জলের সঙ্গে খেলা

খেলনা হাঁসের সঙ্গে শিশু মেতে উঠবে জলকেলিতে। মডেল: ভুবন গগণ, ছবি: নকশা
খেলনা হাঁসের সঙ্গে শিশু মেতে উঠবে জলকেলিতে। মডেল: ভুবন গগণ, ছবি: নকশা

গোসল তো দূরের কথা, পানি দেখলেই ডুকরে কেঁদে ওঠে অনেক শিশু। ভুলিয়ে ভালিয়ে কোনোমতে পানির কাছাকাছি নিয়ে আসাটাই যেন বিশাল একটা কাজ। তবে এসে যদি দেখে স্নানের পাত্রে প্লাস্টিকের তৈরি হাঁসের ছানা সাঁতার কাটছে? হলুদ রঙের হাঁসের ছানা, তাদের আবার লাল রঙের ঠোঁট। সাঁতরে বেড়াচ্ছে পাত্রজুড়ে আর তাদের আদর করে সামলে রাখছে মা হাঁস, কেমন হবে তবে? আদরের সোনামণিও হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাবে স্নানের জায়গায়। হাঁসদের সঙ্গে সেও হয়তো মেতে উঠবে গোসলে। 

ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার লুনা পারভীন জানিয়েছেন, ‘নবজাতকের ক্ষেত্রে জন্মের পর প্রথম তিন দিনের মধ্যে কোনো শিশুকেই গোসল করানো উচিত নয়। ৭২ ঘণ্টা পেরোনো শিশুকে এই সময়ের পর সামান্য কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করানো যায়। গোসলের সময় শিশুর উপযোগী সাবান ও শ্যাম্পু লাগানো যাবে, এতে কোনো বাধা নেই। গোসলের আগে তেল মালিশের ক্ষেত্রেও নেই কোনো বাধ্যবাধকতা।’ তবে সরষের তেল না লাগিয়ে জলপাই তেল ও বেবি অয়েল লাগাতে পারলে ভালো হয়। যেকোনো আবহাওয়ায় ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গোসল করাতে পারলে ভালো। শীতের সময় কিছুটা গরম পানিতে গোসল শিশুকে দেবে আরাম। গোসলের সময় যাতে শিশু পিছলে না পড়ে; নাকে, কানে ফেনা যেন না যায়, সতর্ক থাকতে হবে সে বিষয়েও ।

তিনি আরও জানান, ‘গোসলের সময় খেলনা ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। তবে খেলনা যাতে সুচালো না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন। মুখে ঢুকে যেতে পারে এমন ছোট বা গোল ধরনের খেলনা না দেওয়াই ভালো। সে ক্ষেত্রে খেলনা গলায় আটকে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।’

সাবান

সাবান কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে সেটি যেন শিশুর ত্বকের উপযোগী হয়। ক্ষারের পরিমাণ কম থাকলে সেটি ত্বকের জন্য সহনশীল হবে। বেছে নিতে পারেন তরল সাবানও। বাজারে বেবি সাবান ছাড়াও বেশ কিছু ব্র্যান্ডের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ধোয়া বা শুধু আলাদা সাবান কিনতে পাওয়া যায়। ৪০ থেকে ৩০০ টাকায় পাবেন সাবান। 

শ্যাম্পু

মাথার ত্বক পরিষ্কারের জন্য শ্যাম্পু সহজ সমাধান। তবে খেয়াল রাখতে হবে শ্যাম্পুর ফেনা বা ধুয়ে ফেলা পানি গড়িয়ে এসে শিশুর চোখে জ্বালা যেন না করে। তাই চটজলদি শ্যাম্পু ধুয়ে ফেলুন। যদি এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেই যায়, যত দ্রুত সম্ভব পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে দিতে হবে। ১২০ থেকে ৬০০ টাকায় শ্যাম্পু কিনতে পারবেন অনায়াসেই। 

বাথ স্পঞ্জ 

শিশুর আলতো ত্বক পরিষ্কারের জন্য চাই আদুরে পরশ, আলতো ছোঁয়া । বাথ স্পঞ্জে শিশুর দেহের বাড়তি ময়লা তুলে ফেলা যাবে সহজেই। কিছুটা বড় শিশুর জন্য লুফা ব্যবহার করতে পারেন। এসব পণ্য পেতে চাইলে দাম গুনতে হবে ৮০ থেকে ২০০ টাকার মতো। 

