দেয়ালে সময়

ঘুম ভেঙেই চোখ চলে যায় দেয়ালঘড়ির দিকে। টিকটিক টিকটিক শব্দে সেই তো প্রথম তাড়া দেয় বিছানা ছাড়ার। শুধু সময় দেখাই না, ঘরের নান্দনিকতা বাড়াতে ও রুচির প্রকাশে ঘড়ির ব্যবহার অনেক পুরোনো। ঘড়িকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে অন্দররাজ্যে দৃষ্টিনন্দন আবহ তৈরি করা সম্ভব। শোবার ঘর, পড়ার ঘর, অতিথির ঘর, খাবার ঘর, বসার ঘর ও শিশুদের ঘর—সব ঘরের জন্যই বাজারে আছে দেয়ালঘড়ি।

ফারজানা’স ব্লিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফারজানা গাজী জানালেন, তুলনামূলক হালকা রঙের দেয়ালে গাঢ় এবং গাঢ় রঙের দেয়ালে হালকা রঙের ঘড়ি দেখতে ভালো লাগবে।

ঘরের যে দেয়ালে টেলিভিশন বা দেয়াল আলমারি থাকে, সেই দেয়ালগুলো বাদ দিয়ে অন্য কোনো দেয়ালকে ঘড়ি টাঙানোর জন্য বেছে নিতে হবে। কাঠের আসবাব বেশি আছে, এমন ঘরের ক্ষেত্রে কাঠের বা কাঠরঙা ঘড়ি বেছে নিলে সেটি ভালো লাগবে। শোবার ঘরের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে সাদামাটা নকশার ঘড়ি।

পারিবারিকভাবে পাওয়া দুষ্প্রাপ্য বা পুরোনো দিনের ঘড়ি রাখা যেতে পারে এমন ঘরে, যেখানে মেহমান এসে বসেন, সেটা হতে পারে বসার বা খাবার ঘর। শিশুদের ঘরের ক্ষেত্রে রঙিন, কার্টুন, স্মাইলি ফেস বা গাড়ির ডিজাইনের ঘড়ি বেছে নেওয়া উচিত।

দেয়ালঘড়িতে আছে নানা রং আর আকৃতির ভিন্নতা। সাদা, কালো, সোনালি, রুপালি, তামাসহ নানা রঙের ঘড়ির বাজারে স্থান পেয়েছে। জাহাজের নোঙর, মাছ, সাইকেল, কুঁড়েঘর, পশুর মাথাসহ নানা আকৃতি ও ডিজাইনের দেয়ালঘড়ি বাজারজুড়ে শোভা পাচ্ছে। কিছু ঘড়ি ঘণ্টা অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় ও শ্রুতিমধুর শব্দে সময় জানান দেয়। আছে পেন্ডুলাম, ঘূর্ণি, মোগল আমলের নকশা ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, গোলাকার, লম্বাটেসহ নানা আকারের ও খাঁজকাটা নকশার ঘড়ি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সময় একত্রে দেখা যায়, এমন ঘড়িও আছে। এ ছাড়া কাঠ, বাঁশ, স্টিল, প্লাস্টিকের ঘড়ির প্রচলন বেশি। ঝিনুক ও পাথর বসানো ঘড়িও কম নয়।

ঢাকা নিউমার্কেটে ঘড়ির পুরোনো দোকান ন্যাশনাল ওয়াচ কোম্পানির স্বত্বাধিকারী আবু তাহের খান জানালেন, কাঠ, স্টিল, প্লাস্টিক ছাড়াও তাঁর দোকানে আছে পুরোনো আমলের ‘গ্র্যান্ড ফাদার ক্লক’। এটি তাঁর দোকানের প্রধান আকর্ষণ। ১৫ দিন পরপর চাবি ঘুরিয়ে দিলে ঘড়ি চালু থাকে। এ ছাড়া আছে ময়ূর, অ্যান্টিক টু-পার্ট ওয়াচসহ নানা ধরনের ঘড়ি। তবে নতুন নকশার ঘড়ি ক্রেতার প্রধান চাহিদা। মাঝারি দাম ও মানের ঘড়ির ক্রেতার সংখ্যা বেশি।

পার্ল, রয়ম্যান, টুইস্টার, উইন, সিকোর ঘড়ি ভালো মানের বলে জানালেন বিক্রেতারা। বেশির ভাগ ঘড়ি চীনে তৈরি, অল্প কিছু আসে জাপান থেকে। অন্ধকারে সময় দেখার জন্য দেখা মিলল রেডিয়াম ঘড়ির।

হালফ্যাশনে একই নকশার দুটি আয়না ও একটি দেয়ালঘড়ির সেট ক্রেতাদের নজর কাড়ছে। হ্যাঙ্গার দিয়ে দেয়ালের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে দুই পাশ থেকে সময় দেখা যাবে, এমন ঘড়ির দেখা মিলেছে বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে। মানভেদে এক থেকে তিন বছরের গ্যারান্টির কথা জানালেন দোকানিরা।

নকশা, উপাদান ও আকারের ওপর নির্ভর করে ঘড়ির দাম নির্ধারণ করা হয়। সাধারণ দেয়ালঘড়ি ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যাবে। ফাইবারের তৈরি সাধারণ ঘড়ির দাম ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। ভালো মানের দেয়ালঘড়ি কিনতে চাইলে আপনাকে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হতে পারে। তবে ব্র্যান্ডের ঘড়ি হলে দামটা আরও বাড়বে। কাঠ বা দেশীয় উপাদানে তৈরি দেয়ালঘড়ির দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। স্টিল ১২০০ থেকে ৭০০০, প্লাস্টিক ৫৫০ থেকে ৩০০০, ডিজিটাল ঘড়ি ১০০০ থেকে ৭০০০ টাকায় পাওয়া যাবে।

দেয়ালঘড়ি কিনতে চলে যেতে পারেন পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীসহ নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট, পল্টন, গুলিস্তান, গুলশান ডিসিসি মার্কেট, মতিঝিল, স্টেডিয়াম মার্কেট, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের আশপাশের দোকানে। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত স্কয়ার কিংবা উত্তরার নর্থ টাওয়ারে ঘড়ির শোরুমে পাবেন নানা ধরনের ঘড়ি। এ ছাড়া আর্চিজ, হলমার্ক ও অনলাইনের অনেক দোকান সাজিয়েছে তাদের ঘড়ির পসরা।