মোস্তাফিজ সরল মনের ছেলে

সেদিন টিভি পর্দার সামনে বসেছি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ চলছে। মোস্তাফিজের অভিষেক হতে পারে। একসময় আমাদের অপেক্ষাটা আনন্দের হয়ে উঠল। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নিজে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের ‘ক্যাপ’ তুলে দিল আমার ছেলে মাথায়। সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে। মোস্তাফিজের অভিষেকের সময় খুব বেশি মানুষ তাকে চিনত না। কিন্তু সে সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণি এবং লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে খুব ভালো খেলেছিল। এখন তো ওর বোলিং সম্পর্কে সবার জানা।

ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল ছেলে আমার। মোস্তাফিজ তখন এলাকায় খেলাধুলা করত। ওর বোলিং নিয়ে অনেকে প্রশংসা করত। একদিন আমার সেজ ছেলে মোখলেছুর রহমান তাকে নিয়ে সাতক্ষীরা গণমুখী ক্লাবের ক্রিকেট কোচের কাছে যায়। তার ভাই যে ভালো বল করে তাদের বলে। কেমন ভালো বল করে, দেখতে চায় তারা। বোলিং করে মোস্তাফিজ। ক্লাবের সবাই ওর বোলিং দেখে মুগ্ধ। তাঁরা জানান, মোস্তাফিজের কাছে তাঁদের অনেক পাওয়ার আছে।

এরপর কয়েক দিন কোচ আলতাফ তাকে প্রশিক্ষণ দেন। মোখলেছুরই ওকে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে আনা-নেওয়া করত। প্রতিদিন ভোরে দুই ভাই বাড়ি থেকে বের হতো। ওদের মা মাহমুদা খাতুন যে রুটি বানিয়ে দিত মোটরসাইকেলে যেতে যেতে তা–ই খেত। বাড়ি থেকে সাতক্ষীরা শহরের দূরত্বটা কম তো নয়, ৪৫ কিলোমিটার।

এর মধ্যে সাতক্ষীরায় বয়সভিত্তিক ক্রিকেটার বাছাই শুরু হয়। কোচের পরামর্শে অংশ নিয়ে মোস্তাফিজ সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৪ প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর সাতক্ষীরায় ক্রিকেট একাডেমির মুফচ্ছিনুল ইসলাম, পরে একরামুল ইসলামের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে। এরপর অনূর্ধ্ব-১৪ ও ১৭ খেলেছে। ভালো খেলে সবার নজর কাড়ে মোস্তাফিজ। খুলনা বিভাগীয় দলের ধারাবাহিকভাবে সফলতা একদিন ওকে আরও সামনে
নিয়ে যায়।

অথচ আমরা চেয়েছিলাম মোস্তাফিজ পড়াশোনা করুক। ভালো কোনো চাকরি করুক। কিন্তু ও পড়ে থাকত ক্রিকেট নিয়ে। অবশ্য এখন আর সেই আক্ষেপ নেই। আমার ছেলেকে এখন সারা দেশের মানুষ চেনে, এ কি কম গর্বের!

মোস্তাফিজ এখন যখন বাড়ি আসে, অনেক মানুষ এসে ভিড় করে। ওর বন্ধুরাও আসে, ভক্তরা আসে। সবাই মিলে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, খাওয়াদাওয়া করে। ছেলের প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা বাবা হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করে। মোস্তাফিজ সরল মনের মানুষ, কথাটা বাবা হিসেবে বলছিল না। এখন যে তারকাখ্যাতি পেয়েছে তবু ছোট-বড়, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করে না। এটা তার ছোটবেলার গুণ।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সবাই ভালো খেলছে, খেলবে। পরের ম্যাচগুলোতে জয়ী হয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করুক, এই শুভকামনা রইল।

অনুলিখন: আহমেদ সাব্বির, সাতক্ষীরা