পোষা প্রাণীর বর্জ্য যেভাবে সামলাবেন

এমন সুন্দর পোষা প্রাণীদের পরিচ্ছন্ন রাখার বিকল্প নেই। ছবি: অধুনা
এমন সুন্দর পোষা প্রাণীদের পরিচ্ছন্ন রাখার বিকল্প নেই। ছবি: অধুনা

প্রিয় পোষা বিড়াল কিংবা কুকুর পরিবারের অংশই হয়ে যায়। একই বিছানায় ঘুমানো থেকে শুরু করে অনেকের সব সময়ের সঙ্গী। তাদেরও প্রয়োজন সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা। তা না হলে পোষা প্রাণীর শরীরে দুর্গন্ধ হতে পারে। এমনকি পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে না পারলে সেটা রোগবালাইয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব সামলানোর ১০টি সহজ পদ্ধতি এখানে দেওয়া হলো।

বিড়ালের বমি কীভাবে পরিষ্কার করবেন?
যত দ্রুত আপনি বুঝতে পারবেন যে বিড়াল বমি করেছে, ততই ভালো। এ রকম বমি স্বল্প সময়ে দাগ ফেলতে পারে। প্রথমে শুকনো কাপড়, টিস্যু পেপার, চামচ বা ছুরি দিয়ে বমি পরিষ্কার করুন। কার্পেট কিংবা কাপড়ের ওপরের বমি পরিষ্কারের সময় সজোরে চাপ দেবেন না। এবার সেখানে পানি ছিটিয়ে নিন অথবা স্প্রে করুন। তারপর শুকনো তোয়ালে দিয়ে আস্তে আস্তে মুছে নিন। এভাবে কয়েকবার করুন। সবশেষে জীবাণুনাশক স্প্রে করুন।

কুকুরের শুকনো প্রস্রাবের পরিচ্ছন্নতা
বাজারে ওয়েট ভ্যাক নামের একধরনের যন্ত্র পাওয়া যায়। সুলভ মূল্যের এই সামগ্রীটি বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর দুর্গন্ধঘটিত সমস্যা সমাধানে চমৎকার কাজ করে। প্রথমে ওয়েট ভ্যাক দিয়ে নোংরা জায়গাটিকে ভিজিয়ে নিতে হবে। তারপর তার মাধ্যমে নোংরা পানি শুষে নিতে হবে। কাজ শেষে, নিয়মমাফিক ‘পেট-ওডর-নিউট্রালাইজার’ ব্যবহার করুন। উন্নতমানের কোনো ‘স্টেইন রিমুভার’ও ব্যবহার করতে পারেন। ভিনেগার কিংবা অ্যামোনিয়া-জাতীয় কোনো কিছু প্রাণীর দুর্গন্ধ রোধে ব্যবহার করবেন না।

কুকুরের ভেজা প্রস্রাবে করণীয়?
কুকুরের ভেজা ও শুকনো প্রস্রাব ক্ষতিকর ও বিপদের কারণ। দুটি পদ্ধতিতে এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। বিড়ালের প্রস্রাবের ক্ষেত্রেও তা কাজে আসে। প্রথমে টিস্যু পেপার দিয়ে প্রস্রাব শুষে নিতে হবে। তারপর নতুন টিস্যু পেপারের ওপর পরিষ্কার তোয়ালে বা গামছা রেখে আস্তে আস্তে চাপ দিতে হবে। যদি স্থানটি কম্বল কিংবা কার্পেট হয়, তাহলে তার নিচের দিকেও আরেকটি তোয়ালে রেখে দুই দিক থেকে আলতো চাপে মুছতে হবে। মনে রাখবেন, কম্বল কিংবা কার্পেট কিছুটা প্রস্রাব শুষে নিতে পারে। টিস্যু পেপার ও তোয়ালে ভিজে উঠলে নতুন টিস্যু ও তোয়ালে দিয়ে আবার একই কাজ করুন। প্রস্রাব আপাতত দূর হয়েছে মনে হলে এবার ঠান্ডা পানি দিয়ে স্থানটি ধুয়ে নিন এবং তোয়ালে অথবা ওয়েট ভ্যাক দিয়ে পানি শুকিয়ে নিন। জায়গাটি শুকিয়ে গেলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ভ্যাকুয়াম করে করুন। তারপর বেকিং সোডার তরল মিশ্রণ ছিটিয়ে দিন। এভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখুন। সবশেষে আবার ভ্যাকুয়াম করুন।

বিড়াল প্রস্রাব করলে
বিড়ালের প্রস্রাব শুকিয়ে গেলে ভয়াবহ দুর্গন্ধ ছড়ায়। বিড়াল অল্প পানি পান করে। বেশির ভাগ শুকনো খাবার খেয়ে বিড়াল অভ্যস্ত। ফলে প্রস্রাবে তীব্র গন্ধ থাকে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশেষজ্ঞরা ‘এনজাইমেটিক’ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পুরোনো প্রস্রাবের জায়গার ক্ষেত্রে প্রোফেশনাল কার্পেট ক্লিনারের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। প্রস্রাবের স্পটকে কেউ কেউ আইসবার্গের সঙ্গে তুলনা করেন। তাঁরা বলেন, যতটুকু ওপরে দেখা যায়, সেটা খুবই কম। বেশির ভাগটাই কার্পেট কিংবা প্রস্রাবের জায়গায় গভীরভাবে জমে যায়। যত দেরিতে সেটা পরিষ্কার করা হবে, তত বেশি দুর্গন্ধ ছড়াবে। নির্দিষ্ট স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করা অভ্যাস রয়েছে (পটি ট্রেইনড) এমন বিড়ালের ক্ষেত্রে পরিষ্কার করার কাজটা সহজ। একটা বাক্সে বালু রেখে বা বাজার থেকে লিটার কিনে জায়গাটা বানানো যায়। বালুতে জমা ময়লা নিয়মিত ফেলে দিতে হবে।

