সৌম্য ভালো খেললে অনেকে ডেকে কাছে বসায়

আমার বড় ছেলে ট্যাক্স কমিশনার, মেজ ছেলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক আর ছোট ছেলে সৌম্য হয়েছে ক্রিকেটার।

সব ছেলের গুরুত্বই একজন বাবার কাছে সমান। কিন্তু সৌম্যের মতো ছেলেরা মা–বাবার কাছে একটু আলাদাভাবেই জায়গা করে নেয়। কারণ সে এখন জাতীয় সম্পদ। তাকে নিয়ে সারা দেশই গর্ব করে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সবাই যখন বলে ওই যে সৌম্যের বাবা যাচ্ছে তখন শুনতে ভালো লাগে। সৌম্য ভালো খেললে অনেকে ডেকে কাছে বসায়, সৌম্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়, আর তখন একজন বাবা হিসেবে খুবই গর্ব অনুভব করি। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা সৌম্যের মাধ্যমেই পাওয়া গেছে। সৌম্য সরকার যখন ভালো খেলে তখন অনেক ভক্ত বাড়িতে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে আসে। আনন্দে তখন বুকটা ভরে যায়। একজন বাবা হিসেবে এর চেয়ে আর বেশি কীই–বা থাকতে পারে।

সৌম্যের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্পের শুরু তার তিন বছর বয়স থেকে। শিক্ষকতা জীবনে সন্তানদের খুব ভালো কিছু দিতে পারিনি। তবে একদিন দোকানে ঝোলানো অবস্থায় দেখে একটি খেলনা ব্যাট ও টেনিস বল কিনে নিয়ে আসি। এরপর সৌম্যের হাতে ব্যাট দিলে সে বাঁ হাত দিয়েই তা ধরে। পরে তার দিকে বল ছুড়ে দিলে এক অসাধারণ ফুটওয়ার্কের মাধ্যমে সে বলগুলো খেলতে থাকে। টাইমিংও হচ্ছিল ভালো। তখন দেখেই খুব অবাক হয়েছিলাম। মাত্র তিন বছর বয়সের এক ছেলে এভাবে খেলতে পারে জানা ছিল না। সৌম্যের ওই প্রতিভা দেখে তার ক্রিকেট খেলার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা নিয়ে আসতাম।

চতুর্থ শ্রেণি থেকেই সে বড় ভাইদের সঙ্গে সাতক্ষীরা সরকারি স্কুলের মাঠে গিয়ে ডিউচ বলে খেলতে শুরু করে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকতে ইন্টার স্কুল ক্রিকেটে অংশ নেয়। সপ্তম শ্রেণিতে থাকতে বিকেএসপির টাইগার হান্টিং প্রোগ্রামে একটি দল সাতক্ষীরায় আসবে শুনে সৌম্যকে সেখানে পাঠায়। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় জেলা পর্যায়ে সে টিকে আছে। এরপর বিকেএসপিতে ১০ দিনের একটি ক্যাম্পে অংশ নেয় সে। পরে তাকে ওই জায়গায় ভর্তি করে দেওয়া হয়। বিকেএসপির শিক্ষকেরা জানান, সৌম্য ওই ক্যাম্পে প্রথম হয়েছে। শিক্ষকদের মুখে ওই কথা শুনে খুশিতে বুকটা ভরে যায়। সৌম্যের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনে তার মেজ ভাই পুষ্পেনের বেশি অবদান রয়েছে।

সৌম্যকে নিয়ে একটাই চাওয়া রয়েছে, সে যেন ভবিষ্যতে আরও একটা বিশ্বকাপে খেলতে পারে। তার হাত দিয়েই যেন বাংলাদেশের
বিশ্বকাপ জয়ের গল্পটা রচিত হয়। পেশা হিসেবে যেটাকে সে বেছে নিয়েছে, সেটা থেকেই সর্বোচ্চ প্রাপ্তিটা যেন আনতে পারে, সেটাই প্রত্যাশা করি। প্রতিটি খেলায় সে যেন বাংলাদেশের জয়ের নায়ক হয়ে উঠতে পারে, বাবা হিসেবে এখন এটাই আমার চাওয়া।

অনুলিখন: শেখ আল-এহসান, খুলনা