বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর!

সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে তা এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যাবে। মডেল: শান্তা। ছবি: অধুনা
সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে তা এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যাবে। মডেল: শান্তা। ছবি: অধুনা

ঝলমলে রোদ দেখে ছাতা না নিয়েই অফিস বা কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে বের হলেন, কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি শুরু! উপায় নেই, ভিজে গেলেন। এতেই কি শেষ? বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়ছে অথচ হাঁচি-কাশি হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বৃষ্টিতে না ভিজেও অনেকেই মেঘলা দিনে সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে ভুগে থাকেন। সাধারণত বৃষ্টিতে ভিজলে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশির সৃষ্টি হয়। আবার কারও কারও আলার্জির কারণে শুধু হাঁচি-কাশি হয়ে থাকে।

এই বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. এ কে এম মুজিবুর রহমান বলেন, বৃষ্টিতে ভিজলে যত দ্রুত সম্ভব শুকনো কাপড় দিয়ে গা মুছে ফেলতে হবে। জ্বর বা সর্দি হলেও দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কয়েক দিন পর এমনিতেই এই জ্বর বা সর্দি ভালো হয়ে যায়।

কী কী লক্ষণ?
অনবরত নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ থাকা, হাঁচি, গলাব্যথা ও কাশি এ রোগের লক্ষণ। স্বল্পমাত্রার জ্বরও থাকতে পারে। বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসার বড় কারণ ভেজা কাপড় গায়ে শুকিয়ে যাওয়া। জ্বরের সঙ্গে সামান্য সর্দি থাকতে পারে। সাধারণ সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা উভয়ই ভাইরাসজনিত রোগ। তাই উপসর্গগুলোও একই রকম হয়ে থাকে।

কী জটিলতা হতে পারে?
সাধারণ সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজ থেকেই সেরে যায়, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে জটিলতা প্রকাশ পায়। যেমন বড়দের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার জ্বর তার সঙ্গে কাঁপুনি, টনসিল ফুলে যাওয়া, সাইনাসজনিত ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়৷ শিশুদের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার জ্বর, সঙ্গে পানিস্বল্পতা, বমি, পেটে ব্যথা, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, ঘাড় ব্যথা, ঘুম ঘুম ভাব, শ্বাসকষ্ট, কানে ব্যথা হয়ে থাকে।

চিকিত্সা
ভয়ের কিছু নেই। এই সর্দি-জ্বর ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজ থেকেই সেরে যায়। সাধারণত সর্দি, কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। উপসর্গজনিত কিছু চিকিত্সার মাধ্যমে কষ্ট কিছুটা কমানো সম্ভব। এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। সর্দি-কাশির সঙ্গে যেহেতু অল্প জ্বর এবং শরীরে, মাথায় বা গলায় ব্যথা থাকে তাই ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ যথেষ্টই কার্যকর। নাক বন্ধভাব এবং নাকে পানি ঝরার কারণে ন্যাজাল ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। কফ সিরাপ সাধারণ সর্দি-কাশিতে তেমন কোনো উপকারে আসে না। তা ছাড়া দুই বছরের নিচের শিশুদের কফ সিরাপ ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়। কারণ এর যথেষ্টই বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল ও গরম খাদ্য গ্রহণ, লবণ পানিতে গড়গড়া, মেনথলমিশ্রিত গরম বাষ্প ইত্যাদি ঘরোয়া চিকিত্সাগুলো অনেকাংশেই আরাম দিতে পারে।

সতর্কতা

সাধারণ সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা একধরনের বায়ুবাহিত রোগ। তাই এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যাতে তাঁর হাঁচি-কাশির সংস্পর্শে না যেতে হয়। তা ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মুখে মাস্ক বা রুমাল ব্যবহার করেন, বারবার হাত ধুয়ে নেন তাহলে রোগের সংক্রমণও কম হবে। অবশ্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রতিরোধের প্রতিষেধক টিকাও প্রচলিত আছে।

লেখক: চিকিত্সক