কল্পনার রাজ্যে সারাবেলা

ফ্যান্টাসি কিংডমের পানির রাজ্য। ছবি: খালেদ সরকার
ফ্যান্টাসি কিংডমের পানির রাজ্য। ছবি: খালেদ সরকার

‘সকাল ছয়টায় রওনা দিয়ে সাড়ে ১০টায় এসে পৌঁছেছি। অসহনীয় গরম আর রাস্তার যানজটের ধকল এখানে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ভুলে গেছি। কেবলই মনে হচ্ছে, এ রকম আনন্দের বিনিময়ে ওইটুকু কষ্ট করাই যায়।’ কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জ থেকে ফ্যান্টাসি কিংডমে বেড়াতে আসা দিলীপ দাস। তিনি একা আসেননি। ১৩ জনের একটি দল নিয়ে এসেছেন। সবার চোখেমুখেই অভিন্ন আনন্দের ছাপ।

১৩ মে দিনভর এমন আরও অনেক দর্শনার্থীর দেখা মিলল ফ্যান্টাসি কিংডমে। যেমন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আসা পাঁচজনের দলটি। মা, পিসি আর জ্যাঠার সঙ্গে আসা দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া অঙ্কিতা। এক কর্মী জানালেন, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় দর্শনার্থীদের ভিড় এ সময় কিছুটা কম থাকে। তবে সবার প্রাণচাঞ্চল্যে হেরফের নেই কিন্তু এতটুকু। রাইডগুলোতে উঠে দর্শনার্থীদের আনন্দ চিৎকার, কৃত্রিম প্রাণীদের সঙ্গে শিশুদের খুনসুটি, ওয়াটার কিংডমে জলপ্রেমীদের ডুবসাঁতার, ঢেউয়ের তালে নেশাগ্রস্ত দুলুনি—সবকিছুই চলছে সমানতালে।

ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের কোল ঘেঁষে জামগড়ায় বিনোদনের এই কল্পরাজ্য। সৌন্দর্যমণ্ডিত সুবিশাল প্রবেশদ্বার। মাথা তুলে ওপরে তাকাতেই দেখা যায়, দুই পাশ থেকে দুই হাত তুলে যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন ছোট্ট রাজা-রানি। হ্যাঁ, রাজা-রানিই বটে। বিনোদনের এই স্বর্গরাজ্যটি গড়ে উঠেছে যে কল্পিত রাজা-রানির থিমকে কেন্দ্র করে, অভ্যর্থনারত সেই ছোট্ট রাজা আশু আর রানি লিয়া। যে রাজা-রানির রাজ্য প্রতিনিধিত্ব করছে রাজধানীর অদূরের ঐতিহ্যবাহী ‘আশুলিয়া’ অঞ্চলটিকে। এই গল্প জানা গেল কনকর্ড কমিউনিকেশনের কর্তাদের কাছে।

প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব

আধুনিক ইট–বালু–সুরকির নির্মাণযজ্ঞের সঙ্গে পরিবেশের একটা চিরকালীন বৈরিতা যেন। আপনি যদি নিখাদ, নির্ভেজাল প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে থাকেন বিনোদনের এই স্বর্গরাজ্যে এসে আপনাকে ভাবতে হবে ভিন্নভাবে। ভেতরে ঢুকে সামনে কিংবা ডানে–বাঁয়ে যেদিকেই দৃষ্টি রাখবেন, এক সবুজ সতেজ আর স্নিগ্ধ ভালো লাগায় বুজে আসবে সেই দৃষ্টি। প্রকৃতির সঙ্গে কোনোরূপ সংঘর্ষ নয়, এক অলিখিত পরিবেশসম্মত সন্ধি করেই যেন পুরো ফ্যান্টাসি কিংডমকে সাজানো হয়েছে।

