লুকিয়ে দেখলাম রুবেলের খেলা

আমার সন্তানদের মধ্যে রুবেল সবার ছোট। ছোট বলেই তাকে নিয়ে বাড়তি স্বপ্ন ছিল। আমরা সব সময় চেয়েছি সে পড়াশোনা করুক, বড় হয়ে ভালো চাকরি করুক। কিন্তু ওর ঝোঁক ছিল খেলাধুলার দিকে। সে এমনই ঝোঁক—বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার নাম করে ঠিকই বেরোত, অনেক সময় স্কুলেও যেত, কিন্তু বইপত্র স্কুলে রেখে ক্রিকেট খেলা শুরু করত। আর যেদিন স্কুল অবধি যেত 

না, সেদিন মাঠের পাশেই কোনো গাছের গোড়ায় বই–খাতা রেখে খেলতে শুরু করত। এ নিয়ে
প্রায়ই ওর স্কুলের শিক্ষকেরা অভিযোগ নিয়ে আসতেন।

ভালোভাবে পড়াশোনা করছে না জেনে তখন অনেক খারাপ লাগত। বকা দিতাম। কিন্তু ক্রিকেটে যে একদিন সম্মান বয়ে আনবে, তা তো তখন জানা ছিল না!

রুবেল তখন শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে। ও যে পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট খেলত, তা জানতাম, কিন্তু ভালো খেলে সেটা জানা ছিল না। তাই পথে যখন অনেকেই বলত, রুবেল খুব সুন্দর বল করে—এ নিয়ে ভালো–মন্দ কিছু বলতে পারতাম না।

এভাবেই একসময় ক্লাব টুর্নামেন্টে খেলা শুরু করে সে। পরিচিতদের কাছ থেকে শুনতাম রুবেলের খেলার কথা, অনেকই প্রশংসা করতেন। একদিন একটি ম্যাচে ওর খেলা ছিল। পরিচিত অনেকেই দেখতে গেল। আমারও কেমন যেন ইচ্ছে করল, যাই দেখে আসি তো! সেদিন অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়ে গেলাম তার খেলা দেখতে। সেদিনই প্রথম ওর খেলা দেখা। ভালো বল করল, উইকেট পেল। সবাই তাকে নিয়ে উল্লাস করল। অন্য রকম এক আনন্দ পেলাম। আমাকে দেখলে হয়তো লজ্জা পেতে পারে, তাই আবার লুকিয়েই চলে এসেছিলাম সেদিন।

ক্লাবের হয়ে খেলতে খেলতে একসময় রুবেল ডাক পায় অনূর্ধ্ব–১৯ ক্রিকেট দলে। তখন আমরাও একটু প্রাধান্য দিচ্ছি ওকে। এত ভালো খেলা। মানমর্যাদা আছে। অনূর্ধ্ব–১৯ দলে খেলতে
খেলতে একসময় ডাক পায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে।

এখন তো সবাই চেনে ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বাবা হিসেবেই। সবাই সম্মান করে। রুবেলের খেলাধুলার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান হচ্ছে ওর মায়ের। আমি তখন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। মাছ ধরার ট্রলার ছিল, সাগরে থাকতাম। বাগেরহাটে ওদের নিয়ে থাকত আমার স্ত্রী। ওদের তিন ভাই, দুই বোন—সবার দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল ওর মায়ের।

 বিশ্বকাপে আমাদের সুন্দর একটা দল খেলতে গেছে। সবাই হাসিমুখে গেছে। দোয়া করি, সবাই যেন আবার হাসিমুখ নিয়ে দেশে ফিরতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশ যেমন খেলেছে, ওই ধারাবাহিকতা যদি ধরে রাখতে পারে, ওরা হাসিমুখেই বাংলার মাটিতে পা রাখবে।

অনুলিখন: সরদার ইনজামামুল হক, বাগেরহাট