উপকারী তরমুজের গল্প

প্রচণ্ড গরমে ধুলোবালু আর জ্যাম ঠেলে আপনি যখন কোথাও দাঁড়িয়ে একটু স্বস্তি পেতে চাইছেন, তখনই হয়তো আপনার চোখ পড়বে রাস্তার পাশের অস্থায়ী দোকানে কেটে রাখা টুকটুকে লাল তরমুজের ফালির ওপর। দেখেই আপনার জিব জলে ভরে উঠবে। হয়তো কানে ভেসে আসবে ছোটবেলার কোনো মধ্যদুপুরে ঝাঁকা ভরে তরমুজ বিক্রি করতে আসা ফেরিওয়ালার লম্বা ডাক, ‘এই তরমুজ লাগবে, তরমুজ।’ অথবা বাবার পকেট থেকে খুচরো টাকা মেরে কৈশোরে তরমুজ কেনার কথা ভেসে উঠবে চোখের সামনে। হয়তো ভেসে উঠবে মুখের ত্বকে তরমুজ ঘষতে থাকা আপনার কোনো বান্ধবীর ছবি, যার সঙ্গে এখন হয়তো আপনার আর যোগাযোগ নেই। সবকিছু ধূসর স্মৃতির অতলে হারিয়ে গেলেও তরমুজ এখনো আপনার চোখ আর জিবের তৃপ্তি মেটাতে রয়েই গেছে।

গ্রীষ্মের সঙ্গে তরমুজের রয়েছে গভীর যোগাযোগ। বিভিন্ন খনিজ আর ভিটামিনে ভরপুর সুস্বাদু এই ফল গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে জন্মায়। গরমকালেই তরমুজ ফলে। প্রচণ্ড গরমে যখন আপনার নাভিশ্বাস উঠছে, তখন এক ফালি তরমুজ আপনাকে করতে পারে তরতাজা, ঝরঝরে। পানিশূন্যতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এর কারণ, তরমুজের শতকরা প্রায় ৯১ ভাগই পানি। এই প্রাকৃতিক পানি কিনে খাওয়া ফিল্টারের পানির চেয়ে বিশুদ্ধ। এই তথ্যগুলোও আমাদের জানা। আজ তরমুজ নিয়ে কিছু অজানা গল্প হোক।

তরমুজের জন্মভূমি
পশ্চিম আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাকি মিসর—কোনটি তরমুজের জন্মভূমি, সেটি নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছ।

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বাংলা যে দেশের দ্বিতীয় অফিশিয়াল ভাষা সেটি সিয়েরালিওন। এই সিয়েরালিওন আফ্রিকার যে অঞ্চলে অবস্থিত সেই পশ্চিম আফ্রিকা তরমুজের জন্মভূমি হিসেবে বিখ্যাত—এ রকম একটি জনপ্রিয় মত চালু আছে।

তবে নাইজেরিয়া, নাইজার, সেনেগাল, আইভরি কোস্টসহ পশ্চিম আফ্রিকার ১৭টি দেশের কোনটি তরমুজের আদিভূমি, তা বলা মুশকিল। কিন্তু ইসরায়েলের গবেষক হ্যারি প্যারিস অনুমান করেছেন, প্রাচীন মিসরও তরমুজের আদিভূমি হতে পারে। প্রাচীন মিসরীয়দের তরমুজ চাষের ছবি দেখে তিনি বলতে চেয়েছেন, মিসরীয়দের কৃষির ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছরের পুরোনো এবং এটি পশ্চিম আফ্রিকার কৃষির চেয়েও প্রাচীন। প্রাচীন মিসরের দ্বাদশ রাজবংশের রাজা আমেনমহাট–১–এর শাসন আমলে ১৯৯১-১৯৬২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তরমুজের দেখা পাওয়া যায়। এ ছাড়া তুতেনখামেনের সমাধিমন্দিরের গায়ে যে চিত্র রয়েছে, সেখানেও তরমুজের চিত্র দেখা যায়। প্যারিস জানান, উত্তর আফ্রিকার স্থানীয় ‘গুরুম’ (Citrullus lanatus var. citroides) আধুনিক তরমুজের পূর্বপুরুষ।

আধুনিক তরমুজের প্রজাতি
তরমুজ হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত এই ফলের দুটি প্রজাতি রয়েছ—তরমুজ বা ওয়াটারমেলন এবং জামির বা চিট্রনমেলন নামে।

ক্যানসার ও হার্টের রোগ প্রতিরোধে তরমুজ
তরমুজে রয়েছ অ্যান্টিক্যানসার ইফেক্ট। গবেষকেরা জানিয়েছেন, তরমুজে রয়েছে লাইকোপেন ও কুকারবিটাসিন ই (cucurbitacin E)। লাইকোপেন কখনো কখনো কিছু ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। ধারণা করা হয়, ইনসুলিন-লাইক গ্রথ ফ্যাক্টর (আইজিএফ) কমানোর মাধ্যমে লাইকোপেন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। যদিও এ গবেষণার ফলাফল মিশ্র।

এ ছাড়া তরমুজে চিট্রুলিন (citrulline) নামে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যেটি শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড বাড়াতে সহায়তা করে। নাইট্রিক অক্সাইড উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলে, এটি হার্টের অসুখ থেকে আমাদের দূরে রাখতে পারে। এ ছাড়া তরমুজে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৬, সি, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম, যেগুলো হার্টের জন্য উপকারী হিসেবে চিহ্নিত।

চিত্রশিল্পে তরমুজ
মেক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলো ডি রিভেরার শেষ চিত্রকর্মের নাম কী? ‘ভিভা লা ডিভা’। এর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘জীবন দীর্ঘজীবী হও।’ ১৯৫৪ সালের ১৩ জুলাই মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মৃত্যুর আট দিন আগে তিনি এই ছবি এঁকেছিলেন। ছবিটি ছিল তরমুজকে কেন্দ্র করে আঁকা একটি স্টিল লাইফ। শুধু ফ্রিদা নন, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন শিল্পী তরমুজ নিয়ে ছবি এঁকেছেন।

এ রকম কয়েকটি ছবি রইল আপনাদের জন্য।

শিল্পী ফ্রিদা কাহলো ডি রিভেরা, সোর্স: বোর্ডপান্ডা
শিল্পী ফ্রিদা কাহলো ডি রিভেরা, সোর্স: বোর্ডপান্ডা
শিল্পী যোসেফ রিকো, সোর্স: গুগল
শিল্পী যোসেফ রিকো, সোর্স: গুগল
শিল্পী জিওভান্নি স্টাচি, সতের শতক, সোর্স: স্মিথ সোনিয়ান ম্যাগ
শিল্পী জিওভান্নি স্টাচি, সতের শতক, সোর্স: স্মিথ সোনিয়ান ম্যাগ
শিল্পী আলবার্ট একর্ট, সতের শতক, সোর্স: উইকিপিডিয়া
শিল্পী আলবার্ট একর্ট, সতের শতক, সোর্স: উইকিপিডিয়া
শিল্পী পল সেজান, সোর্স: স্কেপ মোশনস
শিল্পী পল সেজান, সোর্স: স্কেপ মোশনস
শিল্পী পালমার হেইডেন, সোর্স: ইপোর্টফলিস
শিল্পী পালমার হেইডেন, সোর্স: ইপোর্টফলিস