এই ঈদে ঘুরে আসুন চট্টগ্রাম

ফয়’স লেকে নৌকাভ্রমণ। ছবি: সৌরভ দাশ
ফয়’স লেকে নৌকাভ্রমণ। ছবি: সৌরভ দাশ

একই সঙ্গে পাহাড়, হ্রদ, বন ও সমুদ্র দেখতে চাইলে এই ঈদে আপনি ঘুরে আসতে পারেন চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম অন্যতম। কাজেই এখানে আপনি পুরোনো নিদর্শনের পাশাপাশি পাবেন আধুনিকতার ছোঁয়া। চট্টগ্রাম শহর এবং এর পাশের জায়গা, বিশেষ করে মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়িতে দেখতে পাবেন অনেক কিছু। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলই আসলে দেখার মতো।

বর্ষাকালে চট্টগ্রাম হয়ে ওঠে সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রকৃতি হয়ে ওঠে সবুজ-সতেজ। মোটামুটি এক দিনেই আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার, ওয়ার সিমেট্রি, বাটালি হিল, লালদীঘি মসজিদ, ফয়’স লেকসহ চট্টগ্রাম শহরের ভেতরের দর্শনীয় স্থানগুলো। সুফি সাধক বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে ওঠা মাজারটির দেখা পাবেন শহরের নাছিরাবাদ এলাকায়। এই মাজারের পুকুরে দেখতে পাবেন বেশ বয়স্ক কচ্ছপের। মাজার ঘুরে দেখে মাজারের ভেতরের গাছে আপনি মানতের সুতা বেঁধে যেতে পারেন ভিন্ন গন্তব্যে।

শহরের দামপাড়ায় দেখা পাবেন কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি, যেটিকে সবাই চট্টগ্রাম সিমেট্রি নামে চেনে। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন আপনি। তা ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের আশপাশে দেখার মতো আরও অনেক কিছু রয়েছে। নতুন রূপে সেজেছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। যেতে পারেন আনোয়ারার পার্কি সৈকত দেখতে। এ ছাড়া মহানগরীর ফয়’স লেকও এ সময়ের জন্য খুব ভালো একটা জায়গা। এখানে নৌকা নিয়ে ঘুরতে পারেন। উপভোগ করতে পারেন জল থিম পার্ক সি ওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন রাইড।

শহর ছাড়িয়ে যেতে পারেন সীতাকুণ্ড, মিরসরাই অথবা ফটিকছড়ি। ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারে পাবেন মাইজভান্ডারি সাধকদের মাজার। বাংলাদেশে মাইজভান্ডারি বলে যে লোকসংগীত প্রচলিত, এই মাইজভান্ডার থেকেই তার উৎপত্তি। ফটিকছড়িতে রয়েছে হাজারি খিল অভয়ারণ্য, যেখানে ঘুরতে ও তাঁবুতে রাত কাটানোর জন্য যেতে পারেন।

ফয়’স লেক সি ওয়ার্ল্ড। ছবি: সৌরভ দাশ
ফয়’স লেক সি ওয়ার্ল্ড। ছবি: সৌরভ দাশ

মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে বিস্তৃত বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানে খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, কমলদহ, সহস্রধারাসহ অনেক ঝরনার দেখা পাবেন। বর্ষাকালে পানি থাকবে ঝরনাগুলোয়। সবুজ বনের আর পাহাড়ের মাঝে স্ফটিকসদৃশ পানির ঝরনা আপনাকে মুগ্ধ করবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খুব কাছে বলে এসব ঝরনা দেখতে যাওয়া খুব সহজ। কয়েক দিন বৃষ্টি পড়লেই ঝরনাগুলোয় পানি থাকে, তাই গরমের সময় এসব জায়গায় যেতে বেশ ভালো লাগে। যদি অল্প সময়ের জন্য ট্রেকিং করতে চান, তাহলে যেতে পারেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায়। সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক থেকে হেঁটে যে পারেন সেখানে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে একটি শিবমন্দির। এ ছাড়া যেতে পারেন ঝরঝরি ট্রেইলে। এই ট্রেইল ধরে আপনি পন্থিশীলা-সীতাকুণ্ড-চট্টগ্রাম ট্রেকিং করতে পারবেন। এই পথে বেশ কিছু ঝরনা রয়েছ। তবে ট্রেকিং করার জন্য একা না যাওয়াই ভালো। গেলে দলবল নিয়েই যাবেন। কারণ, এই জায়গাগুলো লোকালয় থেকে বেশ দূরে এবং নির্জন। সীতাকুণ্ডে পাবেন গুয়াখালী সমুদ্রসৈকত, যেটি মুরাদপুর বিচ নামে পরিচিত। সীতাকুণ্ড এলাকাতেই পাবেন কুমারীকুণ্ড নামে একটি ছোট উষ্ণ প্রস্রবণ। এখানে পাবেন সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝরনা। মূলত, সীতাকুণ্ড একটি প্রাচীন অঞ্চল। এখানে পাহাড়, বন, ঝরনা, সমুদ্রসৈকত—সবই পাবেন।

