রোজায় স্বাস্থ্যকর ডায়েট পরিকল্পনা

রোজায় সাহ্‌রি ও ইফতারের সময় স্বাস্থ্যকর খাবার শরীরের জন্য ভালো। ছবি: অধুনা
রোজায় সাহ্‌রি ও ইফতারের সময় স্বাস্থ্যকর খাবার শরীরের জন্য ভালো। ছবি: অধুনা

আমাদের দেশে সাধারণত ইফতারে এত ভাজাপোড়া আর বেশি ক্যালরিসম্পন্ন খাবার থাকে যে বা যাঁরা ডায়েট করছেন, তাঁদের ডায়েট পরিকল্পনার বারোটা বেজে যেতে বেশি সময় লাগে না।

অনেকেই আবার ভাবেন, রোজার সময় সারা দিন না খেয়ে থাকলে ওজন এমনিতেই কমে যাবে, শুধু শুধু ডায়েটের কী দরকার! কিন্তু সারা দিন খালি পেটে থেকে ইফতারে যদি মাত্রাতিরিক্ত ভাজাপোড়া আর মিষ্টিজাতীয় খাবার দিয়ে পেটপূর্তি শুরু করেন, তাহলে ওজন কমবে না, বরং দেখা যাবে ঈদে পরার জন্য শখ করে যেসব পোশাক বানিয়েছেন, সেসব আর পরা যাচ্ছে না বাড়তি ওজনের কারণে। একটু বুঝেশুনে খেলে বাড়তি ওজন এড়ানো যায়।

ইফতারে নয় ভূরিভোজ

আমরা ইফতার শুরুই করি বিভিন্ন ধরনের শরবত, মিল্ক শেক আর তেলে ভাজা মুখরোচক খাবার দিয়ে। পিঁয়াজি, বেগুনি, চপ, পাকোড়া আর মিষ্টিজাতীয় খাবার ছাড়া আমাদের ইফতার যেন পূর্ণতা পায় না। আরেকটা সমস্যা হলো, ইফতারে আমরা একবারে বেশি পরিমাণ খাবার খেয়ে ফেলি, যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। প্রতিদিনের ইফতারের মেনুতে পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাবার রাখা উচিত। যেমন দুই-তিনটা খেজুর, ডাবের পানি, নানা রকম মৌসুমি ফল (কলা, আপেল, পেঁপে, আম, পেয়ারা) একসঙ্গে মিশিয়ে টক দই দিয়ে এক বাটি সালাদ অথবা অল্প মিষ্টির দই, সঙ্গে চিড়া এবং সেদ্ধ সবজির তৈরি বিভিন্ন আইটেম। তবে ভাজাপোড়া খাবার যে একদম খাওয়া যাবে না, তা কিন্তু নয়। মাঝেমধ্যে দু-একটা পিঁয়াজি আর বেগুনি খাওয়া যেতে পারে, সঙ্গে অল্প মুড়ি, সেদ্ধ ছোলা আর সালাদ দিয়ে। অতিরিক্ত চিনি আর মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো।

পরিমিত রাতের খাবার

ইফতারের ঘণ্টাখানেক পরই আবার রাতের খাবার খেতে হয়। তাই রাতে যতটা সম্ভব হালকা খাবার খান। এক কাপ ভাত বা দুটো পাতলা রুটি, সঙ্গে পর্যাপ্ত মিশ্র সবজি, এক টুকরা মাছ বা মাংস বা একটা সেদ্ধ ডিম ও ডাল। ইফতার থেকে সাহ্‌রি পর্যন্ত অন্তত আট গ্লাস পানি পান করুন। রমজানে চা-কফি না খাওয়াই ভালো। এগুলো শরীরে পানিস্বল্পতা তৈরি করে।

সাহ্‌রিতে সঠিক খাবার

ওজন বেড়ে যাবে, এই ভয়ে অনেকে যেমন সাহ্‌রি খেতে চান না, তেমনি অনেকে আবার তাড়াতাড়ি খিদে লেগে যাবে, এই ভয়ে সাহ্‌রিতে অনেক বেশি পরিমাণ খেয়ে ফেলেন। বাস্তবিক অর্থে এই দুটোর কোনোটাই করা ঠিক নয়। সাহ্‌রির খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাবার নির্বাচন করতে হবে গুণগত মান দেখে। সাহ্‌রিতে আমিষজাতীয় খাবার এবং যেসব খাবার দেরিতে হজম হয়, যেমন জটিল শর্করা এবং আঁশযুক্ত খাবারের প্রাধান্য থাকা বাঞ্ছনীয়। তাহলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকবে এবং ক্ষুধার অনুভূতি কম হবে। মিশ্র সবজি ও ফলের সালাদ, ননিবিহীন এক গ্লাস দুধ বা টক দই, দুধের সঙ্গে বিভিন্ন ফল আর ওটস দিয়ে খেতে পারেন। এসব খেতে ভালো না লাগলে এক থেকে দেড় কাপ ভাত বা দুটো রুটি, এক টুকরা মাছ বা মুরগির মাংস, ডাল ও সবজি খাওয়া যেতে পারে।

ইফতারে পরিমিত খাবার খান। সারা দিন খালি পেটে থাকার পর ইফতারে একসঙ্গে বেশি পরিমাণে খাবার খেয়ে ফেললে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্লান্তি ভাব চলে আসে। তাই যতটা সম্ভব অল্প অল্প করে খান, একবারে বেশি করে না খেয়ে। খাওয়ার পর শুয়ে-বসে না থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করুন বা হালকা ব্যায়াম করুন। সময় করে ইফতারের অন্তত ২ ঘণ্টা পর ২০-২৫ মিনিট হেঁটে আসুন, শরীর-মন দুটোই চাঙা হবে। আর তার সঙ্গে ওজনটাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

লেখক: চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।