একঝলকে চট্টগ্রামের ঈদ পোশাক

যুগল পোশাকে দুই মডেল
যুগল পোশাকে দুই মডেল

বয়স সবে আঠারো। এই বয়সেই ফ্যাশন ডিজাইনে হাত পাকিয়েছেন। শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ, ফতুয়াতে নিজের ভাবনার আলো ছড়িয়েছেন। আর এতেই বাজিমাত। হাতে উঠে এল সেরা ফ্যাশন ডিজাইনারের পুরস্কার। তিনি জান্নাতুল ফেরদৌস। সবাই চেনেন মালিহা নামে।

চট্টগ্রামে ৪ মে অনুষ্ঠিত বার্জার-প্রথম আলো ঈদফ্যাশন প্রতিযোগিতা-২০১৯–এ শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ, যুগল পোশাক, ফিউশন ও ফতুয়া বিভাগে ৯টি পুরস্কার জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মালিহা। সেরাদের সেরা হয়ে সে কী উচ্ছ্বাস তাঁর!

শাড়িতে হাতে অাঁকা নকশা ও সুতার কাজ। ছবি: সৌরভ দাশ ও জুয়েল শীল
শাড়িতে হাতে অাঁকা নকশা ও সুতার কাজ। ছবি: সৌরভ দাশ ও জুয়েল শীল

মালিহার ব্র্যান্ডের নাম ‘রাজকন্যা’। এই ব্র্যান্ড নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন তাঁর। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তিনি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। প্রথমবার দুটি পুরস্কার জিতেছেন। ভালো কাজ করে পোক্ত হয়ে এসে এবার হলেন সেরাদের সেরা। মালিহার ভাষায়—এই প্রতিযোগিতায় কাজের পরখ হয়। শুধু মালিহা একা নন, মুনাজ্জা, আবদুল্লাহ ইবনে সৈয়দ, আয়েশা রুবাইয়াতের মতো তরুণ ডিজাইনাররাও পুরস্কার জিতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

প্রথম আলো ঈদফ্যাশন প্রতিযোগিতার গল্পটা এ রকম। প্রতিবছর এক ঝাঁক নতুন ডিজাইনারের স্বপ্ন ডানা মেলে এই আয়োজন থেকে। ২১ বছরের পথচলায় চট্টগ্রামকে দিয়েছে অনেক ডিজাইনার। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ব্র্যান্ড। এর মধ্যে অন্যতম ফ্যাশন হাউস নিডলওয়ার্ক, শৈল্পিক, মিয়াবিবি, নিহাল ওয়ারড্রপ ও নক্ষত্র।

শাড়িতে হাতে অাঁকা নকশা ও সুতার কাজ। ছবি: সৌরভ দাশ ও জুয়েল শীল
শাড়িতে হাতে অাঁকা নকশা ও সুতার কাজ। ছবি: সৌরভ দাশ ও জুয়েল শীল

চট্টগ্রামের ফ্যাশনজগতের সবচেয়ে বড় এই আয়োজনের এবার ছিল ২১তম আসর। পাঁচ তারকা হোটেল র​্যাডিসন ব্লু চিটাগাং বেভিউর মোহনা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় জমজমাট এই ফ্যাশন শো। ফ্যাশন কিউর পাশাপাশি ছিল গান, নৃত্য ও কথামালা। ঘূর্ণিঝড় ফণীর আতঙ্ক ছিল। এরপরও সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠান শুরুর আগেই মিলনায়তনভর্তি দর্শক জানান দেয় অপেক্ষাটা সারা বছরের। ঈদের পোশাকের আগাম এক ঝলক দেখে নেওয়া যায় বলে সবার আগ্রহ এই অনুষ্ঠান ঘিরে। অনুষ্ঠানের পর্দা ওঠে সৃষ্টি কালচারাল ইনস্টিটিউটের সমবেত নৃত্যের মধ্য দিয়ে।

