টিলায় বসে খাওয়াদাওয়া

রেস্তোরাঁ থেকে দেখা যায় ডাউকি শহর। ছবি: আনিস মাহমুদ
রেস্তোরাঁ থেকে দেখা যায় ডাউকি শহর। ছবি: আনিস মাহমুদ

সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকি বাজারে সারি সারি দৃষ্টিনন্দন বসতি। গাছগাছালি ভরা সেখানকার সবুজ পাহাড়ে একটু পরপরই সাদা রেখা। ভালো করে তাকালেই বোঝা যায়, এসব রেখা আসলে একেকটি জলপ্রপাত। মূলত বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। সেই সঙ্গে পাহাড়ের ঠিক চূড়ায় লেপ্টে থাকা আকাশে সাদা-কালো মেঘের ওড়াওড়ি যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। প্রকৃতির মায়াবী এই দৃশ্য সহজে উপভোগ করা যায় জাফলং ভিউ রেস্তোরাঁয় বসে। পর্যটকদের কাছে জাফলংয়ের জল-পাথরের মোহনীয় সৌন্দর্যের পাশাপাশি এ রেস্তোরাঁটিও এখন প্রিয় এক স্থানে রূপ নিয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টের পাশের গুচ্ছগ্রাম ও বিজিবি ক্যাম্প এলাকার এক উঁচু টিলায় রেস্তোরাঁটির অবস্থান। খাবারের পাশাপাশি নৈসর্গিক নান্দনিকতার পরশ নিতে দূরদূরান্তের পর্যটকেরা ছুটে আসছেন এখানে। ভ্রমণের পাশাপাশি সুস্বাদু খাবারের স্বাদ—দুটোই এখন জাফলংয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য এক বিষয়। এ ছাড়া রেস্তোরাঁর দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাও প্রথম দর্শনেই মুগ্ধতা ছড়াবে! পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে সাজানো রেস্তোরাঁটিতে রয়েছে ঐতিহ্যের ছাপ। এর ছাদের অংশ সাজানো হয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাঁশের চাটাই দিয়ে। রেস্তোরাঁর বাইরে শিকায় ঝুলিয়ে রাখা অসংখ্য হারিকেন আর রঙিন হাঁড়িগুলোও দেখার মতো। ২০১৭ সালের জুন মাসে চালু হওয়া এ রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে ১০০ মানুষ বসে খেতে পারেন।

রেস্তোরাঁর পরিচালক ওমর সানি জানান, বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তবর্তী টিলার ওপরে রেস্তোরাঁর অবস্থান। সামান্য দূরেই ভারতের ডাউকি বাজার। সেখানে সারি সারি টিলা। রাতের বেলাও এর সৌন্দর্য দেখার মতো। দূরের ডাউকি বাজারের উঁচু-নিচু পাহাড়ে যখন বাতি জ্বলে, তখন এগুলো দেখতে অনেকটা জোনাকি পোকার মতোই মনে হয়। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে সুস্বাদু ও মানসম্মত খাবারের বিষয়টি প্রথমেই এখানে নিশ্চিত করা হয়।

চাহিদা অনুযায়ী সব খাবারই মেলে জাফলং ভিউ রেস্তোরাঁয়। অন্দরের ব্যবস্থাপকেরা জানান, ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডালসহ বাঙালি খাবারের সবই মেলে। এখানে তাজা বোয়াল, রুই, ট্যাংরা, পাবদাসহ আশপাশের হাওর-বিলের দেশি মাছ মেলে। এ ছাড়া ইলিশ, মোরগ, খাসি, গরু , শুঁটকি, নানা পদের সবজি এবং ভাজি-ভর্তাও মেলে। সঙ্গে আছে কিছু ফাস্ট ফুডও। এগুলোতেও থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ‘পার্সেল’ সুবিধাও রয়েছে। জনপ্রতি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় এখানে খাবার পাওয়া যায়।

রেস্তোরাঁর অন্দরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন। আশপাশের খোলা জানালা-দরজা দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢোকে। এমন চমৎকার পরিবেশের পাশাপাশি রন্ধনশালার পরিবেশ এবং খাবার সরবরাহকর্মীদের পোশাকও পরিচ্ছন্ন। রেস্তোরাঁয় তৈরি মুখরোচক নানা পদের খাবারের মধ্যে তন্দুরি চিকেন, ইলিশ ভাজি, খাসির রেজালা, স্পেশাল বিফ কারির চাহিদা বেশি। ছোট মাছের চাহিদাও বেশ। রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ মো. মফিজুর রহমান জানালেন, এ রেস্তোরাঁর বিশেষত্ব হচ্ছে সব রান্নাই হয় লাকড়ির চুলায়।

জাফলং ভিউ
জাফলং ভিউ

রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, ‘পর্যটকেরা যেন পর্যটন স্পট দেখা শেষে ভালো একটি পরিবেশে বসে বিমলানন্দে সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিতে পারেন, এটি মাথায় রেখেই রেস্তোরাঁটি চালু করেছি। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুখরোচক ও মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি। ভালো লাগছে, ইতিমধ্যে রেস্তোরাঁটি পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। কেবল ব্যবসা নয়, পর্যটকদের সেবা দেওয়াও আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।’