গরম বলে পোশাকও সে রকম

আড়ংয়ের বিক্রয়কেন্দ্রে চলছে ঈদের কেনাকাটা। ছবি: দীপু মালাকার
আড়ংয়ের বিক্রয়কেন্দ্রে চলছে ঈদের কেনাকাটা। ছবি: দীপু মালাকার

কয়েক বছর ধরেই ঈদুল ফিতর পড়ছে আষাঢ়-জ্যৈষ্ঠ মাসে। গরমের দাবদাহ ও বর্ষা—এ দুইয়ের মধ্যেই মুসলিম সম্প্রদায়কে ঈদ পালন করতে হচ্ছে। তাই দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোও পোশাকের নকশায় আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেছে। এ ছাড়া উৎসব যেহেতু রঙিন, তাই উজ্জ্বল নকশার পোশাক এসেছে বাজারে। দেশি ও বিদেশি সংস্কৃতির ভাবধারা মাথায় রেখে পোশাকে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছে ফ্যাশন হাউসগুলো।

উৎসব তা যেটাই হোক, বাঙালি আড়ংয়ে একবার ঢুঁ দেবেই। ঈদেও তার ব্যতিক্রম নয়। রোজার আগেই তাদের ঈদের পোশাকগুলো বাজারে এসেছে। আড়ংয়ের আউটলেট ঘুরে দেখা গেল কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। ভিড় খুব বেশি না হলেও জমে উঠতে শুরু করেছে।

আড়ংয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রুদমিলা সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ এবার গরমে হওয়ায় কাপড় বাছাইয়েও আরামের কথা ভাবা হয়েছে। কটনের কাপড় প্রাধান্য পেয়েছে। সঙ্গে রয়েছে পিওর সিল্কের পোশাকও। এ ছাড়া মসলিন, অ্যান্ডি সিল্কের কিছু পোশাকও এবার স্থান পেয়েছে।

পোশাকের নকশায় আড়ং এবার মূলত তিনটি থিম নিয়ে কাজ করেছে। রুদমিলা সিদ্দিকী বলেন, তুরস্কের মসলা বাজারের আবহকে ঘিরে উঠে এসেছে আড়ংয়ের এবারের ঈদ পোশাক। তিনি বলেন, ‘ওদের এই বাজারটা অনেক কালারফুল হয়, জয়ফুল হয়। সেই ইন্সপিরেশন থেকে আমাদের থিম হচ্ছে টার্কিশ স্পাইস মার্কেট।’ ভিনদেশের এই বাজারের সঙ্গে উৎসবের সংযোগের ব্যাপারে রুদমিলা বলেন, ঈদ তো খুশির একটা দিন। আর এই মার্কেটটা খুব রঙিন এবং সেখানে উৎসব উৎসব একটা ভাব আছে। সেখান থেকেই ধারণা নেওয়া হয়েছে। উজ্জ্বল সব ধরনের রংই ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকে।

তিনি আরও জানান, ক্লে পটের মোটিফগুলোও আড়ংয়ের পোশাকে বসেছে। এ ছাড়া ফ্যান্সি ফ্লোরালও তাদের অন্যতম থিম। বিভিন্ন ধরনের ফুলের মোটিফ নিয়ে পোশাকের নকশা করা হয়েছে।

রুদমিলা সিদ্দিকী বলেন, মেয়েদের পোশাকের ধরনে নানা নকশা রয়েছে। কামিজে লেয়ার বেড়েছে। এ ছাড়া কামিজ, ফ্রক, ঘাগড়া, ঘেরসহ জামা, ‘এ’ লাইন কাটের কামিজ এবার এসেছে। ছেলেদের পাঞ্জাবিতেও তুরস্কের মসলা বাজারের আবহ দেখা গেছে। পাঞ্জাবির কাটে খুব পরিবর্তন না এলেও আড়ং এবার বাহারি কটি এনেছে।

দেশী দশ–এর পোশাক কিনছে একটি পরিবার। ছবি: দীপু মালাকার
দেশী দশ–এর পোশাক কিনছে একটি পরিবার। ছবি: দীপু মালাকার

বাজার ঘুরে দেখা গেল কাপড়ে এবার ডিজিটাল প্রিন্ট বেশ চলছে। কামিজ, শাড়ি বা পাঞ্জাবি, প্রায় সবকিছুতেই ডিজিটাল প্রিন্টের নকশার প্রাধান্য। ফ্যাশন হাউস অন্যমেলার বসুন্ধরার সিটি আউটলেটের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এবার অন্যমেলায় ডিজিটাল প্রিন্টের শাড়ি, কামিজ ও পাঞ্জাবি এসেছে। বেশ কিছুদিন থেকেই এর চাহিদা অনেক। ডিজিটাল প্রিন্টের ওপরেই নকশা করা পোশাক এবার চলছে। অনলাইনের পেইজগুলো ঘেঁটেও দেখা গেল সুতি, সিল্ক বা হাফ সিল্কের কাপড়ের ওপর ডিজিটাল প্রিন্টের নানা নকশা। আবার তার ওপর পাথর, চুমকি, সুতার ভারী কাজও রয়েছে।

দেশীয় পোশাকের ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে এখনো জনপ্রিয় দেশী-দশ। বসুন্ধরা সিটির দেশী-দশেও ঈদ বাজারের কেনাকাটা চলছে। বিক্রয়কর্মীরা জানান, মূলত পকেটে বোনাস ঢোকামাত্রই ক্রেতারা আসতে থাকেন মার্কেটে। এখানকার ফ্যাশন হাউসগুলো নিজেদের নকশায় ভিন্নতা এনেছে। মূলত সুতি, লিনেনের কাপড়ে তৈরি এখানকার পোশাকগুলো।

চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর রেখাচিত্র এবার পোশাকের নকশায় ফুটিয়ে তুলেছে রঙ বাংলাদেশ। তাদের বিক্রয়কর্মী তরিকুল ইসলাম জানান, এই শিল্পীর রেখাচিত্র ছাড়াও আলপনা, ফুলেল নকশাও রয়েছে।

কে-ক্র্যাফটের আউটলেট ম্যানেজার নাসির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এবার গরমের কথা ভেবে কটন, মিক্সড কটন, লিনেনের নকশা করা পোশাক এসেছে। ছেলেদের পাঞ্জাবিগুলো মিক্সড কটনে করা হয়েছে, যা উৎসবকে ধরে রাখবে আবার আরামও দেবে।

অন্যদিকে দেশাল বরাবরই পোশাক তৈরিতে নরম সুতির কাপড় বেছে নেয়। আর নকশায় তারা উৎসবের আবহ রেখেছে।