ইমতুর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক প্রদর্শনী চলে। ফ্যাশন কিউয়ের প্রথমেই ছিল শাড়ি। মঞ্চে আলো ছড়ান ছয় মডেল। নানা রঙের বাহারি নকশার শাড়ি দৃষ্টি কেড়েছিল দর্শকদের। শাড়িতে দেখা গেছে উজ্জ্বল রং—লাল, নীল, হালকা সবুজ, ঘিয়ে, মেরুন প্রভৃতি। কাপড়ে প্রাধান্য মসলিন ও সিল্ক। বৈচিত্র্য ছিল ব্লাউজে।

পরপর শাড়ির দুটি কিউর পর আসে ছেলেদের উৎসবের প্রধান পোশাক পাঞ্জাবি। এবারের ঈদ পোশাকে গরমের কথা চিন্তা করে আরামদায়ক কাপড়ে নজর দিয়েছেন ডিজাইনাররা। সুতি, এন্ডি সিল্ক ও সিল্কের কাপড়ে হালকা কাজ। কিছু পাঞ্জাবি ছিল প্যাটার্ন নির্ভর। রং ছিল চোখ সওয়া হালকা সবুজ, সাদা ও ঘিয়ে।

দেখা গেছে বাটিকের কাজ করা পোশাক
দেখা গেছে বাটিকের কাজ করা পোশাক

এরপর সালোয়ার-কামিজ পরে মঞ্চে আসেন মডেলরা। সালোয়ার-কামিজে হাতার কাটে কিছুটা ভিন্নতা ছিল। এ ছাড়া মসলিন, সুতি ও সিল্কের কাপড়ে ছিল সবুজ, নেভি ব্লু, সিলভার, গোলাপি, সাদা প্রভৃতি রং। এভাবে একে একে চলে ফিউশন, যুগল পোশাকেরও প্রদর্শনী। পাশ্চাত্য ধাঁচে তরুণীদের ফিউশন পোশাক এবারও নজর কেড়েছে।

এবারের প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ডিজাইনার আমিনা রহমান, নাসরিন সরওয়ার, নুজহাত কৃষ্টি, মাশরুর নিহাল ও চিত্রশিল্পী রেজাউল হক খান। প্রতিযোগিতায় ১১টি বিভাগে ৩৩টি পুরস্কার পায় বিভিন্ন বুটিক হাউস। সেরাদের সেরা হয় রাজকন্যা বুটিক। এর আগে দুই শতাধিক পোশাক থেকে ৬০টি পোশাক প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা রন্টি। গানের পর কথামালায় প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ২১ বছর ধরে এই প্রতিযোগিতা এ অঞ্চলের ডিজাইনার ও ফ্যাশনপ্রিয় মানুষের কাছে অতিপরিচিত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি ফ্যাশনে এনেছে বৈচিত্র্য।

বার্জার বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড-ইন্ডাস্ট্রিয়াল, মেরিন অ্যান্ড স্পেশাল কোটিং সৈয়দ মোহাম্মদ নাসিম এমন একটি আয়োজনের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান। আরও বক্তব্য দেন জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মহাব্যবস্থাপক সুব্রত শর্মা।

পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকও ছিল প্রতিযোগিতায়
পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকও ছিল প্রতিযোগিতায়

বার্জার পেইন্টসের সৌজন্যে অনুষ্ঠিত এবারের প্রতিযোগিতার কো-স্পনসর হিসেবে ছিল গোল্ডেন ইস্পাত ও জিপিএইচ ইস্পাত। এবার সম্প্রচার সহযোগী নাগরিক টিভি, ভ্রমণ সহযোগী রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও রূপসজ্জা সহযোগী ছিল পারসোনা। ফ্যাশন শোর কোরিওগ্রাফার ছিলেন বুলবুল টুম্পা। মঞ্চসজ্জা করেন শিল্পী সুব্রত বড়ুয়া।

পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকও ছিল প্রতিযোগিতায়
পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকও ছিল প্রতিযোগিতায়