শাওয়ার ক্যাপ

কোনো শিশু পানি পেলেই হাত-পা নাড়িয়ে খেলতে থাকে। পাছে ভয় হয়, কানে পানি না চলে যায়। আবার কিছু শিশুর ঠান্ডাজনিত কারণে মাথা না ভেজাতে চাইলে পুরো মাথা ঢেকে রাখা টুপি পাওয়া যায়। আবার যেসব শিশু শ্যাম্পু করার সময় চোখ জ্বালা করে কান্নাকাটি করে তাদের জন্য রয়েছে মাথার ওপর অংশ গোল করে কাটা আর সেই সঙ্গে দ্রুত পানি ঝরে যাওয়ার জন্য ঢেউখেলানো শাওয়ার ক্যাপ। আবার কোনোটিতে কান ঢেকে রাখার সুবিধাও থাকে। দাম গুনতে হবে ৮০ থেকে ৩০০ টাকার মতো। 

তোয়ালে 

শিশুর শরীর খুবই নাজুক থাকায় শক্ত বা খসখসে তোয়ালে না কিনে একটু দেখে–শুনে নরম ও সুতির তোয়ালে বেছে নিন। তাতেই শিশুর গোসল হবে স্বস্তির। নানা আকার ও মানের তোয়ালে আছে বাজারজুড়ে। তবে শিশুর পছন্দের কার্টুন চরিত্র, গাড়ি, সাগরতলের প্রাণিজগতের ছবি ছাপা তোয়ালে ব্যবহারে শিশুর গোসল হবে আনন্দঘন। ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা বাজারদরে কেনা যাবে তোয়ালে। 

গামলা 

বাথটাবের মতো বড় গামলাও হতে পারে শিশুর উপযোগী জলখেলার জায়গা। সেই সঙ্গে স্নান তো রইলই। বড় মাপের গামলার দাম মানভেদে ২৮০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।

বাথটাব 

শিশুদের গোসলের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে বাথটাব। এতে শিশু পানিতে হাত-পা ছড়িয়ে খেলতে পারবে। সেই সঙ্গে সেখানে বসেই ঝুপ করে সেরে ফেলা যাবে গোসল। ছোট, বড় ও মাঝারি তিন ধরনের বাথটাব আছে বাজারে। মানভেদে রং ও দামেও আছে ভিন্নতা। আবার কিছু টাব আছে সেগুলো ভাঁজ করে গুটিয়ে রাখা যায়। কিছু রঙিন টাব বাতাস দিয়ে দিয়ে ফুলিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে নিতে হয়। গোল, আয়তাকার ছাড়াও হাঁসের আদলে তৈরি হওয়া এসব বাথটাব শিশুকে নিয়ে যাবে কল্পনার রাজ্যে। সাধারণ টাব ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, গুটিয়ে রাখা টাব ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার, বাতাসে ফোলানো টাব কিনতে গেলে ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা খরচ পড়বে। 

বাথার

ছোট্ট শিশুকে বিশেষ করে হাঁটতে শেখার আগে পর্যন্ত বাথারে শুইয়ে গোসল করালে শিশু পিছলে পড়ার ভয় কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যায়। বাথারের মাথার দিক উঁচু থাকে ফলে শিশু তাঁর মায়ের বুকজুড়ে শুয়ে থাকার অনুভূতি পায়। পানি ঝরে যাওয়ার জন্য বাথারের নিচের অংশে ছিদ্রযুক্ত শক্ত কাপড় আটকানো থাকে। একেবারে নিচে স্ট্যান্ডের সঙ্গে বাথার আটকানো থাকে। বাথার কিনতে চাইলে দাম গুনতে হবে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। 

সুইমিংপুল

গোসলের জন্য বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে পানিভর্তি করে ব্যবহার করতে হবে। শিশু পাবে সুইমিংপুলের আমেজ। এতে আঁকা থাকে সমুদ্রতলের নানা প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদের ছবি। কিছুটা বড় শিশু এটিতে স্নান করে দারুণ মজা পাবে। দাম ২ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা।

কোথায় পাবেন

রাজধানীর নিউমার্কেট, গুলশান ডিসিসি মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, মমস অ্যান্ড কিডসের সব শাখা ছাড়াও অনলাইনভিত্তিক অনেক দোকানেও পাওয়া যাবে এসব পণ্য।