লিটার বক্সের দুর্গন্ধ দূরের উপায়
সবচেয়ে সহজ পন্থা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব মলমূত্র লিটার বক্স থেকে বেলচার সাহায্যে চেঁছে ফেলে দিতে হবে। লিটার বক্সে বেকিং সোডা ছিটিয়ে রাখা কাজের হতে পারে। লিটার বক্সের জন্য বাজারে নানা ধরনের সুগন্ধি পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। অতিরিক্ত সুগন্ধি বিড়ালকে লিটার বক্স ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে পারে।

পোষা প্রাণীর বিছানায় দুর্গন্ধ
আপনার পোষা প্রাণীটি যদি নন-শেড প্রজাতির না হয়, তাহলে তার শরীরে তুলতুলে পশমে ঢেকে আছে নিশ্চয়। এই লোমই মূলত দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। বিড়াল কিংবা কুকুরের গা যখন ঘেমে যায়, তখন একধরনের গন্ধ পশমের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। পোষা প্রাণীর বিছানা ধুয়ে দেওয়ার আগে ভালোভাবে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তা না হলে লোম ভেজা কাপড় ও ওয়াশিং মেশিনের ভেতরে আটকে থাকে। পোষা প্রাণীর বিছানার থেকে গন্ধ দূর করার জন্য নিয়মিত ডিটারজেন্টের সঙ্গে বেকিং সোডা মিশিয়ে তাতে কাপড় ধুয়ে নিন। বিছানার কাপড় সংকোচনের ভয় থাকলে এয়ারড্রাই পদ্ধতিতে শুকিয়ে নিন। তারপরও দুর্গন্ধ থাকলে এনজাইমিক ক্লিনার ব্যবহার করুন।

সোফা থেকে নোংরা গন্ধ বেরোচ্ছে?
পোষা প্রাণীর বিছানার মতো আপনাকে প্রথমে সোফা ও আসবাব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে। দুর্গন্ধযুক্ত স্থানে বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সবশেষে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে নিলেই স্বস্তিকর হয়ে উঠবে আপনার সোফা।

প্রাণী বহন করার বাক্স দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে?
আপনার পোষা প্রাণী বহন করার বাক্স, কাপড়, প্লাস্টিক বা যে ধরনের অনুষঙ্গ দিয়েই তৈরি হোক না কেন, সেটা কটু গন্ধ তৈরি করতে পারে। বাক্সের ভেতরে ব্যবহৃত কাপড়ের নোংরা টুকরোর কারণেও দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে। আপনার কুকুর কিংবা বিড়াল বমি না করলেও যখন তারা নার্ভাস থাকে, তখন তাদের পায়ুপথ থেকে একধরনের কটু গন্ধ উপাদান নির্গত হয়। প্রাণীর ঘেমে যাওয়ার কারণেও দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে। বাক্সের বিছানা নিয়মিত পরিষ্কার করে ধুতে হবে। কাপড়জাতীয় বাক্সকে বাথটাব কিংবা গামলাতে হালকা গরম পানি ও এনজাইমের মিশ্রণ দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করলে অতিরিক্ত দুর্গন্ধের আশঙ্কা তৈরির হবে না।

ঘরে তৈরি স্প্রে ব্যবহার করা যাবে?
আপনার ঘরে থাকা সরঞ্জাম ও উপাদান ব্যবহার করেই তৈরি করে নিতে পারেন পেট ক্লিনার বা পোষা প্রাণীর জীবাণুনাশক স্প্রে। তরল ক্লিনার তৈরির জন্য প্রথমে ২ কাপ গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ পরিমাণ লবণ মিশিয়ে নিন। আধা কাপ সাদা ভিনেগার যোগ করুন। এবার ১ টেবিল চামচ ডিটারজেন্ট ভালো করে মেশানো হলে মিশ্রণটিকে স্প্রে বোতলে ভরে নিন। স্প্রে করার আগে অবশ্যই যতটুকু সম্ভব নোংরা জায়গা পরিষ্কার করে নিতে হবে। স্প্রে ব্যবহার শেষ হলে শুকনো পেপার টাওয়েল, টিস্যু পেপার অথবা শুকনো কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে নিন জায়গাটি। এবার বেকিং সোডা ছিটিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। স্থানটি শুকিয়ে গেলে সবশেষে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।

চিরচেনা গন্ধ দূর হচ্ছে না?
সব ধরনের প্রাণী-সংশ্লিষ্ট দুর্গন্ধের কারণ দূর করলেন। তারপরও ঘরে পোষা প্রাণীর উপস্থিতির কথা যেন কিছুতেই আড়াল হচ্ছে না। প্রাণীর গন্ধ জমে আছে বাসার বাতাসে। সে ক্ষেত্রে কী করতে পারেন? বিশেষজ্ঞরা আপনার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘ওজোন জেনারেটর’ নামে একধরনের যন্ত্র ব্যবহারের। এটি দুর্গন্ধ দূর করে বাতাসকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এয়ার পিউরিফাইয়ার ব্যবহারের চেয়ে এটি অধিক উপকারী। ওজোন জেনারেটর ঘরে পরিষ্কার হাওয়া সঞ্চালন করে। ফলে দুর্গন্ধ থাকে না।
সর্বোপরি আপনার পোষা প্রাণীর নিরাপত্তা ও সুস্থতার জন্য নিয়মিত টিকা বা ভ্যাকসিন প্রদান করুন।

ভেটেরিনারি সার্জন, কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ঢাকা।