ্যক নয়। পাশ্চাত্য ধারার চুলের স্টাইলেও বেণির নানান সমন্বয় লক্ষ করা যায়। অবশ্য পুরোনো বাঙালি ধারায় রয়েছে সাধারণভাবে বাঁধা বেণি। সাদাসিধে ধরনের বেণি বেছে নিতে পারেন। সাধারণভাবে করা বেণিকেই বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে পারেন। বেণিতে পোশাকের কোনো মোটিফের সঙ্গে মিলিয়ে যেকোনোটি বেছে নেওয়া যেতে পারে। এভাবে চুলের স্টাইলে আনতে পারেন নতুনত্ব। লম্বা চুলে যেমন বেণি মানানসই; আবার বাড়তি চুল ব্যবহার করেও বেণি করা যেতে পারে। ছোট চুলও আলাদা একটা ধরন। ধরনটা অনেকের পছন্দ। তবে চুল ছোট হলেও তা বাঁধার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা যায়।
যা খেয়াল রাখতে হবে
চুলের ধরন আর মুখের গড়ন যেমন চুল বাঁধার স্টাইল বেছে নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পোশাকের ধরনটাও এখানে মুখ্য। পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে নির্দিষ্ট ধরনের চুলের স্টাইল বেছে নিতে হবে বা পোশাকভেদে একেবারে ধরাবাঁধা কোনো চুলের স্টাইল বেছে নেওয়া জরুরি—বিষয়টি এমন নয়। নিজের ব্যক্তিত্বের দিকটিও মাথায় রাখুন। সব ধরনের চুলে সব চুলের স্টাইল করাও সম্ভব নয়। সব কটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। গরমের মধ্যে সারা দিন চুল খোলা রাখলে অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষজ্ঞ পরামর্শ চুল বেঁধে রাখুন।
অনুষঙ্গের ব্যবহার
পয়লা বৈশাখে চুলের অনুষঙ্গ হিসেবে ফুল ব্যবহার করতে পারেন। তবে সারা দিনের সাজের জন্য তাজা ফুল সকালে পরলে বিকেলের মধ্যেই তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুকনা ফুল বেছে নিতে পারেন। আবার বিকেলে নতুন তাজা ফুল পরার সুযোগ থাকলে তাজা ফুলই বেছে নেওয়া যায়। চাইলে কাঁটা, ক্লিপ, ব্যান্ড বা চুলের অন্য অনুষঙ্গ, যেটিতে বৈশাখের কোনো মোটিফ আছে কিংবা সাজের সঙ্গে, পোশাকের রঙের সঙ্গে বা উৎসবের সঙ্গে যেটির কোনো মিল রয়েছে, ব্যবহার করতে পারেন। চুল বাঁধার অনুষঙ্গ হিসেবে ফিতাও ব্যবহার করতে পারেন এদিন। ফিতা দিয়ে চুল বাঁধার বিষয়টি দেশীয় ভাব আনতে পারে, যদি তা চুলের স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে যায়।