'বাবার স্বপ্নই মোসাদ্দেকের বড় অনুপ্রেরণা'

বাবার স্বপ্ন পূরণ করে জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন মোসাদ্দেক হোসেন।
বাবার স্বপ্ন পূরণ করে জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন মোসাদ্দেক হোসেন।
>আজ বাবা দিবস। প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ১০ ক্রিকেটারের বাবাদের ১০টি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। এবারের বিশ্বকাপ দলে থাকা চার ক্রিকেটারের বাবা নেই। তাঁদের মা ও ভাইয়েরা বললেন বাবাদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের নানান স্মৃতিকথা।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে মোসাদ্দেক হোসেনের ম্যাচজয়ী ইনিংসটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ময়মনসিংহের ছেলে মোসাদ্দেকের ব্যাটেই তো প্রথমবারের মতো কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেকের এমন সাফল্য দেখে যেতে পারেননি তাঁর বাবা। অথচ বাবার অনুপ্রেরণাতেই মোসাদ্দেকের ক্রিকেটে আসা। সে গল্পই শুনিয়েছেন মোসাদ্দেকের মা হোসনে আরা বেগম।

মোসাদ্দেক তখন স্কুলে পড়েন। ছেলের ক্রিকেট প্রতিভায় মুগ্ধ বাবা আবুল কাশেম। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দেন ময়মনসিংহের এক ক্রিকেট ক্লাবে। বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে অনুশীলন করতেন মোসাদ্দেক। ছেলের অনুশীলনের সময় মাঠের পাশেই বসে থাকতেন বাবা আবুল কাশেম। স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলবে। বিশ্ব কাঁপানো ক্রিকেটার হবে। আবুল কাশেমের স্বপ্ন সত্যি হলো ঠিকই। কিন্তু তিনি তা দেখে যেতে পারলেন না। ২০০৮ সালে মারা যান তিনি।

জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার দিনে বাবা নেই, এই আক্ষেপ এখনো রয়ে গেছে মোসাদ্দেক হোসেনের মনে। বাবার মৃত্যুর সময় মোসাদ্দেক দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। দুই ভাই মোসাব্বের ও মোসাদ্দের তখন আরও ছোট। তিন ছেলেকে মানুষ করার দায়িত্ব বর্তায় মা হোসনে আরা বেগমের কাঁধে। মোসাদ্দেক হোসেনের মা হোসনে আরা বেগম স্বামী আবুল কাশেমের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি জানান, ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থায় চাকরি করতেন আবুল কাশেম। খেলাধুলার প্রতি ছিল অদম্য আগ্রহ। সেই থেকেই মোসাদ্দেক হোসেনকে ক্রিকেটার হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন। প্রতিদিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে আবুল কাশেম মোসাদ্দেককে নিয়ে চলে যেতেন সার্কিট হাউস মাঠে। মাঠের পাশে বসে থেকে ছেলের অনুশীলন দেখতেন। কোনো ভুলক্রটি হলে রাতে বাসায় এসে খাবার সময় তা শুধরে দিতেন। মাঠে অনুশীলন শেষ করে বাবা–ছেলে ফিরতেন ময়মনসিংহ শহরের কাচিঝুলি এলাকার বাসায়।

মোসাদ্দেককে নিজের হাতে গোসল করিয়ে দিতেন আবুল কাশেম। পরে রাতে একসঙ্গে খেতেন। খেতে খেতে বাবা আর ছেলে ক্রিকেট নিয়েই বেশি কথা বলতেন। হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘ওদের বাবার জীবনের প্রধান স্বপ্নই ছিল মোসাদ্দেক বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলবে। তিনি প্রায়ই বলতেন, ছেলের প্র্যাকটিস দেখতে খুব ভালো লাগে। কবে যে মানুষ বলবে—ওই যে জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোসাদ্দেকের বাবা!’

স্বামীর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন হোসনে আরা বেগম। মোসাদ্দেকের বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন শুরু হয় মারাত্মকভাবে। আবুল কাশেমের রেখে যাওয়ার দুই শতক জমি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এত কিছুর পরও দমে যাননি কখনো। শেষ পর্যন্ত স্বামীর স্বপ্ন ঠিকই পূরণ করেছেন হোসনে আরা বেগম।

হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে খেলার গৌরবটা ওর বাবা দেখে যেতে পারলেন না। এই নিয়ে মোসাদ্দেক প্রায়ই আক্ষেপ করে। বাবাকে হারানোর পর স্বপ্নপূরণ ও আরও বেশি প্ররিশ্রম করেছিল। বাবার স্বপ্নই মোসাদ্দেকের বড় অনুপ্রেরণা ছিল।’