ইউনিক ইউনিমার্ট
>বেশ কয়েক বছর ধরে নগরজীবনে সুপারশপ ধারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ঘরগৃহস্থালির সব পণ্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পাওয়া যায় একই ছাদের নিচে। দেশি উদ্যোগ ইউনিমার্ট সে ধারণাকে আরও ব্যাপক করেছে। ছয় বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ইউনিমার্ট নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।
বছর ছয়েক আগের কথা। হঠাৎ করেই ফেসবুকজুড়ে অনেক ‘চেক–ইন’ দেখা গেল ইউনিমার্ট নামের একটি জায়গার। সেখানে প্রাত্যহিক জীবনের কেনাকাটা যেমন করা যায়, সঙ্গে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। রাজধানীর গুলশান ২–এর এই ইউনিমার্টে গিয়ে একটি চেক–ইন দেওয়া না থাকলে যেন চলতি ধারার সঙ্গে থাকা হচ্ছিল না। ফেসবুকের ভাষায়, এখানে না গেলে জাতি মেনে নেবে না। সেই ইউনিমার্ট এ বছর ছয়ে পা দেবে। ঢাকার মানুষের কাছে এর আবেদন তো কমেইনি, বরং নিত্যনতুন পণ্যের পসরা সাজিয়ে আকর্ষণ বাড়িয়েই চলেছে সব বয়সের মানুষের কাছে।
ইউনিমার্টের ফেসবুক পেজে গেলে সেটির রিভিউ দেখার পর বোঝা যায়, কতটা আস্থা অর্জন করেছে। বিশ্বমানের সেবা দিতে ইউনাইটেড গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনিমার্ট যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। চলতি বছর ঢাকার ধানমন্ডিতেও চালু হয়েছে আরেকটি শাখা। ইউনিমার্টকে আরেক ধাপ এগিয়ে দিতে ঢাকাবাসীকে চমক দিতে এনেছে শেফ’স টেবিল (গুলশান ও ধানমন্ডি শাখা)। একই ছাদের নিচে পাওয়া যায় ঢাকার সেরা বিভিন্ন রেস্তোরাঁর খাবারের স্বাদ।
যা দেখে চোখ জুড়ায়
গুলশান ইউনিমার্টে ঢোকার মুখেই চোখে পড়ে নানা জাতের মাছের সম্ভার নিয়ে অ্যাকুয়ারিয়াম। মাছের জলকেলি দেখতে দেখতে ভেতরে ঢুকলেন। চাইলে কিনতেও পারেন অ্যাকুয়ারিয়াম। হাতে একটু সময় নিয়ে গেলে ‘ইনডালজ’ নামের বেকারি শপ থেকে নিতে পারেন পছন্দের কোনো মিষ্টান্ন ও কফি। যাঁরা স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে ভালোবাসেন বা ডায়েটের মধ্যে থাকেন, তাঁরা নিজে নিজে পছন্দের উপকরণ মিশিয়ে নিয়ে সালাদ বানিয়েও নিতে পারেন। ওজন মেপে দাম দিতে পারেন।
এরপর ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন এখানের ২১টি ডিপার্টমেন্টের নানা ধরনের পণ্য। কী নেই এখানে? ইউনিমার্টের নিয়মিত একজন ক্রেতা চৈতি আহমেদ। গুলশানে তাঁর অফিস থাকায় ফেরার পথে মাসকাবারি বাজার করা থেকে শুরু করে দুপুরে লাঞ্চও ওখানে সারেন। ছয় বছর ধরেই সেখানে তাঁর যাতায়াত। কেন ইউনিমার্টে যান—এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমত, পাওয়া যায় না এমন কোনো জিনিস নেই সেখানে। সবচেয়ে বড় কথা, বৈচিত্র্য আছে। মান নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। এখানে যাঁরা কাজ করেন, সবার ব্যবহারও খুব ক্রেতাবান্ধব।’
৫০ হাজারের বেশি পণ্যের সম্ভার এখানে। ফলে দেখে–শুনে–বুঝে সুবিধা ও পছন্দমতো কেনাকাটা করা যায়।
বৈচিত্র্যময় পণ্যের সম্ভার
