এই সময়ে জ্বর ও কাশি

এই সময়ে শেষ রাত ও ভোরে তাপমাত্রা কমে যায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকে। আবার কোনো দিন হঠাৎ বৃষ্টি হয়ে ঠান্ডা লাগা। ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রার এই ওঠানামার ফলে কিছু কিছু ভাইরাস শরীরের ওপর আক্রমণের সুযোগ পায়। আবহাওয়ায় তাপমাত্রার এই দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে যাঁরা খাপ খাওয়াতে পারেন না, তাঁরাই এখন আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বরসহ সর্দি-কাশিতে।

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক আল-আমিন মৃধা বলেন, এমন আবহাওয়ার কারণে বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ছে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া৷ এর সঙ্গে আগাম বৃষ্টির কারণে মশাবাহিত বিভিন্ন ভাইরাসেরও সংক্রমণ বাড়ে। ফলে জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ছে৷ সঙ্গে শরীরজুড়ে ব্যথা। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে সাধারণত সাত দিনের মধ্যে এমনিই ভালো হয়ে যায়। হঠাৎ করে ঠান্ডা যাতে না লাগে, তার জন্য বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে৷

যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে

রোগী মূলত জ্বর, কেউ কেউ মাথাব্যথা, সর্দি, অরুচি, গা ব্যথা, কাশির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। ঠান্ডা সর্দির কারণে কান বন্ধ হতে পারে। কান বন্ধের সঙ্গে কানে ব্যথাও থাকে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। অনেক সময় শিশুর প্রচণ্ড সর্দি লেগে যায়। কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বরও দেখা দিতে পারে। তবে বড়দের ক্ষেত্রে জ্বর ততটা তীব্রভাবে না-ও হতে পারে।

জ্বর হলে কী করবেন

প্রথমেই জ্বর কমানোর ব্যবস্থা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনের পাশাপাশি সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে সারা শরীর মুছে দেওয়া (স্পঞ্জিং) উচিত। জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নেমে না আসা পর্যন্ত এই স্পঞ্জিং চালিয়ে যেতে হবে। ২-১ ঘণ্টার মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুদের দিকে বিশেষ নজর

ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত শিশু প্রায়ই পানিশূন্যতায় ভোগে। কেননা জ্বরের তাপে শরীর পানি হারায়। তাই শিশুকে প্রচুর পানি ও তরল খাবার দিন। শুধু পানি পান করতে না চাইলে ফলের রস, তরমুজ বা আঙুর, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদিও দিন। সেই সঙ্গে শিশুর দরকার প্রচুর বিশ্রাম। বেশির ভাগ শিশুর খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যায়, কিছুই খেতে চায় না। এমন খাবার দিন, যা অল্প খেলেও বেশ শক্তি পাবে। যেমন দুধ-চিনি দিয়ে তৈরি কোনো নাশতা, মুরগির মাংসের স্যুপ, পাস্তা, ফলমূল ইত্যাদি।

জ্বর বাড়লে গা মুছিয়ে দিন, সঙ্গে সাধারণ প্যারাসিটামল। ওষুধের সঠিক মাত্রাটি জেনে নিন চিকিৎসকের কাছ থেকে। নাক বন্ধ থাকলে স্যালাইন পানির ড্রপ ব্যবহার করা যায়। খুসখুসে কাশিতে মধু বা আদার রস বেশ আরাম দেবে। ভাইরাল ফ্লু পাঁচ থেকে সাত দিনের মাথায় এমনিতেই কমে যায়। কিন্তু জ্বর দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মাত্রার হলে, শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে বা সে খাওয়াদাওয়া একদম ছেড়ে দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সর্দি, কাশি ও গলাব্যথায় কী করবেন

সর্দি-কাশি বা সামান্য গলাব্যথা এমন কোনো বড় ব্যাপার নয়। তবে একবার ঠান্ডা লাগলে তা সারতে অন্তত এক সপ্তাহ লাগবেই। আর কাশি তো বেশ কয়েক দিন থাকতে পারে, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সাধারণ কাশির চিকিৎসা আপনিই করতে পারেন। এ ধরনের কাশি একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়। তবে কাশির সঙ্গে যদি জ্বর হয়, তাহলে গুরুত্ব দিতে হবে। ঠান্ডা খাবার, ফ্রিজের পানি পরিহার করতে হবে। কুসুম গরম পানি পান করতে পারলে ভালো হয়। কুসুম কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গলা গড়গড়া (গার্গল) করলে গলাব্যথা সহজেই ভালো হয়ে যায়। দিনে কমপক্ষে ২ বার ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে গড়গড়া করা উচিত। ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন।

শিশুর কাশি মানেই নিউমোনিয়া নয়

এই সময়ে শিশুরা যে সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগে, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিউমোনিয়া নয়। ভাইরাসজনিত এই রোগের নাম ব্রংকিওলাইটিস। ব্রংকিওলাইটিসকে অনেকে নিউমোনিয়া ভেবে ভুল করেন। ব্রংকিওলাইটিস দুই বছরের কম বয়সের শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। ব্রংকিওলাইটিসে আক্রান্ত শিশুকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করা যায়। তবে সুস্থ শিশুদের আক্রান্ত শিশু থেকে দূরে রাখতে হবে।

শিশুকে সিগারেট, মশার কয়েল ও রান্নাঘরের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখুন। ভাইরাসজনিত এই রোগে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। তবে শ্বাসকষ্ট খুব বেশি হলে, খিঁচুনি, ঠোঁট নীল বা কালো হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।

লেখক: চিকিৎসক