হাঁটুন এবং ভালো থাকুন

শারীরিক সুস্থতার জন্য হাঁটার বিকল্প নেই। ছবি: অধুনা
শারীরিক সুস্থতার জন্য হাঁটার বিকল্প নেই। ছবি: অধুনা

চাকরিজীবী শামসুর রহমান। প্রতি রাতেই পরিকল্পনা করেন যে ঘুম থেকে উঠেই হাঁটতে বের হবেন। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে আর হাঁটতে যাওয়া হয় না। আবার অফিসে বসে শেষ বিকেলে হাঁটার নতুন পরিকল্পনা। এবার অফিস থেকে ফিরে বাড়ির পাশে পার্কে হাঁটার কল্পনা। কিন্তু সে পরিকল্পনাও ভেস্তে যায় শামসুর রহমানের। এভাবে দিন চলে যায়, রাত চলে যায়। শামসুর রহমানের আর হাঁটার পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নেয় না। শুধু শামসুর রহমানই নন, ব্যস্ত এই নগরে অনেকই রয়েছেন এই তালিকায়। যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ফিউচার ফিটনেস জিমের প্রশিক্ষক আবু সুফিয়ান জানান, হাঁটার জন্য সবার আগে দরকার মানসিক শক্তি। পরিকল্পনা করার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার ইচ্ছেটা মানসিক শক্তি দিয়ে এটা বাস্তবতায় নিয়ে আসতে হবে।

স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল
বাংলা ব্যাকরণে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ। যুগ যুগ এই প্রবাদ প্রচলিত। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য মানুষের আয়োজনের কমতি থাকে না। নিজেকে সুস্থ ও ভালো রাখতে কত কিছুই না করে। কিন্তু অনেকেই সুখ খুঁজে পায় না এবং শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। ছোট্ট একটি ‘টনিক’ই আপনার স্বাস্থ্য ও শরীর ভালো রাখতে পারে। হাঁটুন। হাঁটলে শারীরিকভাবে ভালো থাকার পাশাপাশি ত্বকও ভালো থাকে। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি চুল ভালো থাকে, হজমশক্তি বাড়ে। মানসিক ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি মনোবল বাড়ায়। নিয়মিত হেঁটেই নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন ষোলো আনা।

কখন এবং কত সময়
হাঁটা শুরু করার আগে বেশ কিছু প্রশ্ন মাথায় চলে আসে। কখন হাঁটবেন, কতক্ষণ হাঁটবেন, হাঁটার গতি কেমন হবে—নানান কিছু। আবু সুফিয়ান জানান, হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। এটিই সবচেয়ে নিরাপদ, খরচহীন এবং আরামদায়ক। একজন মানুষ নিয়মিত হাঁটলে সে সুস্থ থাকবেই। সময়–সুযোগ বুঝে যেকোনো সময়েই হাঁটতে পারেন। নাগরিক জীবনে সবাই কমবেশি ব্যস্ত থাকে। একেকজনের কাজের ধরন একেক রকম। তাই তাদের ব্যস্ততার সময়টাও আলাদা। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনি হাঁটার জন্য যখন সময় বের করতে পারবেন, তখনই হাঁটা উচিত। হাঁটার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো বিকেল। বিকেলবেলা প্রতিদিন সময় করে হাঁটতে পারেন তরুণ থেকে বয়স্ক যে কেউ। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা উচিত। তবে প্রতিদিন না হাঁটলে হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে ১৫০ মিনিট হাঁটলেও আপনি সুস্থ থাকবেন। মানে একজন মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা জরুরি। যাঁদের শারীরিক অবস্থা ভালো, তাঁরা বেশি সময় ধরেও হাঁটতে পারেন। শারীরিক সক্ষমতার ওপর বেশি সময় হাঁটতে পারেন। কিন্তু কখনোই ৩০ মিনিটের কম হাঁটা উচিত নয়। কারও যদি একবারে ৩০ মিনিট হাঁটার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তিনবার—প্রতিবার ১০ মিনিট করে ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন। অথবা একবার ২০ মিনিট, অন্যবার ১০ মিনিট করে ৩০ মিনিট। যেভাবে হোক আপনার ৩০ মিনিট সময় পূরণ করতে হবে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের হাঁটার বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিছু সাবধানতা
সকালে ঘুম থেকে উঠলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু ঘুম থেকেই উঠেই তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে যাওয়া ঠিক নয়। ঘুম থেকে উঠে কিছু সময় বিশ্রাম নিন। সেটা কমপক্ষে ৩০ মিনিট হওয়াই ভালো। এরপর আস্তেধীরে হাঁটতে বের হোন। আর সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারলে দিনটাও আপনার কাছে বেশ বড় মনে হবে। যাঁরা সন্ধ্যায় বা রাতে হাঁটেন, তাঁদের ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দু–তিন ঘণ্টা আগে হাঁটা উচিত।

আপনি সকালে হাঁটুন বা না হাঁটুন। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন।