সাব্বিরের ভাঙা ব্যাটটা রেখে দিয়েছি

আমাকে চেনেই না। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ছেলেমেয়েরা গল্প করতে করতে যায়, সাব্বির ‘হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান’। আমি শুনতে পাই। আমি গর্বিত হই। আমার ছেলেকে নিয়ে গর্বের গল্প করতে করতে ওরা যাচ্ছে। আমার সেই ছোট্ট রুম্মান। এখন ক্রিকেটার সাব্বির রহমান। এবার বিশ্বকাপের ১৫ জনের একজন। বাংলার ১৬ কোটি মানুষ তারে চেনে। সারা পৃথিবীর মানুষ তারে চেনে। আমার কী যে আনন্দ আমি বলার ভাষা খুঁজে পাই না।

প্রথম যখন ও ব্যাটের জন্য বায়না ধরেছিল, তখন একটা কাঠের ব্যাট কিনে দিয়েছিলাম। সেই ছোটবেলায় শুধুই সাইকেলের পিছে ব্যাটটা নিয়ে মাঠে ছুটে যেত। আমি ওর সাইকেল আর সেই ব্যাটটা, মাঝখান দিয়ে বোধ হয় ভেঙে গেছে, আমি স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি।

ওর মা স্থানীয় একটি কলেজের গ্রন্থাগারিক। শৈশবে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব ভয় পেত। পড়াশোনা বাদ দিয়ে ছেলে শুধুই ক্রিকেট-ব্যাট নিয়ে ছুটে বেড়ায়। এটা তো ভালো হচ্ছে না। ছেলে যদি ফেল করে। আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতাম, তুমি ফেলের চিন্তা করছ, দেখো, ভাগ্য সহায় হলে একদিন এমন হতে পারে তুমি যা চাইছ তার চেয়েও বড় কিছু আসতে পারে। আমার কথা শুনে ওর মা আর আপত্তি করত না। খেলতে যেত শহরের দৈনিক বার্তার মাঠে। এখন সেখানে কোনো মাঠ নেই। দৈনিক বার্তা কমপ্লেক্স। সাব্বির এখন আর তাঁর স্মৃতির মাঠ খুঁজে পাবে না। ওই মাঠে খেলতে খেলতে রাত হয়ে যায়। আবার তার মা দুশ্চিন্তা করে। আমি আবার খবর নিতে যাই।

বিবি হিন্দু একাডেমির ছাত্র তখন সাব্বির। একবার পরীক্ষার মধ্যে পড়ল খেলা। ঢাকায় খেলতে যাবে। উভয়সংকটে পড়ে যায় ছেলেটা। এ সময় ওর শিক্ষকই পরামর্শ দিলেন। না হয়, পরীক্ষা এবার নাই দেওয়া হোক। ও খেলতে যাক। পরীক্ষা দরকার হলে পরেরবার দেবে। তা–ই করা হলো!

সেই সাব্বির এখন বিশ্বকাপ খেলছে। স্বপ্নের মতো মনে হয়। বাংলাদেশ দল যখন বাইরে খেলতে যায়, তখন মনে হয় ১৫ জনই আমার নিজের ছেলে। সবার জন্যই দোয়া করি। সবাই যেন সুস্থ শরীরে ভালো খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। সবার জন্য শুভকামনা রাখি।

অনুলিখন: আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, রাজশাহী