ধরা যাক, নতুন একটি পদ রান্না করবেন। এমন একটা উপকরণ দরকার, সারা শহরে খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু ইউনিমার্টে মিলবেই। ফেসবুকে প্রায়ই এমন স্ট্যাটাস দেখা যায়। এখানকার কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে জুতা কেনা পর্যন্ত সবকিছুতেই গুণগত মান বজায় থাকে। গুলশানের ইউনিমার্টে ৪০ হাজার বর্গফুটের মধ্যে পাবেন নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীই। পিছিয়ে নেই ধানমন্ডির ইউনিমার্টও। প্রায় ৩০ হাজার বর্গফুটের এই শাখা তিনতলাজুড়ে আছে।
কত ধরনের চিজ (পনির) যে পাওয়া যায়, তা ইউনিমার্টে গেলেই দেখতে পাবেন। গুলশানে যেহেতু বিদেশি ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি, তাই সেখানে বিশেষ কিছু কর্নার আছে। চীনাদের কথা ভেবে শুধু তাদের জন্য একটি কর্নার রয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয়, কোরীয়, শ্রীলঙ্কানসহ বিভিন্ন জাতির মানুষের জন্য বিশেষ এই কর্নারগুলো বাংলাদেশের ক্রেতাদের কাছেও প্রিয়। বৈচিত্র্য আছে ফ্রোজেন খাবার, শুকনা খাবার, বিস্কুট, কেক, পাস্তা, বাদাম, চকলেট, ফল, মসলাসহ বৈদ্যুতিক পণ্য ও প্রসাধনসামগ্রীতে। চাল, ডাল ও মাছেও আছে দেশ–বিদেশের স্বাদ। ‘শুদ্ধ কৃষি’ নামের ব্র্যান্ডের আওতায় গ্রামের নারীদের আঙিনা থেকে সরবরাহ করা কৃষিপণ্য এখানে পাওয়া যায়। ফলে একদম মাচার লাউ, শাক, আঙিনার বেগুন, টমেটো, ক্ষীরায় দেশি স্বাদ।
যাঁরা চা ও কফি পান করতে পছন্দ করেন, তাঁরা পাবেন নানা দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চা ও কফি। বেকিংয়ের উপকরণও আছে। মেয়েদের পারসোনাল হাইজিন বিভাগে আছে নানা রকমের জিনিস। স্যানিটারি ন্যাপকিন, টেমপোন, মেনস্ট্রুয়াল কাপও পাবেন এখানে। ছেলেদের শেভিং ক্রিম, পারফিউম, ট্রিমারসহ সব ধরনের ব্যবহার্য সামগ্রী আছে এখানে।
ইউনিমার্টে খেলাধুলা ও ব্যায়াম করার পোশাকের মানও ভালো। বুক এন্ডস বিভাগে পাবেন দেশ–বিদেশের লেখকদের নানা রকমের বই। দেশীয় ব্র্যান্ড ‘যথাশিল্প’–এর তৈরি নান্দনিক নকশার নোটবুক আছে। নিজের জন্য বা উপহার দেওয়ার জন্য ল্যাম্পশেড, ফটোফ্রেম, শিশুদের জন্য টেবিল ল্যাম্প আছে। ধানমন্ডি ও গুলশান—দুই জায়গাতেই শিশুদের খেলনা দেখলে মনে হবে, এ এক রূপকথার জগৎ। বিচিত্র ধরনের খেলনা পাওয়া যায় সব বয়সের শিশুদের জন্য। শুধু তা–ই নয়, শিশুদের যত্নআত্তির সামগ্রীতে আছে ভিন্নতা। নবজাতক শিশুর নানা উপকরণও রয়েছে এখানে। পুরুষদের পোশাকও পাওয়া যায় এখানে। আরও আছে সবুজ একটা কোণ। যেখানে মেলে গাছ, তাজা ফুল ইত্যাদি।
দিন কয়েক আগে ধানমন্ডির ইউনিমার্টে দল বেঁধে এসেছিলেন তরুণদের একটি দল। জানতে চাওয়া হলো কী কী কেনাকাটা করতে এসেছেন। তাঁদের একজন বললেন, বিদেশি জিনিস কেনার সময় নির্দ্বিধায় কিনতে পারি। আজ এসেছি ফল কিনতে। এখানকার ফলগুলো তাজা ও ফরমালিনমুক্ত। মানের ব্যাপারে এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না, তাই আসি।’
এটাই ইউনিমার্টের ইউনিক দিক—ক্রেতার বিশ্বস্ত বন্ধু হতে পারা। যেখানে কেনাকাটা না করা হলেও নিছক ঘুরতে আসা যায়।
একনজরে ইউনিমার্ট
প্রতিষ্ঠা: জুলাই, ২০১৩
শাখা: ২টি (গুলশানে চালু হয় ২০১৩ সালে ও ধানমন্ডিতে চালু হয় ২০১৯ সালে)
পণ্যের ডিপার্টমেন্ট: ২১
পণ্য: ৫০ হাজারের বেশি রকমের
পরিসর: ৪০ হাজার বর্গফুট গুলশান শাখা, ৩০ হাজার বর্গফুট ধানমন্ডি শাখা।
উদ্যোগ: শেফ’স টেবিল
মূল প্রতিষ্ঠান: ইউনাইটেড গ্রুপ