মিরসরাইতেও পাবেন পাহাড়, বন, ঝরনা ও সমুদ্রসৈকত। তবে এখানে উপরি পাবেন বাওয়াছড়া লেক। এটি ওয়াহেদপুর গ্রামে বারমাসিছড়ার মুখেই অবস্থিত। এ ছাড়া এখানে পাবেন মহামায়া লেক। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ। এখানে আপনি কায়াকিং করতে পারেন অথবা বোট নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতরেই পাবেন চালন্দা গিরিপথ। এটি মোটামুটি অপরিচিত একটি গিরিপথ। এখানে ট্রেকিংও করা যায়।

সবকিছু মিলে ঈদের সময় স্বল্প সময়ের জন্য চট্টগ্রাম হতে পারে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।

চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড। ছবি: সৌরভ দাশ
চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড। ছবি: সৌরভ দাশ

মনে রাখবেন, ঘুরতে গেলেই শুধু হবে না; যেসব জায়গায় প্রবেশের জন্য মূল্য দিতে হয়, সেগুলোয় প্রথমে মূল্য পরিশোধ করুন, তারপর প্রবেশ করুন। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো প্রবেশমূল্যের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। সেসব জায়গায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিন। প্রাকৃতিক পরিবেশে প্লাস্টিকসহ আপনার ব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলবেন না। এতে পরিবেশর ক্ষতি হয়। পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ ঘুরতে গিয়ে করবেন না।

কীভাবে যাবেন
সারা দেশের সঙ্গেই চট্টগ্রাম সড়ক, আকাশ ও রেলপথে সংযুক্ত। তবে ট্রেনের টিকিট পাওয়াটা মোটামুটি দুঃসাধ্য ব্যাপার। থাকার জন্য চট্টগ্রামে অনেক হোটেল রয়েছে। নগরীর জিইসি মোড়ের আশপাশে বিলাসবহুল হোটেলগুলো আছে, আর স্টেশন রোডে বাজেট হোটেলগুলো পাবেন।

চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলো
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার, ওয়ার সিমেট্রি, বাটালি হিল, লালদীঘি মসজিদ, ভাটিয়ারি লেক, ফয়’স লেক, পারকি সৈকত, পতেঙ্গা সৈকত, রাউজানের সাহেব বিবি মসজিদ, নন্দীর হাটের জমিদারবাড়ি, ঝরঝরি ট্রেইল, কাপ্তাইয়ের লেকভিউ লেক, গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, মেধস মুনির আশ্রম, খেজুরতলা বিচ, কুমারীকুণ্ড, মিরসরাইয়ের বাওয়াছড়া লেক, সোনাইছড়ি ট্রেইল, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চালন্দা গিরিপথ, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, হাজারী খিল অভয়ারণ্য, সন্দ্বীপ, কালুরঘাটের মিনি বাংলাদেশ, ছাগলকান্দা ঝরনা, কমলদহ ঝরনা, চন্দ্রনাথ পাহাড়, সুপ্তধারা ঝরনা, সহস্রধারা ঝরনা, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, মহামায়া লেক, নাপিত্তাছড়া ট্রেইল, খৈয়াছড়া ঝরনা, খিরাম সংরক্ষিত বনাঞ্চল, ভুজপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চল, মহামুনি বৌদ্ধবিহার, লোহাগাড়া বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ইত্যাদি।

লেখক: ভ্রমণবিষয়ক ফেসবুক গ্রুপের মডারেটর।