'মুক্তিযোদ্ধা বাবার আদর্শ সন্তান হোক রাহী'

বাবার সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার আবু জায়েদ রাহী।
বাবার সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার আবু জায়েদ রাহী।
>আজ বাবা দিবস। প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ১০ ক্রিকেটারের বাবাদের ১০টি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। এবারের বিশ্বকাপ দলে থাকা চার ক্রিকেটারের বাবা নেই। তাঁদের মা ও ভাইয়েরা বললেন বাবাদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের নানান স্মৃতিকথা।

বাংলাদেশের হয়ে ৫ টেস্ট ও ২ ওয়ানডে খেলা আবু জায়েদ রাহী সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে। এর আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট পেয়ে বিশ্বকাপের দলে থাকার যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান আবু জায়েদের সঙ্গে বাবার সম্পর্কের কথা শোনালেন মা সৈয়দা ফাতেমা খানম।

সিলেট নগরের মীরাবাজার এলাকা। আঁকাবাঁকা একটি গলি পেরিয়েই আবু জায়েদের বাসা। বাসার সামনেই এক চিলতে উঠোন। সেখানে কিছু কিশোর ক্রিকেট খেলছে। তাদের কয়েকজনের গায়ে আবার বাংলাদেশ দলের জার্সি। বাসার দোরঘণ্টি বাজাতেই জায়েদের মা সৈয়দা ফাতেমা খানম দরজা খুলে দেন।

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই সুপরিসর বসার ঘর। সেখানে দুটি আলমারি এবং এক কোণে সাজিয়ে রাখা বেশ কিছু ক্রেস্ট আর ট্রফি। সেসব দেখাতে দেখাতে সৈয়দা ফাতেমা খানম তৃপ্তির হাসি হাসেন। একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘নাইনটিনের (অনূর্ধ্ব-১৯) খেলোয়াড় হিসেবে রাহী অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল।’

জায়েদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক চৌধুরী মারা গেছেন ২০০৪ সালে। স্বামীর কথা মনে করে সৈয়দা ফাতেমা খানম বললেন, ‘আমার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। আমার ছোট ছেলেটা জাতীয় দলে খেলে দেশের পক্ষে ভালো কিছু করবে, আমাদের মুখ উজ্জ্বল হবে—এটাই আশা করি। মুক্তিযোদ্ধা বাবার আদর্শ সন্তান হোক রাহী।’

প্রয়াত স্বামী আবদুল খালিক চৌধুরী সম্পর্কে ফাতেমা বলছিলেন, ‘বাচ্চাকাচ্চারা কীভাবে মানুষ হবে, তা নিয়ে চিন্তা করতেন তিনি। লেখাপড়ার কথা বলতেন সব সময়। সহায়-সম্পত্তি নিয়ে বেশি ভাবতেন না।’

আবু জায়েদের বাবা রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সভা-সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তার মধ্যেও ছেলেমেয়ের পড়াশোনা নিয়ে খুব সচেতন ছিলেন। তাঁর বাবার কথা ছিল, পড়াশোনা আর খেলাধুলা, দুটোতেই যেন তাঁর সন্তানেরা ভালো করে। আবু জায়েদ যখন খেলাধুলায় ভালো করতে থাকলেন, তখন তিনি তাতেই খুশি ছিলেন।

এখন তো পরিবার, নিজ এলাকার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন আবু জায়েদ। তাঁর মা বললেন, ‘রাহী অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছে। ওপরওয়ালা তাঁকে এত দূর এনেছেন। ও ভালো খেলুক, এটাই চাই। আরও যাঁরা বিশ্বকাপে গেছে, সবাই ভালো খেলুক। দেশের সবাই যেন গর্ব করতে পারে, এটাই চাই। জায়েদের বাবা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।’

সৈয়দা ফাতেমা খানমের সঙ্গে কথা বলে যখন বেরিয়ে পড়তেই দেখা মিলল খেলায় ব্যস্ত কিশোরদের। জায়েদদের বাড়ির উঠোনে ভবিষ্যতের জায়েদরা খেলছে আর ‘আউট’ ‘আউট’ বলে চিৎকার জুড়েছে।