বলিরেখার বলি হোক

বলিরেখা রুখতে ত্বকে ভেজা ভাব রাখা ভালো। ছবি: নকশা
বলিরেখা রুখতে ত্বকে ভেজা ভাব রাখা ভালো। ছবি: নকশা

বয়স বেশি কিংবা কম, বলিরেখা বুড়িয়ে দেয় সুন্দর হাত, পা, গলা। চেহারার বাইরেও হাত, পা, গলায় ভাঁজ পড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা এই ভাঁজকেই বলিরেখা বলে থাকেন। বয়সের সঙ্গে বলিরেখার সম্পর্ক থাকলেও অযত্ন–অবহেলাও একটি কারণ।

ঢাকার হার্বস বিউটি ক্লিনিকের ত্বক বিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি জানান, নানা কারণ থেকেই শরীরের ত্বকে বলিরেখা পড়ে থাকে। মুখেই বেশি পড়ে, কারণ পুরো শরীরের চেয়ে আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা মুখে কম থাকে। ফলাফল বলিরেখা মুখেই বেশি হয়ে থাকে। মুখে তেল ধরে রাখার গ্রন্থি বেশি থাকে। শরীরের অন্যান্য স্থানে তেল ধরে রাখার গ্রন্থি বেশি থাকে। আর্দ্রতা ধরে রাখার গ্রন্থি কম থাকে।। মুখের কোথাও কোথাও আর্দ্রতা ধরে রাখার গ্রন্থি একেবারেই নেই; যেমন চোখের চারপাশ, ঠোঁটের চারপাশে এবং থুতনির স্থান। যথাযথ জায়গায় এ কারণে যথাযথ নিয়মে পরিচর্যা না করলে দ্রুত বলিরেখা পড়ে যায়। এসবের বাইরেও বলিরেখা পড়ার কিছু কারণ আছে, যেমন অতিরিক্ত প্রসাধনীর ভুল ব্যবহার, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, পর্যাপ্ত পানি পান না করা, রোদ, ধুলাবালি, অপরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত ভিটামিনযুক্ত খাবার না খাওয়া ইত্যাদি। আফরিন মৌসুমি বলেন, সাধারণত সব ধরনের ত্বকেই বলিরেখা পড়ে। তবে শুষ্ক ত্বকেই বলিরেখা বেশি পড়ে। ২৫ বছর বয়স থেকেই কারও কারও হাত, পা, গলার ত্বকে নানা কারণে বলিরেখা পড়ে যায়। যাঁদের মাত্র বলিরেখা আসতে শুরু করেছে, তাঁরা চাইলেই কিছু নিয়ম মেনে তা দূর করতে পারবেন, রইল কিছু পরামর্শ।

  • সপ্তাহে ২ দিন এটি করতে পারেন। ডাবের পানি ২ টেবিল চামচ, ১টি ডিমের সাদা অংশ, ১ চিমটি কর্পূর, সামান্য পাউডার একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে গলায়, ঘাড়ে এবং হাতে–পায়ের পুরো ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
  • অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে ডিমের কুসুম, কাঠবাদাম পেস্ট এবং দুই বা তিন টেবিল চামচ ডাবের পানি নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। ডাবের পানি ত্বকের ভেতর প্রবেশ করে ত্বককে সুস্থ রাখে এবং ত্বকের পানিশূন্যতা রোধে কাজ করে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে খেজুর ভিজিয়ে রেখে পানি খেতে পারেন। তাহলে ত্বকের ওপরের শুষ্কতা কেটে যাবে এবং বলিরেখাও মিলিয়ে যাবে। শরীরে পানির অভাব হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। ফলে বলিরেখা পড়ার সুযোগ তৈরি হয়। খেজুর আর পানি শরীরের ভেতরের পানিশূন্যতা রোধ করবে।
  • একটা খেজুর গরম দুধে ভিজিয়ে রেখে ভালোমতো পেস্ট করে নিন। এর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ বেসন মিশিয়ে পুরো ত্বকে লাগিয়ে নিতে হবে। ২০-২৫ মিনিট পর পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত যত্নে বলিরেখা কমে যাবে।

এ ছাড়া গলায়, হাত, পায়ের ভাঁজ রোধে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এই ময়েশ্চারাইজার তৈলাক্ত না হওয়াই ভালো। অধিক পানি আছে, এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে বাজার থেকে কেনা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের আগে খানিকটা গোলাপজল মিশিয়ে নমনীয় করে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে বাজারের কেনা ময়েশ্চারাইজারের ক্ষতিকর পদার্থের প্রভাব খানিটা কেটে যাবে। শুষ্ক ত্বকের যত্নে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বাজারের কেনা ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে গোলাপজল এবং এক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে গলায়, হাত, পায়ে ব্যবহার করুন।

আফরিন মৌসুমির দেওয়া ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার বানানোর পদ্ধতি

  • ১ কাপ অ্যালোভেরা জেল ফুটন্ত পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভালোমতো ছেঁকে পানি ঝরিয়ে এক টেবিল চামচ গোলাপজল, আধা টেবিল চামচ গ্লিসারিন, ভিটামিন সি ট্যাবলেট ৩টি একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার কাচের বোতলে রেখে দিন। ১ সপ্তাহ পর্যন্ত রেখে দেওয়া যাবে। এটা নিয়মিত ব্যবহারে গলার বলিরেখা কমে যাবে, ব্রণ চলে যাবে।
  • একটা বা দুটি নারকেল কুরিয়ে গরম পানিতে ব্লেন্ড করে চুলায় জ্বাল দিন। এভাবে কিছুক্ষণ জ্বাল দেওয়ার পর কোরানো নারকেল থেকে তেল বের হতে থাকবে। ওই তেলটাই ঠান্ডা করে নিয়ে বোতলে ভরে স্বাভাবিক তাপে রেখে দিতে হবে। এভাবে বানানো তেল থেকে চার ভাগের এক ভাগ তেল সরিয়ে নিন। এই তেলের পরিমাণের অর্ধেক গ্লিসারিন, ৮-১০টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং ১-২ চিমটি কর্পূর মিশিয়ে বোতলে রেখে দেওয়া যায়। নিয়ম করে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করলে হাতের বলিরেখা কমে যাবে। ত্বকে আসবে উজ্জ্বলতা। কমে যাবে খসখসে ভাব।