কেমন হবে সাহ্রি ও ইফতার?

রোজায় দিনের বেশ বড় একটা সময় শরীর খাবার পায় না। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সুস্থ থাকতে তাই সাহ্‌রি ও ইফতারে খাবার ভেবেচিন্তে বাছাই করা উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এম আক্তারজামান সাহ্‌রি ও ইফতারে খাবারের ধরন নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, সাহ্‌রিতে এমন খাবার খেতে হবে, যেগুলো হজম হতে বেশি সময় লাগে। ভাত, ডাল, সবজি, লাল আটার রুটি, মাছ, ডিম, দুধ ইত্যাদি খেতে পারেন। সারা দিন খাওয়া যাবে না ভেবে সাহ্‌রিতে খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। এতে হজমে সমস্যা হতে পারে এবং সারা দিন অস্বস্তি লাগতে পারে। আবার অনেকে একবারে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন এবং সাহ্‌রি না খেয়ে রোজা রাখেন। এটাও উচিত নয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে যায়।

ইফতার শুরু করা উচিত শরবত বা ডাবের পানি দিয়ে। খেয়াল রাখতে হবে, শরবতে যেন চিনি কম হয়। বাইরের শরবত না খাওয়াই ভালো। ইফতারে অবশ্যই খেজুর খাওয়া উচিত। কারণ, খেজুর শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। ভাজাপোড়ার বদলে স্যুপ, দই–চিড়া ইত্যাদি খাওয়া ভালো। মৌসুমি ফল খাওয়া উচিত। এই গরমে যে ফলে পানির পরিমাণ বেশি, যেমন: তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস ইত্যাদি বেশি খাওয়া উচিত। ফলের জুস, মিল্ক শেক ইত্যাদিও তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।

ইফতারে ভারী খাবার খেলে রাতের খাবার খাওয়ায় অনীহা তৈরি হতে পারে। রাতের খাবারে ভাত, মাছ, ডাল, সবজি, ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি খাওয়া ভালো। সঙ্গে সালাদ থাকলে ভালো।

রোজায় সারা দিনে মানুষের শরীরে পানির যে শূন্যতা হয়, তা পূরণে ইফতারে ডাবের পানি খুব উপকারী।

ইফতার থেকে সাহ্‌রি পর্যন্ত অন্তত সাতবার ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। এগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শসা, তরমুজ, বেল, গাজর ইত্যাদি বেশি করে খাওয়া উচিত। এতে করে পুষ্টির পাশাপাশি শরীরে পানির ঘাটতিও পূরণ হবে।

ইফতারের সময় থেকে শুরু করে রাতের খাবার খাওয়ার আগ পর্যন্ত একটু পরপর চার থেকে পাঁচবার করে ফলমূল খেতে পারেন। রাতে খাবার পর একবার এবং সাহ্‌রির পর আরও একবার ফল খেতে পারেন। সাহ্‌রির সময় অন্য কোনো ফল খেতে ভালো না লাগলে অন্তত দুটি খেজুর খেয়ে নিতে পারেন।

অনেকেই ফল ও শাকসবজি খেতে পছন্দ করেন না। একনাগাড়ে প্রতিদিন ফলমূল খেতে খেতে একসময় একঘেয়ে লাগতে পারে। তাই স্বাদে ভিন্নতা আনতে ফলের শরবত, ফলের সালাদ, শাকসবজি দিয়ে তৈরি মজাদার স্যুপ খেতে পারেন।

স্বাদের জন্য ইফতারে ভাজাপোড়া কিছু থাকলেও কম তেলে রান্না করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের বদলে সরিষার তেল, ভুট্টার তেল, সূর্যমুখী তেলও ব্যবহার করতে পারেন।

রোজার মাসে রাতের খাবারটাও সাহ্‌রির মতো কিছুটা হালকা থাকতে হবে—ভাত ১ কাপ বা রুটি ২টি, মাছ বা মুরগির মাংস ১ টুকরো, সবজি ১ কাপ ও সালাদ ১ বাটি।

(নাজিয়া হোসেন: প্রথম আলোর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাংবাদিক)