রোজার দিনে ত্বকের যত্ন

লোশন ব্যবহার করতে হবে প্রতিদিন। মডেল: নুসরাত ফারিয়া, ছবি: নকশা
লোশন ব্যবহার করতে হবে প্রতিদিন। মডেল: নুসরাত ফারিয়া, ছবি: নকশা

পবিত্র রমজান মাসে দৈনন্দিন নিয়মগুলো বদলে যায়। কাজের ধারায় আসে খানিক পরিবর্তন। ত্বকচর্চায় দেখা যায় এর প্রভাব। রোজ কিছুটা সময় পরিবর্তিত সময়সূচির মধ্যে যদি ত্বকচর্চা করা যায়, ত্বক ও চুল থাকবে সুস্থ।

এবারের রোজার দিনগুলো পার করতে হবে গরমের সময়। দিনগুলোও হবে দীর্ঘ। সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি না খেলে সারা দিনের পানির চাহিদা অনেক সময় পূরণ হয় না। বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, পানিশূন্যতায় ত্বকের আর্দ্রতা কমে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই পানি খাবার জন্য নির্ধারিত সময়টুকুতেই সারা দিনের পানির চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হতে পরামর্শ দিলেন তিনি।

ত্বকের আর্দ্রতায়

সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ-হাত-পা ধুয়ে ভারী ক্রিম বা লোশন খানিকটা পানির সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এতে আর্দ্রতা থাকবে ৩-৪ ঘণ্টা। দুপুরেও একইভাবে ত্বককে আর্দ্রতা দিন।

রাতের জন্য অন্য পদ্ধতি। জলপাই তেল ও পানি ভালো করে ঝাঁকিয়ে মিশিয়ে নিন। তুলার সাহায্যে ১০-১৫ মিনিট মালিশ করুন। এরপর রুমাল বা টিস্যু দিয়ে মুছে নিন। পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সব শেষে রাতের ক্রিম লাগাতে পারেন। রাতে আর ফেসওয়াশ ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।

জেনে নিন ফেসপ্যাক

সারা দিন কাজে ব্যস্ত। ঘুমানোর আগে হয়তো একটু সময় হতে পারে ফেসপ্যাক ব্যবহারের। ফেসপ্যাক ব্যবহারের আগে ফেসওয়াশ ও ক্লিনজারের সাহায্যে ত্বক পরিষ্কার করে নিলে খুবই ভালো হয়। সব সময় সেটি সম্ভব না হলেও কখনোই ধুলাবালি ত্বকে ফেসপ্যাক ব্যবহার করবেন না।

 মুলতানি মাটি কিংবা চন্দনের সঙ্গে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন।

 মসুরের ডালের বেসন, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, মধু ও ডিমের সাদা অংশ ব্রাশের সাহায্যে মিশিয়ে মিশ্রণটি ১০ মিনিট রেখে দেওয়ার পর ত্বকে ব্যবহার করুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন এই প্যাক ব্যবহার করা যায়। এতে রোদে পোড়া ভাব ও শুষ্কতা কমে আসবে, ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে। ইফতারের সময় অনেক ধরনের ফল থাকে। সেসবও কাজে লাগানো যায়। পাকা কলা ও মধু চটকে নিতে পারেন অথবা পাকা পেঁপে সামান্য মধু দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। মিশ্রণটুকু তুলার বলে নিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে মালিশ করে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এক দিন কলার প্যাক, আবার এক দিন পেঁপের প্যাক, এভাবে ব্যবহার করলে ভালো। শসার টুকরা দিয়েও ত্বক মালিশ করতে পারেন কোনো একদিন, ত্বক পরিষ্কার থাকবে।

ঠোঁট থাক সুস্থ

এই সময় ঠোঁট ফেটে যেতে পারে। প্রতিদিন দুধের সঙ্গে জলপাই তেল বা নারকেল তেল মিশিয়ে তুলার বলের সাহায্যে ঠোঁটে ১০-১৫ মিনিট মালিশ করুন। এতে ঠোঁট শুষ্ক হবে না, চামড়াও উঠে আসবে না। কালচে ভাব দূর করার জন্য বিট রুট, দুধ ও নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে তুলার বলে নিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে ঠোঁটে মালিশ করুন প্রতিদিন বা এক দিন পরপর।

চুলের যত্ন

চুলের যত্নে এই সময় উষ্ণ তেল মালিশ করুন ১ দিন বা ২ দিন পরপর। তেল গরম করে সামান্য পানি মিলিয়ে নিয়ে এরপর মালিশ করা ভালো। পানির অভাবে চুলে যে শুষ্কতা দেখা দেয়, তা দূর হবে।

সপ্তাহে ১-২ দিন চুলের বিশেষ ক্রিম বা স্পা ক্রিম দিয়ে ডিপ কন্ডিশনিং করা যায়। তবে বাজার থেকে কেনার সময় ভালো মানের ব্র্যান্ডের পণ্য বেছে নিন।

চাইলে এর পরিবর্তে বাড়িতেও প্যাক তৈরি করতে পারেন। চুলের প্যাক বিষয়ে শারমিন কচির পরামর্শ-

 ডিমের সাদা অংশ, টকদই ও নারকেল তেল ভালো করে ব্লেন্ড করে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগান। ১ দিন পরপর এ প্যাক ব্যবহার করা ভালো। এ ছাড়া কলা ব্লেন্ড করে বা চটকে ছেঁকে নিতে পারেন। এরপর এর সঙ্গে টকদই, মধু, ডিমের সাদা অংশ মিলিয়ে ডিপ কন্ডিশনিং ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে চুলের গোড়া শক্ত হবে। সপ্তাহে ১ দিন এ প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। চুলের আগা ফেটে গেলে চায়ের লিকার ও লেবুর রস দিয়ে এই অংশ মালিশ করুন ১৫-২০ মিনিট। মালিশ করার পরিবর্তে আঁচড়াতেও পারেন। সপ্তাহে ২ দিন এ প্যাক ব্যবহার করুন, যত দিন না ফাটা ভাব দূর হয়। তরল চুলের প্যাকগুলো তুলার প্যাডের মাধ্যমে চুলে লাগানো ভালো। বর্গাকারে তুলা নিয়ে প্যাড তৈরি করে নিতে পারেন। তবে চুলে রং করা থাকলে লিকার, মেহেদি, লেবু বা টকদই আছে, এমন কোনো প্যাক ব্যবহার করবেন না। এসবের পরিবর্তে ডিমের আমিষ প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।