আমি মাশরাফির গর্বিত বাবা

ছোট থেকেই ভীষণ ডানপিটে ছিল মাশরাফি। দল বেঁধে খেলাধুলা আর চিত্রা নদীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাঁতার কাটা ছিল নিত্যদিনের কাজ। তাই প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতো। এ নিয়ে শাসনও করতাম। আর শাসন করলেই চলে যেত নানাবাড়ি। তাই ওর ছোটবেলার বেশির ভাগ সময় কেটেছে বাড়ি থেকে ৬০০-৭০০ গজ দূরের নানাবাড়িতেই। এখনো কি সেই দুরন্তপনা কমেছে! নড়াইল এলেই মোটরবাইক হাঁকিয়ে ছুটে বেড়ায়। ছোট মাশরাফিকে নিয়ে যেমন শঙ্কায় থাকতাম, এখনো পরিবারের লোকজন চিন্তায় থাকি।

ঘটনাটা মনে পড়লে এখনো আঁতকে উঠি। মাশরাফির বয়স তখন কতই হবে, ৯ কি ১০ বছর। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও সে মামাবাড়িতে। স্কুল থেকে ফিরে তিনতলার বাড়ির ছাদে ওর বন্ধু কোমলের সঙ্গে খেলছিল। ওদের খেলা মানেই তো হুড়োহুড়ি, দৌড়াদৌড়ি। মাশরাফি আচমকা দৌড় দিয়েছিল, নিজের নিয়ন্ত্রণ আর রাখতে পারেনি। ছাদের চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী না থাকায় পা পিছলে তিনতলার ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। আতঙ্কে বাড়ির সবাই যখন চিৎকার শুরু করল, চলে এল আশপাশের মানুষজনও। এদিকে ভয়ে নাকি মাশরাফি গেল পালিয়ে! সে দুর্ঘটনার পর বেশ কিছুদিন বিছানাবন্দী ছিল।

তারপর একটু সেরে উঠতেই আগের মতো দৌড়ঝাঁপ! ও ফুটবল, ক্রিকেটসহ এমন কোনো খেলা নেই যা খেলত না। তবে ক্রিকেটে মাশরাফির উত্থানের পেছনে সবচেয়ে অবদান ছিল ওর নানি আর নানার (তার মায়ের মামা)। ওর নানা মফিজুল ইসলাম ছিলেন খুলনা মুসলিম স্পোর্টিং ক্লাবের (বর্তমানে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব) সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এই দুজনের পাশাপাশি আরও অবদান ছিল জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট উপ-পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক শরীফ মোহম্মদের।

বাবা হিসেবে সন্তানের সুখের দিন ও দুঃখের দিন আমি দেখেছি। যখন অস্ট্রেলিয়ায় একের পর এক মাশরাফির অস্ত্রোপচার হচ্ছিল, সেই কষ্টের দিনগুলোতে সঙ্গে থেকেছি। বাবা হিসেবে সন্তানের সেই দুঃসময় দেখা সত্যিই কষ্টের। আর সুখের সময় তো সব সময়ই।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সাতবার অস্ত্রোপচারের পরও সে আবার স্বমহিমায় মাঠে ফিরে এসেছে। খেলতে নেমেছে। দলের নেতৃত্ব দিয়েছে। পৃথিবীর সব ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট মানুষের কাছেই হয়তো এটা একটা আশ্চর্যের ঘটনা।

আরও আশ্চর্যের ঘটনা, সে এখন সাংসদ। কোনো দিন রাজনীতি করেনি, কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওর মধ্যে নেতৃত্বের গুণ দেখেছেন, তিনিই মাশরাফিকে রাজনীতিতে এনেছেন।

বাবা হিসেবে আমি সবচেয়ে গর্বিত মাশরাফির মতো শতভাগ সৎ সন্তানের জন্য। নড়াইলবাসী তার কাছ থেকে ভালো কিছু পাবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

বাবা হওয়াটাই গর্বের বিষয়, সফল সন্তানের বাবা হওয়া তো আরও গর্বের। আমার দুটি সন্তান মাশরাফি ও মুরসালিন। তাদের নিয়ে আমি গর্বিত। তারা দুজনই এখন ইংল্যান্ডে। আমি দিন কয়েকের মধ্যে সে দেশে যাচ্ছি। আর বাবা দিবসে সব বাবার সুস্থতা কামনা করছি।

অনুলিখন: কার্ত্তিক দাস, নড়াইল