ফ্যান্টাসি কিংডমের প্রবেশপথ
ফ্যান্টাসি কিংডমের প্রবেশপথ

প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যকে অতি যত্নে অক্ষত রেখে পার্কটিকে সাজানো হয়েছে। দুরন্ত গতির রোলার কোস্টার, জায়ান্ট ফেরিস হুইল, জুজু ট্রেন, হ্যাপি ক্যাঙারু, বাম্পার কার, ম্যাজিক কার্পেট, সান্তা মারিয়া, জায়ান্ট স্প্ল্যাশ, ভোর্টেক্স টানেল কিংবা ইজিডিজি; ছোট–বড় সব বয়সী দর্শনার্থীদের জন্য এমন সব দারুণ রাইড। হাঁটতে হাঁটতে সামনে পড়বে ভার্চ্যুয়াল অ্যাকোয়ারিয়াম টানেল। আলো–আঁধারির সুড়ঙ্গটির ভেতরে ঢুকতেই একটা গা–ছমছমে অনুভূতি! সুড়ঙ্গ পেরোতেই পানির রাজ্য ওয়াটার কিংডম। রাইড ওয়েভ পুলের কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট সাগরের উত্তাল ঢেউ, স্লাইড ওয়ার্ল্ড, ফ্যামিলি পুল, টিউব স্লাইড, লেজি রিভার, মাল্টি স্লাইড, ওয়াটার ফল, ডুম স্লাইড, লস্ট কিংডম, ড্যান্সিং জোন; বৈশ্বিক উষ্ণতায় ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠা পৃথিবীর পরিবেশ থেকে রাইডগুলো আপনাকে কিছু সময়ের জন্য দেবে স্বস্তির শীতল পরশ।

প্রথমবারের মতো এক্সট্রিম রেসিং গো কার্ট সংযোজিত হয়েছে ফ্যান্টাসি কিংডমে। ছোট চার চাকার প্রায় মাটি ছুঁই ছুঁই এই রেসিং কারগুলো এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে। ফ্যান্টাসি কিংডমের আরেক অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ‘হেরিটেজ পার্ক’। ঐতিহাসিক স্থাপত্যনির্ভর, শিক্ষার্থীবান্ধব হেরিটেজ পার্কে বিখ্যাত সব স্থাপনার রেপ্লিকাগুলো শোভা পাচ্ছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় সংসদ ভবন, কান্তজিউ মন্দির, ষাটগম্বুজ মসজিদ, আহসান মঞ্জিলসহ সংরক্ষিত হয়েছে কৃষিনির্ভর সাধারণ মানুষের জীবনচর্চার নানা উপাদান।

চলছে ঈদের প্রস্তুতি

এই সময়ে ভেতরে ঢুকেই কর্তৃপক্ষ আর কর্মীদের মুখর ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। দর্শনার্থীদের জন্য নতুন নতুন আধুনিক সেবা, বিনোদন ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পার্কের নানা উন্নয়ন, পরিমার্জন, নতুন রাইড নির্মাণ প্রভৃতি কাজ চলছে পুরোদমে। ২৬ মে চালু হতে যাচ্ছে নতুন রাইড ‘রক অ্যান্ড রোল’। সংগীতের তালে তালে ওপর-নিচ, ঘুরে ঘুরে নৃত্যের এক অনন্য বিনোদনের রাইড এটি। ঈদ উপলক্ষে রয়েছে ডিজে শো, ড্যান্স শো, গেম শো, র‌্যাফল ড্র, অ্যাক্রোব্যাট শোসহ বিভিন্ন আয়োজন।

যা খেয়াল রাখবেন
ফ্যান্টাসি কিংডম সরকারি ছুটির দিনগুলোয় খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। সপ্তাহের অন্যান্য দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা। ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বলে যেকোনো অবস্থান থেকেই যাতায়াত বেশ সহজ। রাজধানীর মতিঝিল থেকে শাহবাগ, শুক্রাবাদ, আসাদগেট, গাবতলী, সাভার, নবীনগর হয়ে যেমন যাওয়া সম্ভব, তেমনি মহাখালী থেকে আবদুল্লাহপুর হয়েও যাওয়া যায়। বিনোদন ছাড়াও রাতযাপন কিংবা অবস্থানের জন্য ভেতরে রয়েছে রিসোর্ট আটলান্টিস।
যোগাযোগ: ০১৯১৩-৫৩১৪৭৪
ওয়েবসাইট: www.fantasy-kingdom.net.bd