রান্নার আগে-পরে

রান্নার সঙ্গে আমরা সবাই কম–বেশি পরিচিত। কিন্তু ব্যবহারিক দিক দিয়ে এ সম্বন্ধে অনেকেরই জ্ঞান কিছুটা কম। অনেকের কাছে রান্না অত্যন্ত কঠিন কাজ। রান্নার কথা শুনলেই আঁতকে ওঠেন। অনেকেই মনে করেন রান্না করতে এত জিনিস লাগে যে এগুলো জোগাড় করতেই দিন ফুরিয়ে যায়। রান্না করার আগে মানসিক ও শারীরিক দুই ধরনের প্রস্তুতি দরকার। যাঁরা নিয়মিত রান্না করেন তাঁরা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এত দিনে আয়ত্তে এনে ফেলেছেন। চুলায় তেল গরম করতে দিয়ে পেঁয়াজ কাটতে বসার মতো ভুল তাঁরা করবেন না। এক দিক দিয়ে চিন্তা করলে রান্না একটি শৈল্পিক কাজ। রান্নার প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিতে পারলে কাজটি করার সময় বাড়তি ঝামেলা অনুভব করবেন না।

গুছিয়ে নেওয়া

রান্নার আগে আপনার চারপাশ পুরোপুরি গুছিয়ে নিন। রান্নাঘর অপরিষ্কার থাকলে পরিষ্কার করে নিন। কিচেন কেবিনেটে সব ধরনের গুঁড়ামসলার কৌটা, যেমন হলুদ, মরিচ থেকে শুরু করে গোলমরিচ, গরম মসলার গুঁড়ার কৌটায় যদি নামের লেবেল থাকে তাহলে দরকারের সময় সহজেই পেয়ে যাবেন। লবণ, চিনি, চা, কফি, তেল, চাল, ডাল, আটা, ময়দা, কর্ন ফ্লাওয়ার, সয়াসস, কিশমিশ, টমেটো সস, চিলি সস, ওয়েস্টার সস এসব রান্নার উপাদান যদি একবার গুছিয়ে কিনে ফেলা যায়, তাহলে অনেক দিন ব্যবহার করা যায়। সসের বোতলের মুখ খোলা হলে সেটাকে ফ্রিজে রাখা ভালো।

রান্নার সময় যেসব জিনিস লাগবে হাতের কাছে গুছিয়ে নিয়ে রান্না শুরু করুন। যে পাত্রগুলো প্রয়োজন হবে, সেগুলোও কাছাকাছি রাখুন। পাতিল ও রান্নাভেদে আলাদা চামচের প্রয়োজন হয়। চামচগুলো ধুয়ে শুকিয়ে নিন রান্না শুরু করার আগে থেকেই।

মানসিক প্রস্তুতি

সময় কম থাকলে অনেকেই তাড়াহুড়ো করেন রান্নার সময়। দিনের শুরুতেই যদি রান্না করতে হয়, রাতে যতটুকু সম্ভব সব গুছিয়ে রাখুন। তাহলে রান্নার সময় চাপ অনুভব করবেন না। রেসিপি দেখে কোনো কিছু রান্না করার থাকলে আগে থেকেই ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিতে হবে। অনেকেই বলেন মন খারাপ থাকলে রান্না করলে ভালো হয়ে যায় মন।

উপকরণ তৈরি

মাছ-মাংস রান্না করার বেশ কিছুক্ষণ আগে ফ্রিজ থেকে নামিয়ে নেওয়া উচিত। ধোয়া, কাটাতে অনেকখানি সময় চলে যায়। সবজি কাটা, পেঁয়াজবাটার মতো উপকরণগুলো গুছিয়ে নিয়ে তারপরই রান্না শুরু করুন।

রান্না শেষে

রান্না শেষ হলে রান্নাঘরের ছুরি, কাঁচি, চপিং বোর্ড, ধুয়েমুছে, চুলার আশপাশ মুছে পরিষ্কার করে সব জিনিস জায়গামতো রেখে দিতে হবে। মাসে দুইবার রান্নাঘরের সব জিনিস পরিষ্কার করতে হবে। খাবার অনুযায়ী রান্না পাত্র ও পরিবেশন পাত্র বাছাই করতে হবে এবং সুবিধাজনক স্থানে গুছিয়ে রাখতে হবে। রান্নাঘরের এক কোনায় ঢাকনা দেওয়া ডাস্টবিন রাখতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

রান্নাঘরের চিমনি বা এগজস্ট ফ্যান থাকলে রান্নাঘর আঠালো চিটচিটে কম হবে। সবজি ছেলা ও কাটার জন্য থাকবে পিলার, বিভিন্ন আকারের ছুরি, কাঁচি, চপিং বোর্ড, ব্লেন্ডার সাইন্ডার, অথবা দা, বঁটি, শিল–পাটা, হামানদিস্তা। আপনি যেগুলোতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন সবকিছু যদি আপনার রান্নাঘরে গোছানো থাকে তাহলে কি আপনার ইচ্ছে করবে না ঝটপট রান্নাঘরে ঢুকে চটপট কিছু রান্না করতে? হুট করে কোনো মেহমান চলে এলে গল্প করতে করতেই তাঁর জন্য কিছু রান্না করে ফেলা যায়। ইচ্ছে করল চিকেন ফ্রাই রান্না করতে। ফ্রিজে যদি একটা মুরগি থাকে, বাকি সবকিছু তো রান্নাঘরেই আছে, কোনো চিন্তা নেই!

লেখক: রান্নাবিদ