জলে জর্জেট...

এই মৌসুমে জর্জেটের পোশাক দেবে আরাম। মডেল: ওশিন, ছবি: নকশা
এই মৌসুমে জর্জেটের পোশাক দেবে আরাম। মডেল: ওশিন, ছবি: নকশা

রোদ আর বৃষ্টিমাখা দিনে মন উদাস করার মতো উপল‌ক্ষের অভাব হয় না। তবু বর্ষা এলেই কপাল কুঁচকে ওঠে। যতই বাতাসে সোনালি কদম দোলা দিক, অফিসে যেতেই হবে। মন যতই ফুটে থাকা বেলির দিকে ছুটে যাক, শাড়ির আঁচলে দাগ লাগানো যাবে না, বর্ষার কাদার ছিটায় অফিসের ছিমছাম সালোয়ার-কামিজ যেন নষ্ট হয়ে না যায়, সেটাও েখয়াল করতে হবে। এসবের সমন্বয় ঘটাতে বর্ষার পোশাকের সমাধান—জর্জেট। কদম, বেলি, নীল আকাশ কিংবা সড়কদ্বীপে থাকা সবুজ গাছের পাশাপাশি এই একটি নামও জুটে গেছে বাঙালি নারীর বর্ষার শব্দাবলিতে।

বর্ষায় জর্জেট চলছে অনেক দিন থেকেই, তবু বছর বছর বদলে যাচ্ছে এর ধরন, মান আর নকশা। এ নিয়ে কথা বলছিলাম ফ্যাশন হাউস ড্রেসিডেলের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার মায়া রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, বর্ষার উপযোগী জর্জেট আর সারা বছর পরা জর্জেটের মধ্যে হালকা পার্থক্য আছে। প্রথম পার্থক্য রঙে। বর্ষায় চারদিক কেমন যেন মুখ গোমড়া, থমথমে রং মাখা। তাই জর্জেট কিনতে হলে বেছে নিতে হবে উজ্জ্বল রং। এ বছর ব্লক কালারের ফ্যাশন চলছে চারদিক, তাই রং হিসেবে উজ্জ্বল হলুদ, টুকটুকে লাল, গাঢ় নীল, বেগুনি, ঝলমলে সবুজ, এমন রং বাছতে পারেন। জর্জেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রিন্ট হলো ফুলেল নকশা। তাতেও এই রংগুলো অসাধারণ লাগবে।

বদলে গেছে পোশাকের ধরনও। আগের ধাঁচ নেই বললেই চলে। সামনে বা পেছনে বাড়িয়ে, কেপের মতো জুড়ে তৈরি হচ্ছে বর্ষার পোশাকের ডিজাইন। ফ্যাশন উইকগুলোর সুবাদে উন্নত বিশ্বেও মানানসই পোশাকগুলোর ডিজাইনও অনুসরণ করছে অনেকে। সেই হিসেবে বলা যায়, ম্যাক্সি ধাঁচের জনপ্রিয়তা খুব বেড়েছে এ বছর। বর্ষার ভ্যাপসা গরম তো বটেই, জলকাদা থেকে নিজেকে এবং পোশাককে বাঁচাতে ম্যাক্সি ধাঁচের জামা বানাতে বেছে নিন জর্জেটের কাপড়। আরেকটি পরিবর্তন এসেছে হাতায়। মায়া রহমান জানান, জর্জেট পোশাকে অব শোল্ডার, কোল্ড শোল্ডার, প্রজাপতি এবং বেল স্লিভের ডিজাইন সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে এখন। শুধু পোশাক নয়, ব্লাউজেও বেড়েছে বেল স্লিভের প্রভাব।

বলতেই হবে, বর্ষায় জর্জেট শাড়ির মতো আরাম আর কোনো শাড়িতে নেই। ওয়েটলেস জর্জেট শাড়িগুলো সাধারণত একরঙা হয়। তাই এই বছর একরঙা শাড়ির সঙ্গে রঙিন, ঝলমলে ব্লাউজ বেশি দেখা যাবে। হালকা রঙের একরঙা জর্জেট শাড়িই এবারের চলতি ধারা। তাতে চাইলে প্রিন্ট করা ফলস জুড়ে নিতে পারেন। অনেকেই আবার জর্জেট শাড়ি গায়ের সঙ্গে মিশে থাকে বলে অস্বস্তিতে ভোগেন। তাঁদের জন্য ডিজাইনারের পরামর্শ হলো, ভারী জর্জেট পরুন। পার্টির জন্য শিফন বেছে নিন। স্বচ্ছতা নিয়ে দ্বিধা থাকলে ক্রেপের শাড়ি বেছে নিন। এগুলো সবই জর্জেট শাড়ির কাজে দেবে। অনেকেই জর্জেটের সঙ্গে সিল্কের বা সাটিনের সায়া বেছে নেন, যেন কুঁচির অংশ ভালো দেখায়। চাইলে তিন কাট বা ছয় কলির সায়া বেছে নিতে পারেন। তবে জর্জেট পরলে নিজেকে ভালো দেখায়। এটাও জর্জেটের অন্যতম গুণ।

সব শেষে মায়া রহমান যোগ করেন, বর্ষায় জর্জেট পরার সবচেয়ে বড় সুবিধা খুব দ্রুত পানি শুকানোর ক্ষমতা। ফ্যানের নিচে বসলেই পাঁচ মিনিটে পোশাক শুকিয়ে যায়। দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই আপনি কী পরিমাণ জলকাদা ঠেলে এসেছেন আজ। দাগ পড়ে গেলেও তোলার তেমন কষ্ট নেই। অন্য সুতোয় দাগ বসে গেলে ঘষতে গেলেই রং নষ্ট হয়, কাপড়ের মান নষ্ট হয়। জর্জেটে হালকা পানি দিয়ে ধুলেও ময়লা উঠে আসে। তবু যেকোনো পোশাকের যত্ন লাগে। জর্জেট খুব বেশিক্ষণ ভ্যাপসা পরিবেশে ফেলে রাখতে নেই। খুব দ্রুত চিতি পড়ে যায়। তাই অফিস থেকে ফিরে যত দ্রুত সম্ভব জর্জেটের কাপড় পরিষ্কার করে শুকিয়ে ফেলুন। জর্জেট ভালো রাখতে এটাই সবচেয়ে জরুরি এবং সহজ টিপস।